১
---
উপাধ্যায় মশায়ের সারারাত উত্তেজনায় ঘুম এলো না। কলেজে পড়ায়। পলিটিকাল সায়েন্স পড়ায়। বিজ্ঞানচর্চার পাশাপাশি জ্যোতিষচর্চাতেও নামডাক আছে। রবিবার বিকেলে তো বাড়ি থিকথিক করে মানুষে। কত দূর দূর থেকে লোকজন আসে। উপাধ্যায় মশায়ের বাবা, শিবপ্রসাদ উপাধ্যায়ও ছিল খুব বড় জ্যোতিষী। পসার জমাতে বেশিদিন লাগেনি তাই রামপ্রসাদ উপাধ্যায়ের। রামপ্রসাদের বয়েস এখন বাহান্ন। নাতি-নাতনি নিয়ে ভরা সংসার। বড় ছেলে থাকে মেলবোর্নে। ওখানেই চাকরি। মেজ থাকে লক্ষ্মৌতে, গাড়ীতে এক-দেড় ঘন্টা লাগে। সেজ বারাণসীতে, শিবমন্দিরের পুজারী। ছোটোটা… মনে করতে চায় না, উচ্ছন্নে গেছে। বিয়েও করেছে এক মুসলিমকে। রামপ্রসাদ একরকম ত্যাজ্যপুত্রই করেছে তাকে। শুধু স্ত্রী রম্ভার জন্য মাঝে মাঝে আসতে দিতে হয়। তাও শুধু ছেলেকে, বউ সে বেঁচে থাকতে এ বাড়ির ছায়াও মাড়াবে না, হুকুম!
ভোর থাকতে উঠে গেল উপাধ্যায়। দিনের আলো ফোটেনি। একটা নিমডাল নিয়ে রাস্তায় হাঁটতে বেরোল। গতকাল দু’এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে, রাস্তাটা দেবে দেবে যাচ্ছে। সব রাস্তা পিচের হয়নি এখনও এদিকটায়। মনের মধ্যে একটা স্বস্তি অনুভব করছে বহুদিন বাদে। নিজের দেশটাকে যেন নিজের বলে চিনতে পারে না আজকাল। সব আমেরিকার হাওয়া লাগছে। মেয়েদের লজ্জা কমে যাচ্ছে। বাড়ির বাইরে গেলে মাথায় কাপড় থাকে না। আগে যত পুজো-আচ্চা হত আজকাল বাড়িগুলোতে তত আর হয় না। পরিবারগুলো কেমন ছাড়া ছাড়া। বেণারস শহরটাই চিনতে পারে না। যে শহর স্বয়ং মহাদেবের নিজের হাতে প্রতিষ্ঠা, সেই শহরকেই চিনতে পারে না। এক-একসময় নিজেকে খুব প্রাচীন মনে হয়। একটা চাপা কষ্ট হয়, আবার একটা সুখও হয়। সেই প্রাচীন সনাতন ঐতিহ্যের বাহক সে, এ কাজ কিছু কিছু মানুষকে তো এগিয়ে এসে করতেই হবে।
কলেজের এক ছাত্র একবার জিজ্ঞাসা করেছিল, স্যার প্রাচীনত্বের অনুসরণ বা সনাতনী প্রথার অনুসরণ লজ্জার না গৌরবের?
মাথায় চড়াং করে রাগ চড়ে যায় উপাধ্যায়ের, ছেলেটাকে সে চেনে, কি ধরণের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে তাও জানে। প্রশ্নটার মধ্যে ব্যাঙ্গের সুরটা ধরতে তাই অসুবিধা হল না উপাধ্যায়ের। নিজের যৌবনে নিজেও খানিকটা এই ধারায় ভেসে গিয়েছিল। বিশেষ করে নেহেরুর লেখা পড়ে মনের মধ্যে এমন একটা ছাপ পড়েছিল। সঙ্গে বিবেকানন্দের কিছু লেখা পড়েও মনে হয়েছিল, ভারতের সংস্কৃতির মধ্যে একটা উদারতা আছে। তখন সে উপনিষদ চর্চা করছে, নেহেরু, ভল্টেয়ার, রুশো পড়ছে। আসলে সেই থেকেই রাজনীতির উপর আগ্রহটাও জন্মায়। পলিটিকাল সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনার কারণটাও তাই। তার এক মামা আর এস এস করত, ভীষণ তর্কাতর্কি লেগেই থাকত তার সঙ্গে। এক সময় মামাবাড়ি যাওয়াও ছেড়ে দিল সেইজন্যে। অনেক কথার যুক্তি পেত না। গান্ধী, প্যাটেল, সুভাষ ইত্যাদির এমন ব্যাখ্যা সে করত যে মতে মিলত না। এমন বিরূপ ছিল যে মামা মারা যাওয়ার পরও দেখা করতে যায়নি।
রাকেশ এখনও তার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে.. বলল, স্যারজী দেখুন পাখি বাসা বানায় সে সনাতন, নো চেঞ্জস... তাই বলে মানুষ?
