Skip to main content


আত্মপ্রকাশ কিসে ঘটবে? বেলুচিস্তান না কাশ্মীরে?

পদাদা রোজ ব্রাশ করতে করতে এটা ভাবে। হনলুলু না গোবরডাঙা? কিম্বা বনগাঁ না ক্রৌঞ্চদ্বীপ?

পদাদা এমনিতে হাসিখুশী মানুষ। রাগিয়ে দিলে তুবড়ি। হাসিয়ে দিলে চরকী। ভাবিয়ে দিলে রকেট। বয়েস পঞ্চান্ন। দুই ছেলের বাপ। এক স্ত্রী'র স্বামী।

রাস্তায় দাঁড়িয়ে পদাদা পদ্য লেখেন। বাজারের ব্যাগে রাস্তার কুকুরের ছানা লুকিয়ে আনেন। পুরীতে স্নানের সময় নুলিয়াকে র‌্যাগিং করেন, সুড়সুড়ি দিয়ে, কিম্বা ডুবে যাচ্ছেন অভিনয় করে।
কিন্তু সবকিছুর মধ্যেও ওনার একটা ফাঁকা ফাঁকা লাগে। কি সেটা বুঝতে পারেন না। শুধু মনে হয়, আত্মপ্রকাশটা ঠিক হচ্ছে না। উনি আসলে যা, তা উনি নন। মানে লোকে ওনাকে অবজ্ঞা না করলেও, ঠিক যথাযোগ্য সম্মান দিচ্ছে না, এটা বেশ বুঝতে পারেন। ইদানীং বেশি বুঝছেন, শালীটা দুবাই চলে যাওয়ার পর। অবশ্যি, সে আত্মপ্রকাশটা যে ওভাবে ঘটবে উনি নিজেও ঠিক বুঝে উঠতে পারেন নি। সে যাক, সবই মায়ার খেলা। উনি তো নিমিত্তমাত্র।
এই! এই কথাটাই ক'জন ভাবতে পারে, ঠিক ওনার মত করে? লোকে অনুশোচনা করে, কি গ্লানিতে ভোগে, সারাদিন ভাবে, ছিঃ ছিঃ! এ কি করলাম! আর উনি? কেমন ঠিক টের পেলেন, সব মায়ার খেলা। নয় তো ওনার মত সংযমী, আত্মভোলা, দূরদর্শী পুরুষের ওই মাংসের তালের সাথে এমন সংঘর্ষ হয়? তাও হল তো! সে কার জন্য? ওই যে ভবিতব্য।
পদাদা'র চোখে জল চলে আসে নিজের মধ্যের এই ত্যাগীর ভাবটা প্রকট হয়ে উঠলেই।
সেই যে গেলবার, সেই পুরীতেই তো। রমেনের বউটা। ওর মুখ দেখেই মনে হয়েছিল, ও যেন কি চায়। তার কাছেই চায়। যেন মালতীকে (পদাদার বউদি, থুড়ি বউ) ও দু'চক্ষে দেখতে পাচ্ছে না। পদাকে গিলে খাচ্ছে। পদাদাও সারা ট্রেন চোখ ফেরাতে পারেনি। রমেন এখন দিল্লীতে থাকে। পূজোয় এসেছে, তাই একটু পুরী ঘোরা একসাথে। তা সারারাত তো চোখের পাতা এক করতে পারেনি পদাদা। তার মনের সন্দেহ সত্যি কিনা বুঝতে গুলচার (রমেনের স্ত্রী) পিছু পিছু বাথরুম অবধি গিয়েছিল তো। বউটা একটা কথা বলেনি লজ্জায়। ঝড়ের বেগে ফিরে এসে শুয়ে পড়েছিল। তা পদাদা যে ওর মনের কথা এমন ব্ল্যাকবোর্ডে লেখার মত টকটক করে পড়ে ফেলবে, বুঝতেই পারেনি।
অবশেষে হোটেলে ড্রিংকের সাথে কিছুমিছু মিশিয়ে ওর লজ্জা কাটিয়ে কিছুক্ষণের জন্য নিজের করতে পেরেছিল পদাদা। কেন নিজের বিবেকের বিরুদ্ধে যাবেন? ঈশ্বর তো বিবেকের মধ্যে দিয়েই কথা বলেন।।
