Skip to main content

 দেখুন কয়েকটা কথা স্পষ্ট করে বোঝা দরকার। আমরা বাঙালীরা অতটা বোকা নই যে, যে যা বোঝাবে আমরা তাই বুঝব। আমাদের ছেলেমেয়েদের একটা ভবিষ্যৎ আছে, ভারতের অন্যান্য জায়গায় কি পৃথিবীর অন্যান্য জায়গায় কি হচ্ছে আমাদের জানার দরকার নেই, মোদ্দা কথাটা হচ্ছে বাস্তবটা আমরা যেটা জানি সেটাই হল আসল। সেই আসলটা কি একটু শুনুন। রাতদিন তো WHO, এই চ্যানেল সেই চ্যানেলের গল্প শুনছেন, আসল কথাটা আমার কাছ থেকে শুনুন। আমি না হয় আলাপচারিতাটাই দিলাম। সময় করে পড়ুন, ভাবুন।

 

- শুনলাম অফলাইন ক্লাস করাচ্ছেন?

- হ্যাঁ, করাচ্ছি তো, এই তো মাসখানেক হল। অমুক তমুকেরাও শুরু করে দিয়েছেন। আপনিও করে দিতে পারেন।

- তা অত ছোটো ঘরে নির্দিষ্ট দূরত্ব মেনে সব সম্ভব হচ্ছে?

- কেন হবে না? আর অত স্কেল নিয়ে কে দূরত্ব মানবে? মোটামুটি একটা দূরত্ব রাখলেই হল।

- সেটা হচ্ছে?

- মাস্ক পরে থাকছে। স্যানিটাইজ করে নিচ্ছি হাতটাত। নইলে উপায় কি বলুন? এইভাবে অনলাইন ক্লাস আর কদ্দিন চালানো যায়। ট্রেনফেন সব চালু হয়ে গেল দেখছেন তো, তা কোনো নিয়মবিধি সেখানে মানা হচ্ছে? আর বাড়িতে থাকলে ওরা ফাঁকি দিচ্ছে বেশি... তা ঠিক নয়?

- যারা ফাঁকি দেওয়ার তারা অফলাইনেও দিত, অনলাইনেও দিচ্ছে, যারা পড়ার তারা তখনও পড়ছে, এখনও পড়ছে... আগে কি কেউ ফাঁকি দিত না?

- আরে ওসব ছাড়ুন... দেখুন, করোনা মানে কি? একটু বেশি সর্দিকাশি, এর বাইরে কি? একটু বেশি দুর্বলতা। আমার চেনা দশ-বারো জনের হয়ে গেল। কি হল? কিচ্ছু না। ক'দিন গন্ধ থাকল না, স্বাদ থাকল না, ব্যস। এগুলো মিডিয়াই ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বলছে। আর মরছে কারা? যাদের অনেক বয়েস আর সুগার-প্রেশার আছে। তা আমার তো এর কোনোটাই নেই। তবে আর বাড়ি বসে ওসব অনলাইন ক্লাস করাই কেন বলুন? নেটের খরচ আছে, ঠিক মত টাকাপয়সা দেয় না, সবই তো বোঝেন। সবচাইতে বড় কথা ওভাবে পড়িয়ে সুখ নেই। ওতে ছেলেগুলোর ভবিষ্যৎ কি হবে ভাবতে পারেন?

- আমার তো মনে হয় না অনলাইন ক্লাসে তেমন অসুবিধা হচ্ছে, একটা অডিও-ভিজ্যুয়াল...

- সবাই পারে বলুন? কত খরচ বেড়ে যাচ্ছে অনেক পরিবারের ভাবতে পারেন? তাছাড়া এই তো স্কুলও খুলল বলে...

- কিন্তু সে স্কুল খোলা আর একটা ঘরে গাদাগাদি করে বসিয়ে পড়ানো...

- একই জিনিস... ভাগ্যে থাকলে হবে... না থাকলে হবে না... কত লোকের তো ঘরে বসে বসেই হয়ে গেল... আর টেস্ট করাতে যে কেন যায় বুঝি না... কি হবে করিয়ে? বাড়িতে থাক... ভালোমন্দ খা... ঠিক হয়ে যাবে... আমাদের পাড়ায় নয় নয় করে প্রায় তেরোটা বাড়ি পজিটিভ... কি হল... কিচ্ছু না... কেউ টেস্ট করায়নি... আমরাও না...

- মানে আপনারও...

- হ্যাঁ, দু-মাস আগে... তাই তো বলছি... অত চাপ নেবেন না... করোনা-টরোনা এসব বড়লোকেদের শৌখিনতা... আমাদের পোষায়?