রামপ্রসাদ একটা কপট হাসির রেখা মুখে ফুটিয়ে বলেছিল, সাম ট্রুথস আর ইটারন্যাল, লাইক ভ্যালু অব পাই... ইউ নো মাই ইয়ং ফ্রেন্ড…
রাকেশ বলেছিল, উই মিন দ্য পিউরিটি অব গ্যাঞ্জেস ওয়াটার ইজ ইটারনাল?
রামপ্রসাদ বলেছিল, দেয়ার ইজ এ ডিফারেন্স বিটুইন পিউরিটি এণ্ড হোলিনেস মাই সান... ওয়ান ইজ অব্জেক্টিভ এণ্ড অ্যানাদার ওয়ান ইজ সাব্জেক্টিভ।
এণ্ড হু ইজ টু ভ্যালিডেট দ্যাট কোট আনকোট হোলিনেস মাই রেসপেক্টেড স্যার?
আবার ব্যঙ্গ!... নিশ্বাস গরম হয়ে উঠছিল রামপ্রসাদের... নিজেকে শান্ত করে বলল, দ্য জেনুইনিটি অব ইয়োর ফেথ…
ইয়া ফেথ... দ্যটস ইট ম্যান…
রাকেশকে পাওয়া যাচ্ছে না। একটা দলিত মেয়ের সঙ্গে মেলামেশা ছিল। সেই মেয়েটার গ্রামে একটা ধর্ষণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এমন জলঘোলা করে সে... ফেসবুকে খুব পপুলার ছিল। কেউ বলে কলকাতায় ওর মাসির বাড়ি গেছে... কেউ বলে দিল্লীতে আছে... কিন্তু সত্যিটা যেন কিছু অন্যরকম।
সকালের আলো ফুটছে। উপাধ্যায় দাঁতন করতে করতে বড় রাস্তা অবধি এসে গেছে। বাস দাঁড়িয়ে। সাড়ে পাঁচটায় ছাড়বে। এলাহাবাদ যায়। মির্জাকে সপরিবার দেখল। তাকে দেখে হাত নাড়ল মির্জা। উপাধ্যায় মাথাটা হেলিয়ে দিল।
মির্জা তার সঙ্গে স্কুলে, কলেজে একসঙ্গে পড়ত। এখন ও পৈতৃক কাপড়ের ব্যবসা চালায়। ভালো পসার ওদের। রামমন্দিরের জন্য ভালো ডোনেশান দিয়েছে। যা হোক এখন আর আগের মত সখ্যতা অনুভব করে না উপাধ্যায় মির্জার সঙ্গে। যদিও সামাজিক যোগাযোগ সবার সঙ্গেই খুব ভালো উপাধ্যায়ের।
এবার ফিরতে হবে। নিমডালটা ফেলে কলের জলে মুখটা ধুয়ে নিল। রাস্তায় একটা বড় হনুমান মন্দির পড়ে। মন্দিরে ঢুকে একটা নির্দিষ্ট জায়গায় বসল, এখানেই রোজ বসে। জপ শুরু করল চোখ বুজে।
পরিবর্তনটা একদিনে আসেনি তার মধ্যে। তার চিন্তার স্রোত বদলে দিল রাঘব শাস্ত্রী। তার কলিগ। তাকে সাভারকারের কিছু লেখা দিয়েছিল পড়তে। আরো আনুষাঙ্গিক কিছু বই। পড়তে পড়তে বেশ চমক লেগেছিল। বর্ণাশ্রমকে সে যে সামাজিক ব্যাধি ভাবত, আসলে সেটাই যে সমাজটাকে ধরে রেখেছে এটা সে সেই প্রথম অনুভব করল। যে সেক্যুলারিজমকে সে ভারতের ভবিষ্যৎ ভাবত, সেই যে আসল কারণ ভারতের সনাতন প্রথার, সেও প্রথম অনুভব করল। মামা