Skip to main content

সমস্যাটা হল অসুরকে নিয়ে। দুর্গোৎসব এখন আন্তর্জাতিক উৎসব। ছেলেখেলা নয়। গণেশ, কার্তিক, সরস্বতী, লক্ষী, মা দুর্গা --- এঁদের আন্তর্জাতিক করতে বেগ পেতে হবে না। একটা 'গুডউইল' বলে ব্যাপার আছে। কিন্তু অসুর? 

     রীতিমতো চারটে মিটিং হয়ে গেল। অসুরের সার্বজনীন মুখ পাওয়া গেল না। মায় হিটলার থেকে ভীরাপ্পান সব ভাবা হয়ে গেল। কিন্তু কে হতে পারে আন্তর্জাতিক অসুর, স্থির করা গেল না। শেষে পুজোই কি ভেস্তে যাবে? তবে? 

     সবাই ইতিহাস ঘাঁটতে শুরু করল। কাকে করা যায়? কিন্তু কিছুই জমছে না। এদিকে ঢাকি থেকে পুরুত সব ঠিক। শেষে সিদ্ধান্ত হল, লটারি করা হবে। 

     একটা বাক্সে যে যার মত নাম দিল। ঠিক করা হল, পাড়ার কোনো এক শিশুকে দিয়ে তোলানো হবে কাগজ। যার নাম আসবে, সে-ই হবে অসুর। 

     শিশু এলো। কাগজের গাদায় হাত ঢোকাল। কাগজে লেখা, আমি। 

     সবাই আঁতকে উঠল। মানে, আমি? বুকটা 'ছ্যাঁৎ' করে উঠল সবার। কি করে জানল? কিছুক্ষণের মধ্যেই সম্বিত ফিরে পেলো সবাই। আরে এ তো মিস্টেক! "আমি" আবার কে লিখল?  

     হইহই পড়ে গেল। সবাই রেগে আগুন। যদিও সবাই হইচই করছে, কিন্তু মনের মধ্যে কোথায় যেন একটা খচখচ করেই যাচ্ছে। "আমি" শব্দটা মাছের কাঁটার মত বিঁধে। কি অসহ্য রে বাবা! 

     অনেক খোঁজখবর করে জানা গেল, পাড়ার পল্টু, যে নাকি তিনবার মাধ্যমিক ফেল করেছে, সে লিখেছে। আসলে তার নাকি ছোটোবেলা থেকেই ভীষণ অসুর হওয়ার শখ। খবরের কাগজ পড়ে পড়ে, আর ওয়েব সিরিজ দেখে দেখে নাকি সে শখ আরো বেড়ে গেছে। অসুরদের গ্ল্যামার, পাব্লিসিটিই নাকি বেশি। সে-ই বা হবে না কেন?

     পল্টু বেশ কয়েকটা চাঁটি আর কয়েক মণ গালাগাল খেয়ে তো চেয়ারে হেদিয়ে বসে। হাত থেকে অসুর হওয়ার চান্সটা ফসকেই যাচ্ছে। কিছু করেই ম্যানেজ করা যাবে না মনে হয়! 

     ইতিমধ্যে পল্টুর মা এসে পড়ল মিটিং-এ। পল্টুর মায়ের গলার আওয়াজের বেগ আর অন্যের হাঁড়ির খবরের তথ্য এত বেশি যে লোকে ঘাঁটায় না তাকে। পল্টুর বাবা ছিল বিখ্যাত ওয়াগন ব্রেকার। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বতে প্রাণ যায়। অমন প্রতিভার অকালে চলে যাওয়াতে অনেকে শোকপ্রকাশ করেছিল। পুজোয় চাঁদা দিত সবার বেশি। বলত, ঈশ্বর কালোকে সাদা করবেন বলেই তো ধরায় আসেন রে পাগলা… যেমন জগাই-মাধাই ইত্যাদি। মানুষ সাদা হয়ে যায়, আর এতো কাগজ! 

     যা হোক, পল্টুর মা আসাতে সবাই একটু চুপসেই গেল। ভিতরের সেই অসহ্য "আমি"টায় যেন চিমটি দিল কেউ। 

     পল্টুর মা গলা খাঁকারি দিয়ে বলল, তা আপনারা জানেন, এখানে পল্টুর চাইতে অসুরের পদ নেওয়ার যোগ্যতা অনেকের অনেক বেশি। মা সবই জানেন। তাই তিনিও বধ করার অভিনয়টুকু করেই ধরাধাম থেকে বিদায় নেন। কারণ তিনি জানেন ধরায় আসলের চাইতে অভিনয়ে মানুষ তুষ্ট হয় বেশি... আর আপনারা যদি আপত্তি না করেন তবে আমি বলতে পারি কে বেশি হওয়ার যোগ্য...

     মিটিং-এ তুমুল হইচই পড়ে গেল। নিকুচি করেছে আন্তর্জাতিক উৎসবের। ভিখ চাইনে কুকুর ঠেকা। সবাই সমস্বরে বলে উঠল, আরে পল্টুই হবে বৌদি… পল্টুই হবে…  

     পল্টু ততক্ষণে অঘোরে ঘুমিয়ে। ঘুমালে জগতে সব সোজা হয়ে যায়। পল্টুর বাবা স্বপ্নে এসে দাঁড়ালো। বলল, পল্টু জাগ, জাগ... অসুর সাজার সময় হয়েছে। অকালবোধন আর অকালবিসর্জন, এই নিয়েই জগত। মাঝে লম্বা ঘুম। ওঠ, বাবা ওঠ।