Skip to main content
 
 
আমার ঘরে একটা কানা টিকটিকি থাকে। এক চোখ কানা। কম্পিউটার টেবিলের তলায় থাকে। আমি আলো জ্বাললেই দেওয়াল বেয়ে টুকটুক করে LED র পাশে এসে দাঁড়ায়। সেই যে দাঁড়ায় দাঁড়িয়েই থাকে। সে আমার যত রাতই হোক না কেন আলো নিভিয়ে শুতে যেতে। আমি কান্ট-স্পিনোজা-রবি ঠাকুর- সুনীল-শক্তি-কোনো পত্রিকা-খবরের কাগজ যাই পড়ি না কেন, বা কোনো সিনেমা দেখি না কেন, কিম্বা ছাত্রদের খাতা চেক করি না কেন, বা উদাস হয়ে দেওয়ালের দিকে চেয়ে খাটে পড়ে থাকি না কেন, ও কোনো কিছুতেই 'রা' কাটে না। এমন কি কোনোদিন পোকা পর্যাপ্ত পেল কি পেল না, সেই নিয়েও কোনো অস্থিরতা, ক্ষুব্ধতা ওর মধ্যে আমি কখনও খেয়াল করিনি। আলো নেভালেই ভালো মানু্ষের মত, থুড়ি, ভালো সরীসৃপের মত আবার টেবিলের তলায় গিয়ে সেঁধোয়।
      তারপর সারাটাদিন কিভাবে নিজেকে আড়াল করে রাখে আশ্চর্য লাগে। একটু লাজুক প্রকৃতির তো বটেই। তবু আমি একা থাকলে মেঝেতে বেরোয় দৈবাৎ কোনো পোকাকে দেখতে পেলে, তাও কালেভদ্রে। নইলে এত মানুষ তো আসেন, কেউ দেখেছেন? কেউ না, এমন সহবৎ ওর। পোশাকহীন প্রাণী এমন পোশাক-মুখোশ পরিহিত জীবকূল এড়িয়ে চলবে সেই তো স্বাভাবিক, না?
      তারপর ধরুন, আমি যখন কম্পিউটারে কিছু লিখি, সে কবিতা-গপ্পো-প্রবন্ধ যাই হোক, কিছু নিয়ে কোনো কথা বলে না। সে বানান ভুল হোক, ব্যকরণ ভুল হোক, কিচ্ছুটি বলে না। তা ছাড়া ভাবুন, আমার চরণযুগলের বৃদ্ধাঙ্গুলীদুটিও তো তার মুখের কাছেই থাকে, কোনোদিন লেহন করেও নিজের অস্তিত্ব জানান দিয়েছে? না, অর্থাৎ পদলেহন করার মত অত দুর্বল মেরুদণ্ডের সরীসৃপ সে নয়।
 
      এরপর আসে তার ব্যক্তিগত জীবনের কথা। না, আমি কোনো অপর টিকটিকিকে এই ঘরে দেখিনি। অর্থাৎ এর থেকে প্রমাণিত হয় সে পূর্ণ ব্রহ্মচারী। সেই অর্থে আমার সাধুসঙ্গ হচ্ছেই বলা যায়। উঁহু, অমনি আপনাদের ভুরু কুঁচকালো। আচ্ছা, আমি শাস্ত্রের মাধ্যমে বুঝিয়ে বলছি। দেখুন, তুলসীদাসজী কি বলছেন, ভক্ত কেমন হবে? না -
 
 
"সরল সুভাব না মন কুটিলাই, যথা লাভ সন্তোষ সদাই।"
 
      তর্জমা করলে দাঁড়ায়, যার মন সরল, কুটিলতাহীন, এবং যা পান তাতেই সন্তুষ্ট থাকেন, তাকেই বলে ভক্ত। আমা কর্তৃক আলোচিত জীবটির মনে যে কুটিলতা নেই, আগেই বলেছি, আর সন্তুষ্টিতেও সে সাধুত্ব অর্জন করেইছে। নইলে তার একচোখ নিয়ে বেঁচে থাকাকে কত ক্ষুব্ধতার সাথেই না সে দেখত। কই, তা তো দেখে না!
      তুলসীদাসজী আরো বলছেন, তুমি যতই চেষ্টা করো না কেন, বিনা জল যেমন নৌকা চালাতে পারবে না, তেমন বিনা সহজ সন্তোষ তুমি শান্তি পাবে না।
      অর্থাৎ কিনা এই ঘোর কলিযুগে আমি একজন সাক্ষাৎ মহাত্মারূপী জীবের সাথে সহাবস্থানের সৌভাগ্য লাভ করেছি। ঘরে বসেই। সব জীবই তো ব্রহ্ম। তা এই সরীসৃপটিও বা ব্রহ্ম হবে না কেন? হুঁ!
 
অথ মাহাত্ম্যকথন -
 
শুন শুন জীবগণ
শুন দিয়া মন
টিকটিকির মাহাত্ম্য এই করিনু বর্ণন
যে শুনিবে একাগ্র চিত্তে
  হইয়া শুদ্ধচিত্ত
সকল পাপের ফল হইবেক নিবৃত্ত
  দ্বিজ সৌরভ ভনে সরীসৃপলীলা
    সবের হইল মুক্তি যাহারা শুনিলা
  RAC, Waiting নয়, স্থান নিশ্চিত যেন মনে
    মনে মনে করো বন্দনা, সে মহাত্মা চরণে