তবে ঠিকই বলত। রক্ত গরম ছিল, পাশ্চাত্য শিক্ষার ভুত মাথায় ছিল তাই বুঝে উঠতে পারেনি। এখন বুঝছে। প্রাণে প্রাণে অনুভব করছে। বিবেকানন্দের লেখার নতুন নতুন ব্যাখ্যাও খুঁজে পাচ্ছে। তাই তো, সমস্ত ধর্মের প্রাচীন ধর্ম তো এই সনাতন ধর্ম। এতদিন উপনিষদের কথা - একং সদ বিপ্র বহুধা বদন্তি, এই কথাকেই ধ্রুব জেনে এসেছে যে সব ধর্মই এক সত্যের কথা বলে, যেমন বাঙ্গালের রামকৃষ্ণদেব বলতেন, যত মত তত পথ। ওগুলো আসলেই থিরোটিক্যালি ঠিক। যেমন সব জল জল, মানে এইচ টু ও, কিন্তু ব্যবহারকালে সব আলাদা। এও তেমন, পারমার্থিক দিক থেকে সব ধর্ম সত্য হলেও, ব্যবহারিক দিক থেকে আলাদা হতেই হবে। নিজের স্বাতন্ত্র্য রাখতেই হবে টিকিয়ে।
এখন মাঝে মাঝেই শঙ্করের সঙ্গে তর্ক হয়। শঙ্করকে ফেসবুকে আনফ্রেণ্ডও করে দিয়েছে। স্কাইপে কথা হলেই শুরু হয় তর্ক। ওর লজিক ভারতে সায়েন্সের নামে সিউডো সায়েন্স চলছে। এটা বাজে কথা। যা কিছু বুঝতে পারি না, তা-ই সিউডো সায়েন্স হয়ে যায়? এই যে অত হাজার বছর আগে লেখা কথা, গণেশের মাথা কেটে পড়ে গেল যখন তখন হাতির মাথা বসানো, সে কি অরগ্যান ট্রান্সপ্ল্যাণ্টেশানের ইঙ্গিত নয়? বা ওই যে পুষ্পকরথ? সেটাও তো এরোপ্লেনের ইঙ্গিত। তবে? ভালো করে শাস্ত্র ঘাঁটলে এরকম অনেক আশ্চর্য সব জিনিস লুকিয়ে আছে আবিষ্কার করা যায়। তার সব চাইতে বড় উদাহরণ তো আজকের আয়ুর্বেদ আর যোগা। সারা পৃথিবী জুড়ে রমরম করে চলছে কিসের জোরে? কারণ ওর মধ্যে সনাতন সত্য আছে।
না, শঙ্করের এ সব যুক্তি মনে ধরে না। তার কথা অনুযায়ী ভারত নিজেকে প্রাচীনত্বের কথা বলে বলে সেলফ হিপনোটাইজড করে রাখছে। এতে নাকি তার ক্রিটিক্যালি সব কিছুকে দেখার ক্ষমতা চলে যাবে ধীরে ধীরে। শ্রদ্ধা ভাবনা দিয়ে নাকি সত্যকে পাওয়া যায় না, সব নাকি মানুষের গভীর বিশ্লেষণ আর পর্যবেক্ষণের ফল। তার মানে ভারতের প্রাচীন ঋষিরা বিশ্লেষণ আর পর্যবেক্ষণ জানত না? তবে নিজের চিত্তের মধ্যে ডুবে কিছুই পায়নি? এই যে উপনিষদের আত্মতত্ত্ব, এ পুরোটা ভুয়ো? শঙ্কর বলে বেদান্ত দর্শন রিয়েলেস্টিক হিসাবে অত উন্নত নয়, যতটা নাকি মিস্টিক ফিলোজফি হিসাবে। তবে কি মানুষের মধ্যে সব মিস্টিসিজম বিদায় দিয়ে এই পার্থিব মরজগতে ভোগ-বিষাদ সর্বস্ব জীবন কাটাতে হবে?
