আমরা দুজনেই ভেবলে গেছি তখন। কি দেখে? সে মনে নেই। এই যিনি আমার হাতের ঘেরের মধ্যে তিনি আমার এক বোনের পুত্র, আয়ুষ্মান। ইনি বায়না করেন না, স্টেটমেন্ট দেন। যেমন, এখন আমি বাড়ি যাব... এখন আমি ক্যাডবেরি খাব... এখন আমি মামুর কোলে যাব... ইত্যাদি ইত্যাদি।
গলার আওয়াজ? শুনলে কোকিলেও লজ্জা পাবে। আমি নানা বিষয়ে এনার সঙ্গে আলোচনা করি শুধু গলার আওয়াজ শুনব বলে। গলার আওয়াজ শুনে মোহিত হয়ে যাই। গোটা গোটা শব্দ মধু মাখিয়ে কানে আসে। এনার নিবাস কোথায়? আড়ংঘাটা। এখানে, মানে হালিশহরে ওনার মামাবাড়ি। এনার মা ও মামা এককালে আমার ছাত্র, ছাত্রী ছিলেন, এখন আমার আত্মীয়। শিকড় কিভাবে মাটির গভীরে গড়ায় নিজেকে দেখলে অবাক হই। স্নেহ মধুর জানতাম, অনুমানে। যখন অনুভব করলাম, জানলাম সত্যিই স্নেহ অতি বিষম বস্তু। হৃদয় গলিয়ে, নিংড়িয়ে যে টানটা জাগায়, যে উৎকণ্ঠা জাগায়, সে আদতেই শুধু সুখ নয়, সে শিকড়ের টানের যন্ত্রণাও। আত্মীয়তা শুধু কি আর জিন আর রক্তের স্রোতে? সে শ্বাসের ধারায় জীবনের গভীরে মহারহস্যে ঢাকা। নইলে এক পাথরের কি মাটির বালকমূর্তি প্রাণের গোপাল হয়ে যায় কি করে? যিনি নাকি সমস্ত সৃষ্টির স্রষ্টা, তিনিই নাকি ছোট্টো লেপের তলায়, ছোট্টো সিংহাসনে ঘুমিয়ে। তাকে না জাগালে জাগে না, তাকে না খাওয়ালে খায় না, তাকে না স্নেহ করলে তার নাকি অভিমান হয়! কি স্পর্ধা মানুষের হৃদয়ের! কিন্তু এও হয়। হয় বলেই এমন আত্মীয়তা গড়ে ওঠে ঈশ্বরের সঙ্গে এক অসহায়, স্নেহের ধন বালকরূপে, যে নাকি গোপাল!
তাই হোক। এক এক সময় সমস্ত সুক্ষ্ম বিচারবুদ্ধি, হিসাব, দুশ্চিন্তা ভেঙে ভেঙে পড়ুক এই স্নেহের ধারায়, স্নিগ্ধ হই, তৃপ্ত হই, ধন্য হই শৈশবের মাধুর্যে। আনন্দে।
[ছবিটা তুলেছে Debasish Bose]