সৌরভ ভট্টাচার্য
27 September 2019
চিন্তা করতে করতে হঠাৎ এক সময় লোকটা চিন্তাগুলোকে দেখতে পেত। তার সামনেই হেঁটে চলে বেড়িয়ে, তার খাবার টেবিলের উপর রাখা জলের জগ থেকে জল খেয়ে, ঝুলবারান্দায় ঝুঁকে দাঁড়িয়ে থাকত।
লোকটা সোফায় বসে উবু দশ কুড়ি গুনত....লাফ দে...দে লাফ...লাফ দে...দে লাফ....
বলতে বলতে উঠে গিয়ে যে জলের জায়গা থেকে একটু আগে চিন্তারা জল খেয়েছে, সে জলের জায়গা থেকেই সে জল খেত। জল খেতে খেতে আড়চোখে দেখত। দে ঝাঁপ... দে...
অনেক চিন্তা এই ঝুলবারান্দা থেকে ঝাঁপ দিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছে। দারওয়ান বা দুধওয়ালা বা পেপারওয়ালা কেউ খেয়াল করেনি ঝুলবারান্দার নীচে ঘাসে চাপ চাপ রক্ত। ভোরের শিশিরে মুছে গেছে। মিলিয়ে গেছে।
লোকটা মাঝে মাঝে দেখে, ঝুলবারান্দা থেকে ফিরে আসছে চিন্তারা, মাথার মধ্যে দিয়ে হেঁটে মাড়িয়ে চলে যাচ্ছে, বুকের ভিতর টাইফুন, রাত্রি এসে সোফায় বসেছে। সামনে দাবার ছক পাতা। ঘুঁটি সাজানো। চিন্তাদেরকে রাত্রি ইশারায় ডাকছে। প্রলোভন। সাজানো ঘুঁটির লোভ। চেকমেট হওয়ার - করার লোভ।
লোকটা ক্লান্ত শরীরে দামী মার্বেল লাগানো ঠাণ্ডা মেঝেতে শুয়ে অ্যাস্ট্রে হয়ে। রাত্রি আর চিন্তারা দাবা খেলছে, মগ্ন ওরা, লোকটার শরীর জুড়ে জ্বলন্ত সিগারেটের ছাই।
ভোর হয়। ক্লান্ত শরীর টেনে নিয়ে দরজা খোলে লোকটা। কাজের মানুষ ঝাঁট দিতে দিতে জিজ্ঞাসা করে সারাঘর এত ছাই কেন দাদাবাবু!
লোকটা দৌড়ে ঝুলবারান্দায় ঝুঁকে নীচে তাকায়। স্বচ্ছ সবুজ ঘাস। কোমল আলোয় নিরীহ একটা ভোর হচ্ছে। অথচ কেউ জানে না এমন ভান করছে সবাই, যেন জানে না কাল রাতে এখানে আত্মহত্যা করতে চাইছিল কেউ কেউ, তা না হয়ে সে সারারাত শুয়েছিল ছাইদানের মত।