এ তর্কের আর শেষ হয় না। আজকাল শঙ্করের পোস্টগুলো কেমন যেন লাগে, মাঝে মাঝে গিয়ে পড়ে আসে। এক-একসময় মনে হয় কমেন্টস বক্সে লেখে বেশ কিছু কড়া কড়া কথা। আসলে এগুলো মানুষের বিবেক না জাগলে বোধ হয় না যে! ‘হোলিনেস ইজ হোল অব রিলিজয়ান। এণ্ড হোলিনেস ইজ টু ফলো ইউর ওন ডিউটি একর্ডিং টু ইউর কাস্ট।’ এই কথা সে তার ফেসবুকের কভার ফটোতে লিখে রেখেছে।
২
---
বাড়ি যখন ফিরল তখন দেখে সবাই মোটামুটি এসে গেছে। প্রায় পঁচিশজন আনুমানিক হবে। বাড়ির পিছনে মেজো বউমা বিমলা নিজে সব ব্যবস্থা করে রেখেছে। বিমলা খুব সংস্কারী মেয়ে। ওর বাবার শিক্ষা আসলে। খুব উঁচু ব্রাহ্মণ পরিবারের মেয়ে। স্বয়ং দয়ানন্দের সঙ্গে নাকি ওর পিতৃপুরুষদের ওঠাবসা ছিল। সেই রক্ত যাবে কোথায়!
উপাধ্যায় বাড়ির পিছনে গিয়ে দেখল সব ব্যবস্থা কিরকম। সব নিখুঁত। সত্যিই ভাগ্য করে বৌমা পেয়েছে। কৃতজ্ঞতায় চোখে জল চলে এলো। একদিকে রাশি রাশি গোবর ডাই করে রাখা। আরেক দিকে বালতি বালতি গোমূত্র রাখা। সব বিমলার কাজ। আজ তারা সবাই এই গোবর আর গোমূত্রে স্নান করবে। করোনা তাড়াবার এই একমাত্র বৈদিক বিধান বলে সে আর তার সতীর্থরা মনে করে।
হইহই করে স্নান শুরু হল। দু’জন নাতি লাইভ করে দেখালো ফেসবুকে। পাঁচ মিনিটে নাকি দেড় হাজার ভিউয়ার্স হয়ে গেছে! মহা উত্তেজনায় উপাধ্যায় বাড়ি কেঁপে উঠল। কেউ চীৎকার করে ‘জয় গোমাতা কি জয়’,বলে উঠছে, কেউ ‘জয় শ্রীরাম’,বলে উঠছে... সে এক মহা উৎসব যেন। এই পিছনের উঠানেই বাড়ির বউরা হোলি খেলে। বিরাট চৌবাচ্চা বানানোই আছে তাই। সেই চৌবাচ্চাও আজ কানায় কানায় পূর্ণ। সব বিমলার তত্ত্বাবধানে।
উৎসব মেটার পর একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া। সব মিটতে মিটতে বেলা সাড়ে তিনটে হয়ে গেল।
দু’দিন পর সকাল থেকে হালকা জ্বর জ্বর অনুভব করল রামপ্রসাদ। বাড়ি ছেড়ে বেরোল না। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দুর্বলতা বাড়তে শুরু করল। যেন খাট থেকেই নড়তে ইচ্ছা করছে না। বিকালে জ্বর এলো একশো দুই। বিমলা শাশুড়িকে না আসতে দিয়ে নিজেই সেবার ভার নিল। দেবতার মত দেখে সে শ্বশুর মশায়কে। এমন সৎ চরিত্রের মানুষ দেবতা না তো কি? বিমলা বলল, এ অসময়ে স্নানের জন্য হয়েছে। গোমাতার কৃপায় সব ঠিক হয়ে যাবে।
