আত্মহত্যা করবেন? বেশ। আমি একটু সময় নেব। টুল দড়ি সব রেডি? আচ্ছা পাখাটাও বেছে নিয়েছেন? এই পাখাটায় ঝুলে পড়বেন? বেশ বেশ। ভালো সিদ্ধান্ত। খেয়েছেন কিছু? আচ্ছা। সেও ভালো। আমি একটু সময় নেব। ব্যস, একটু। তারপর আপনি টুক করে ঝুলে পড়বেন। আমি কপালে হাত ঠেকিয়ে নমো নমো করতে করতে বেরিয়ে যাব। সবাইকে গিয়ে খবরটা দিয়ে দেব। একটা হুল্লোড় বেধে যাবে কিছুক্ষণের জন্য। কদিনের জন্য। তারপর সব আগের মত। কেউ মনে রাখে না। আবার বাথরুমে নতুন সাবান। আবার নতুন চটিজামা। আবার নতুন রঙ। আবার কেউ ঝুলবে। আবার আমি তার বাড়ি যাব। আবার তার সঙ্গে কথা বলব। কেউ শোনে। কেউ শোনেনা দাদা। কেউ কেউ বলে, মেলা বাতেলা দেবেন না তো, কত কত বিখ্যাত মানুষ এসে বেঁচে গেল, বিখ্যাত হল তারপর টুক করে মরে গেল, আর ইনি এসেছেন পজিটিভ কথা বলতে। মর গে। যা যা!
ঠিক দাদা। ঠিক এইভাবে আমায় অনেক আত্মহত্যাকাঙ্ক্ষী দাদাবোন-দিদিভাই-মাসিমেসো-কাকাকাকি-বন্ধুবান্ধবেরা বাড়ি থেকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছেন। আপনিও দিতে পারেন। কিন্তু এত তাড়াহুড়ো করবেন না। একটু বসুন। আহা, ধুর মশায় এখনই পাখাটা বন্ধ করে দিলেন কেন? বলি বড্ড গরম না! ভাদ্র মাস যে! বাহ, কি করে জানলাম। না না আমার বাড়ি বাংলা ক্যালেন্ডার নেই। ওই সারমেয় মৈথুনম, ইয়ে মানে রাস্তাঘাটে, বাড়ির পাশে।… ইস। লজ্জা নেই ওদের? না মানে আপনার কি মনে হয়? আরে একবার তো কি হল, আমাদের বাড়ির পাশেই.. একটা দোতলা বাড়ি তৈরি হচ্ছে, তা ওনারা যে সেখানে সঙ্গম লিপ্ত আমি কি করে জানব বলুন? দিনের বেলা তাও আবার। আমি ছাদে গেছি কি একটা করতে….ওমা! আমায় দেখে এমন ভয় পেল, ওই অবস্থায় একটা লাফ দিল ছাদ থেকে….সেকি রক্তারক্তি কাণ্ড দাদা….
আহা চটেন কেন? মানে মৃত্যুর আগে এসব অশালীন কথা বলছি কেন বলছেন? আসলে মনে পড়ে গেল... মানুষের মন তো! নীরাজ চোপড়ার ওই বল্লমের থেকেও জোরে ছোটে... আবার ভুল বললাম না? উদাহরণটা ঠিক হল না… যা হোক... ঠিকই তো... এইসব কেন বলছি আমি? একি বলার সময় এখন? আচ্ছা দাদা ওই কুকুরটা কেন আত্মহত্যা করল না বলুন তো…. পাশে পুকুর ছিল... চার পা এগোলে সহস্রচক্রযানগামী রেললাইন ছিল... টুক্ করে ক্যাঁও করে মরে যেত... কি হত? কিস্যু হত না। এই আপনি মরলেও যেমন কিস্যুটি হবে না। কত দেখলাম দাদা, আরে বউছেলেমেয়ে খেতে দিতে পারছে না, বাবু লাইনে ঝাঁপ দিল। নে এবার তোরা রাস্তায় নেমে খুঁটে খা, আমি তো পালাই। কি বুকের পাটা বাপু। ধার নিয়ে শোধ দিতে পারছে না। টুক করে পরিবার ভাসিয়ে ডুবে গেলেন গঙ্গায়। কেন রে? না হয় জেলই হত। তা কত গুণীমানী, নেতামন্ত্রী ঘনঘন জেলে গেল, কই তাদের তো মানে কিছু লাগে না? শুনেছেন কোনো রাজনীতির লোক ভোটে হেরে গলায় দড়ি দিয়েছে? শোনেনি। গুগুল করতে হবে। মায় অরবিন্দবাবুর তো জেলে গিয়ে সিদ্ধিলাভই হয়ে গেল। আপনিও একটা দীক্ষাটিক্ষা নিয়ে টুক করে জেলে ঢুকে গেলেন। তারপর কেউ বিরক্ত করার নেই। আরে বাবা ফাঁসি তো দেবে না। দুটো খেতে দেবে। শ্বাস তো নিতে পারবেন। অবশ্যি শুনেছি জেলে নাকি তাবড় তাবড়-তাবড় আসামীরা হেনস্থা করে। সে করুক। বাচ্চা নিয়ে তো আর ফিরবেন না। আর যদি কোনো মির্যাকেলে হয়েও যায়। যাবে! সহ্য করুন। তা বলে মরবেন কেন? সে তো এক্সট্রিম কেস দাদা। মন্ত্র নিলেন। টুক করে জপে বসে গেলেন। টাকা মাটি, মাটি টাকা করে বেরিয়ে এলেন। ব্যস। মোক্ষলাভ। তা না, আত্মহত্যা করবেন। যত্তসব!