 

      কি বুঝছেন? বেকার সারা পৃথিবী জুড়ে এত হইচই, এত ভ্যাক্সিন নিয়ে চর্চা, সব বাড়াবাড়ি। আমরা অবশেষে অদৃষ্টবাদী। যা কপালে থাকবে তাই হবে। এর বাইরে বিজ্ঞানের সঙ্গে আমাদের কোনো দহরম-মহরম নেই। আমরা যেমন চলছি তেমনই চলব। যারা মরছে তারা মরার ছিল বলেই মরছে, আর যারা বাঁচছে তারা নিজেদের ইম্যুনিটির জোরে বাঁচছে, খামোখা এত হিসেব করে চলে কি হবে? আমরা তো রাজনীতি করি না যে পরিসংখ্যান রেখে চলতে হবে, আমরা আমাদের ভবিষ্যতটুকু সুরক্ষিত করতে পারলেই হল। অতশত ভাবতে যাবেন কেন? খালি দেখবেন যে নিজেকে যেন বাঁচিয়ে রাখা যায়। ওদের বাড়িতে কে আছে, কারা আছে ওসব ভাবতে যাবেন কেন? আর ওদের বাড়ির লোকের যদি ছাড়তে আপত্তি না থাকে, আপনিই বা বারণ করবেন কেন?

- তা ঘরটা স্যানিটাইজ করেন?

- ধুর মশায়... ওই ফিনাইল দিয়ে ধুয়ে দিই... তাও রোজ হয় না... আর মাস্ক তো ঠিকঠাক পরেই না... এই নাকে হাত দিচ্ছে... সেই হাতে বই-খাতা ধরছে... মেঝেতে কি চেয়ারে হাত দিচ্ছে... বাচ্চা তো... বোঝেন না... কিন্তু আজ অবধি ক'টা বাচ্চাকে মারা যেতে শুনেছেন... হয় না... কেউ মরছে না অত... ভয়টয় ঝেড়ে ফেলুন...

 

      মাস্কের ব্যবহার। স্যানিটাইজারের ব্যবহার। দূরত্ববিধি পালন।

      এগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন কতটা হচ্ছে বলতে পারি না, কিন্তু আমরা যে একটা বারুদ ঠাসা হয়ে এগোচ্ছি এটা চারদিক দেখলেই বুঝতে পারি। নেহাৎ ছবি তুলে পোস্ট করাটা অসভ্যতা হয়ে যাবে তাই চারদিকে যা ঘটছে তাতে কেউ বুঝতে পারছেন না যে আপনারা বাচ্চাগুলোর জীবন নিয়ে কি ঝুঁকি নিচ্ছেন! নিচ্ছেন অবশ্য তাদের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই। কিন্তু তারা থাকলে তো ভবিষ্যৎ, এই সহজ কথাটা কেন কেউ বুঝছেন না বুঝতে পারছি না। কোনদিন এমন অভূতপূর্ব সময়ের সাক্ষী হয়েছেন? হননি তো। তবে বিজ্ঞানকে অস্বীকার করে কপালের নামে বেরিয়ে পড়া কি খুব সঠিক সিদ্ধান্ত হচ্ছে? আমরা এও এখনও জানি না যে এই রোগের সুদূরপ্রসারী ফল কি কি হতে চলেছে। সদ্য ভাইরাসটার বয়েস এক বছর হল। আপনারা অনেকে হয়তো ভাইরাসটা সম্বন্ধে এখনই যথেষ্ট জ্ঞান আহরণ করে ফেলেছেন, কিন্তু WHO, বা বহু বিজ্ঞানী এখনও নিশ্চিত নন ভাইরাসটা ঠিক কতটা ক্ষতিকর সেই দিকটা নিয়ে। আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ এতগুলো দিন যখন ধৈর্য ধরলেন, আরো ধরুন। সবার আগে সুস্থ জীবন। কোনো একমাত্রিক সমাধান এখনই পাওয়া যাবে না। বিকল্প রাস্তাগুলোতে অনেক অসুবিধা হচ্ছে জানি, কিন্তু তবু বিকল্প পথ একটা তো আছে, কেন সেটাকে এই সাংঘাতিক সময়ে অস্বীকার করে সব কিছুকে জোর করে স্বাভাবিক করে নিয়ে এতবড় ঝুঁকি নিচ্ছেন? কথাটা শেষে কি হবে তা নিয়ে নয়, কথাটা এই ধরণের মূর্খামিকে প্রশ্রয় দেওয়ার মত নির্বুদ্ধিতাকে আমরা সাহসিকতা বলছি বলে। বিকল্প কখনওই মূলপথের মত সার্বজনীন সুবিধাদায়ক হয় না, কিন্তু অসময়ে এইটাই পথ। জীবনের চাইতে মূল্যবান আর কি হতে পারে?