ঠিক হওয়ার নাম নেই। দু’দিনের মাথায় একদিন বিমলা ঘরে ধুনো দিতে এসেছে, উপাধ্যায় খেয়াল করল সে কোনো গন্ধ পাচ্ছে না। বিমলাকে বলাতে বিমলা বলল, এটা সর্দির জন্য হয়েছে বাবা। আমারও অল্প অল্প জ্বর আসছে। ও কিছু না। গন্ধ আমিও কম কম পাচ্ছি।
দুধের সঙ্গে অল্প গোমূত্র মিশিয়ে বিমলা শ্বশুরমশায়কে দিতে লাগল। তার ঘরে কাউকে যেতেও বারণ করে দিল। বিমলার বুঝতে অসুবিধা হল না এ রোগ কি। কারণ সে স্বাদ, গন্ধ কিছুই পাচ্ছে না এখন। আর শ্বশুরমশায় তো প্রায় বিছানা নিয়েছে।
শঙ্কর বারবার বলতে লাগল টেস্ট করানোর জন্য। কিন্তু বাড়ির কেউ রাজি নয়। পাঁচ দিনের দিন রাতে রামপ্রসাদের এত বাড়াবাড়ি হল যে অক্সিজেন সিলিণ্ডার আনতে হল। কোনো হাস্পাতালে বেড নেই। রামপ্রসাদ শুনল মির্জাও নাকি হাস্পাতালে। এদিকে বিমলা সকাল থেকে তার ঘরে আসছে না দেখে জিজ্ঞাসা করে জানল তার নাকি জ্ঞান থাকছে না। তার স্ত্রীরও অল্প অল্প জ্বর, শ্বাসকষ্ট। শঙ্কর বাদে বাড়ির সব ছেলেরা চলে এলো। কে কাকে দেখবে নইলে? কিন্তু সব যেন হাতের বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে। সেদিনে যারা শুদ্ধি স্নানের উৎসবে এসেছিল তাদের মধ্যে চারজন ইতিমধ্যে মারা গেছে। উপাধ্যায়কে জানানো হয়নি।
এগারো দিনের দিন ভোরে চারঘন্টার ব্যবধানে উপাধ্যায় আর বিমলা মারা গেল। বাড়ির অনেকেই অসুস্থ। আর পাড়ায় এই ক’দিনে এত মানুষ মারা গেছে যে শোকের থেকে ত্রাসের ছাপই সবার চোখেমুখে - এবার কার পালা!
এর মধ্যে একজন এসে খবর দিল শ্মশানে কাঠ বাড়ন্ত। নেই। দাহ করতে গেলে এখান থেকে দেড় ঘন্টা দূরে শ্মশানে নিয়ে যেতে হবে, সেখানেও কাঠের কোনো নিশ্চয়তা নেই যদিও। সবার চোখেমুখে উদ্বিগ্নতা। এতক্ষণ ধরে মড়া বাড়িতে পড়ে থাকবে নাকি? উপায় কি তবে?
হঠাৎ পাড়ার কিছু ছেলে চলে এল বাড়িতে। একজন বলল, আমাদের দু’হাজার করে দিন আমরা মুড়ে গঙ্গায় ফেলে আসব। মা গঙ্গা সব পাপ ধুয়ে নেবেন। করোনায় গঙ্গা অশুদ্ধ হয় না।
তাই হল অবশেষে। রাতের অন্ধকারে দুটো মৃত শরীর কাপড়ে মুড়ে গাড়িতে চড়ে রওনা দিল। রাস্তায় যেতে কত মন্দির পড়ল, কেউ হাত দুটো জড়ো করল না। রামপ্রসাদের গাড়ীতে দুই ছেলে পিছনে পিছনে আসছে। গাড়ির নেমপ্লেটে স্বর্ণালী অক্ষরে লেখা ‘ব্রাহ্মণ’ বছর দুয়েক আগে রামপ্রসাদ শহর থেকে লিখিয়ে নিয়ে এসেছিল। গাড়ি চলছে, চাপা একটা গুনগুন আওয়াজ যেন সারা আকাশে বাতাসে বেজে বেজে বেড়াতে লাগল। দীর্ঘশ্বাস না হতাশা? কে বলবে?
==============
(এ গল্প খবরের কাগজে পড়া নানা টুকরো টুকরো খবর জুড়ে জুড়ে)