আচ্ছা, দেরি হয়ে যাচ্ছে না? আছা, আপনি ঝুলে পড়ুন, আমি গীতাটা পড়ি? আপনার প্রিয় কোনো অধ্যায় আছে? যেমন ধরুন আমার একটা প্রিয় শ্লোক আছে, নির্মান মোহ জিতসঙ্গদোষ…. মানে যিনি মান সম্মান মোহ সঙ্গদোষ এসব ছেড়েছেন। এই মান নিয়েই যত বালাই গো দাদা... আপনাকে একটু ভেঙে বলি…
এই ধরুন মানের কথাটা। মান মানে প্রেস্টিজ। মানে যা তৈরি করতে টাকা লাগে, সার্টিফিকেট লাগে, বাড়ি লাগে, ভালো জামাপ্যান্ট লাগে... এই সব আরকি। এগুলো দিয়ে মানুষ শূন্যের উপর কি যে করে গো দাদা। একদম ডিগবাজি খায়। মান গেলেই গেল গেল রব। যেন ভিখারি হলেন। তা ভিখারি যদি হবার আছে হবেন। অত মানের বালাই রেখে কি হবে দাদা! কবীরদাস বলতেন কি জানেন, আসল আমিরি হ্যায় ফকিরি মে…. আরে দাদা আমরা সবাই ফকির.. এইটা মনে রাখতে না পারলেই সব গেল.. মনে প্রাণে ফকির না হতে পারলে দাদা দুনিয়ায় বেঁচে লাভ নেই... ভিক্ষা নেবেন কেন? মাধুকরী করুন…. জীবনে মাধুকরীতেই চলে দাদা... যিনি দেওয়ার মালিক তিনি যা দেন সেই দান…. বাকি তো সব কাড়াকাড়ি…. আসতেও যতক্ষণ, যেতেও ততক্ষণ… মনটা ভিখারি করুন দাদা…. আজ অবধি শুনেছেন কোনো ভিখারি লাইনে গলা দিয়েছে, কি পেয়ারা গাছে ঝুলে পড়েছে? শোনেননি তো…. কারণ কি বলুন তো... ওদের এই বিটকেল ছত্রাকের মত মানের বালাই নেই। মান মানে ছত্রাক ইনফেকশন দাদা গো। চুলকাবেন। সুখ হবে। দিনে দিনে ঘা হবে। হয় না কুঁচকিতে? কি জ্বালা দাদা গো। এ মানের বালাই সেই। সে ঘা তো দাদা তাও অ্যান্টিফাঙ্গাল ক্রিমে যাবে, কিন্তু এ ঘা যায় না। কিছুতেই যায় না। দাদা আমরা সবাই ভিখারি। যিনি দেন, তিনিই নেন। সে আপনি নোকিয়াই হোন কি অ্যাম্বাসেডর। দিন গেলে আবার রাস্তায়। তখন লোকে হেন তেন থিওরি বার করে বলবে এটা করলে সেটা হত, সেটা করলে এটা হত। আসলে কিস্যুতেই কিস্যু হয় না গো দাদা। ফকিরির মত আমিরি নেই দাদা। এ বাঁচার মেজাজই আলাদা। কেউ কাড়তে পারবে না, কেউ না…. আপনি একটু ভাবুন দাদা... আমি আসি... আমার আরেকটা কল আসছে... আরেকজন কেউ লাইনের ধারে দাঁড়িয়ে…. শান্তিপুর লোকাল... লেট আছে দাদা... আমার হাতে আরো চোদ্দো মিনিট সময় আছে….. দিদির সঙ্গে কথা বলে আসি…. সে প্রেমে ব্যর্থ হয়েছে…. কার সঙ্গে প্রেম দাদা... শরীর থাকলেই প্রেম... আসল প্রেম তো মালিকের সঙ্গে দাদা…. ফকিরের সঙ্গে… আসল মান তো সেই... চিত্তের মান..…. জয়গুরু... আসি দাদা... একটু ভাবুন... ঝুলে পড়ার আগে একটু ভাবুন….
(আজ আত্মহত্যা নিরোধক দিবস)