Skip to main content

এক গ্রামে সবাই একচোখে দেখত। আরেক চোখ ছিল কানা। সবারই। সবাই জানে, কিন্তু কেউ কাউকে বলে না। কারণ? লজ্জা গো লজ্জা। সে বহুযুগ আগের কথা। এক সাধু এই গ্রামের উত্তরে যে গুহা আছে না, ওখানে ধ্যান করত। তো কি হল, যেই না ধ্যানের বলে ওনার গা থেকে জ্যোতি-টোতি বেরোতো, অমনি লোকে হামলে পড়ে দেখতে যেত। সে সাধু কতবার বারণ করেছে, ভালোভাবে বুঝিয়ে বারণ করেছে, দেখো তোমরা ওভাবে পরের ধনে লোভ কোরো না, নিজের সম্পদ বাড়াও, তপস্যা করো আমার মত, তোমাদেরও জ্যোতি বেরোবে! কি মজা হবে দেখো!

তা কে কার কথা শোনে। সবাই এত হুজ্জুতি শুরু করল যে সাধু রেগেমেগে এ গ্রাম ছেড়ে চলেই গেল। আর শুধুই কি গেল গো, অভিশাপ দিয়ে গেল যে এই গ্রামে যুগ যুগ ধরে সবাই এক চোখেই কেবল দেখতে পাবে। আরেকটা চোখ থাকবে, কিন্তু তা দিয়ে কিছু দেখা যাবে না।

তো লজ্জায় সবাই এই কথাটা মেনেই নিয়েছিল। কিন্তু কেউ কাউকে কিছু বলতো না। তো একপ্রকার ভালোই চলছিল, খুঁড়িয়ে-টুঁড়িয়ে, হোঁচট-টোচট খেয়ে খেয়ে লোকের অভ্যাসও হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বাধ সাধল, এক পাগল!

কি হল তাই বলি। গ্রামে উসব হচ্ছে। সেই সাধুবাবার গ্রামত্যাগের দিনটা সব গ্রামের লোক বেশ জাঁকজমক করে উসব করে। এতে দুটো কাজ হয়, এক, অভিশাপের কথাটা চাপা পড়ে। দুই, সবার মধ্যে একটা আত্মবিশ্বাসপূর্ণ আত্মপ্রবঞ্চনা মাথা চাড়া দেয়, যে সব ঠিক আছে।

তো সেই উসবের দিন, এক পাগল বলে বসল, হেই যা! আমরা সবাই কেন এক চোখে দেখি না! আমাদের সে সাধু কেন জানি অভিশাপ দিয়ে গেলহায় হায়দুয়ো.. দুয়ো…..

ব্যস, আর কে যায় কোথায়! লেগে যা লেগে যা নারদ নারদ। কিছু লোক তাকে লাথিঝাঁটাকিলচড়ঘুষি মেরে এমন করল যে ধড়ে প্রাণটা টিকে থাকল কোনো রকমে। আর ওদিকে ব্যাপারটা সামাল দিতে কিছু বিদ্বান লোক পুঁথিটুঁথি ঘেঁটে প্রমাণ করতে লেগে গেল এই একচোখা দৃষ্টিই হল আসল দৃষ্টি। আর অন্য মতের কিছু পণ্ডিত লোক আবার অন্য পুঁথি এনে প্রমাণ করার চেষ্টা করল যে আসলে তারা দুই চোখেই দেখে। এই না দেখাও আসলে অন্য অর্থে দেখা!

লোকে দুই পক্ষেরই কথা শোনে, আর হাততালি দিয়ে বলে, "অপূর্ব! অপূর্ব!" মাঝে মাঝেই এ ওর কানে কানে জিজ্ঞাসা করে, এই পাগলটা মরেছে?

পাগলটা অবশেষে মরল। গ্রামে আরেকটা উসব বাড়ল। অভিশাপের দিনটাকে তারা নাম দিয়েছিল 'অভিনন্দন' সব। এবারে তার এক পক্ষকাল পরে পাগলের মরার দিনটার নাম দিল 'অন্ধকারের আলো' সব। এদিন সবাই প্রদীপ নিভিয়ে অন্ধকারে একে অন্যের হাত ধরে ধরে মন্ত্রের মত পড়ে, "অন্ধকারই আমাদের আলো.. অন্ধকারই আমাদের আলো"। আর থেকে থেকেই সবাই নিজেদের পিঠ চাপড়াচাপড়ি করে বলে, অপূর্ব, অপূর্ব!!