তারপর থেকে অবশ্য ওরা আর কথা বলেনি, সম্পর্কও রাখেনি। রাখবে কি করে? মুখ আছে? ওর চোখের সামনে দাঁড়াতে পারবে? যা অন্তর্ভেদী দৃষ্টি পদাদা'র! ওদের মনের সব কালিমাগুলো হাইড্রেনের কাদাজলের মত হুড়হুড় করে বাইরে বেরিয়ে আসবে যে! তবে? কার মনে কি আছে পদাদাকে জানাতে এসো না চাঁদ, হুম!
পদাদা'র চোখে আবার জল আসল। এরকম একটা মন নিয়ে তিনি সবার অলক্ষ্যে ফিরে যাবেন? না না না। কিছু করে আত্মপ্রকাশ করতেই হবে। ওনার অতীতের অনেক ঘটনা ওনার চোখের সামনে ভেসে ওঠে। কতবার পদাদা শুধুমাত্র অন্যের চাহিদা মেটাবেন বলে, নিজের বিবেকের কথা পর্যন্ত্য অগ্রাহ্য করেছেন, তা স্বয়ং ঈশ্বরের কণ্ঠস্বর জেনেও। আরে ওই তো তার পিসতুতো বোনটার বেলায়। আরে শরীর কি আর পিসি, পিসে বোঝে? শরীর শরীরই। উফ্, এই উদারতাটার কথা যখন ভাবেন, ওনার মনে হয় উনি যেন অবতার পুরুষ! অবশ্য ততটা জোর দিয়ে ভাবেন না। কারণ তখন মালতীকে দেখলে মনটা দমে যায়। ওর কি হবে? ওতো সামান্য নারী। ওনার এই স্বরূপমোচন কি ও মেনে নিতে পারবে? কক্ষণো না। তাই ওর জন্য এই আত্মগোপন।
যেটা বলছিলাম। তা, সে পিসতুতো বোনকে যেভাবে সংশয় থেকে মুক্ত করালো। খানিক শরীরের বলপ্রয়োগ করতে তো হয়েছিলই। তা হবে না? ওর এতদিনের সংস্কার, এক্কেবারে যাবে? তাছাড়া শাস্ত্রেও তো বলে, দুর্বলের আত্মজ্ঞান হয় না। তা শরীরের যথার্থ জ্ঞান না হলে আত্মজ্ঞান হয়?
তারপর থেকে অবশ্য মেয়েটা তাদের বাড়ি আসা ছেড়ে দিয়েছে। শুনেছে তার বিয়ে হয়েছে বৈঁচিতে। মেয়েও হয়েছে একটা। পদাদা যাননি। কি দরকার? মেয়েটা লজ্জা পাবে। তার মত মানুষকে যে দেখবে সেই-ই চাইবে। আর বয়সে তো কথাই নেই। এতে তারও লজ্জা নেই, ওরও না। তবু ও কি আর অত বুঝবে? আরে কত কত মহাপুরুষেরাই বোঝেন নি। সব একপেশে। না হলে মহাপুরুষ যত হয়, মহানারী হয় না কেন সেই অনুপাতে? কেউ এ প্রশ্নটা করেছে কখনো? কেউ না।
পদাদা'র আবার চোখে জল। কি একটা মহাপ্রাণ তিনি বুকে করে নিয়ে সবার অলক্ষ্যে ফিরছেন। কাউকে বুঝতেই দিলেন না। তিনি না তো নিজের বাসনাকে ফিরিয়ে দেন, না তো অন্যের সুপ্ত বাসনাকে বিমুখ করেন। অন্যের সাথে তাঁর পার্থক্যটা তো এইখানেই। উনি বোঝেন, বলেন, এমনি না এলে কৌশলে নেন। আর অন্যেরা লজ্জায় সব খিদে মুখ বুজে সহ্য করে। অর্বাচীন সব, এরা কি করছে নিজেরাই জানে না, হে ঈশ্বর, এদের তুমি ক্ষমা করো!
পদাদা'র চোখে আবার জল। কে যেন এরকমই একটা কথা বলেছিল? উফ্ কি লীলা প্রভু তোমার!
সামনের বাড়ির নতুন ভাড়াটের বউটার চোখদুটো যেন কি বলছে পদাদাকে। আত্মপ্রকাশ কি ঘটবে প্রভু এবার? পদাদা'র মাঝে মাঝে ক্লান্ত লাগে আজকাল। আর কত সেবা করার আছে পদা তোর? যা হোক, এগোতে তো হবেই।
পদা কলিংবেল টেপে, বউদি বাড়ি আছেন?