Skip to main content

        একজন মানুষ অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছে। যতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে পা ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা তার থেকেও বেশিক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছে। মানুষটার মাথার উপর কৃষ্ণচূড়া ফুলের ঝাঁকি গাছ ভর্তি, কি সুন্দর করে একটা পাখি ডাকছে, মানুষটা ভ্রুক্ষেপ করছে না। হাতের সিগারেটটাকে জোরসে আঁকড়ে নিজের মধ্যে ডুবে কিসের একটা হিসাব করছে। অথচ ওর চোখের নাগালের মধ্যেই কি অপূর্ব দেখতে দুটো মেয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলছে, একটু জোরে হাওয়া দিলেই তাদের কারোর গা থেকে সুগন্ধীর সৌরভ ভেসে আসছে। লোকটা তবু উদাসীন। প্যান্টের ভাঁজগুলোয় ময়লা, জামাটা মনে হয় পর পর অনেকদিন পরছে, হাতের নীল প্লাস্টিকে কিছু মোড়া, প্লাস্টিকের গায়ে 'টিঙ্কু বস্ত্রালয়' লেখা। মানুষটা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পা নাড়াচ্ছে, হাতের ভঙ্গীতে কিছু বলছে নিজেকে নিজেই। 
        আচ্ছা এতক্ষণে এক কাপ চা-ও কি খেতে ইচ্ছা করছে না ওর? কিম্বা হিসিও পাচ্ছে না? ওর পিছনেই দাঁড়িয়ে কত লোক চা, বিস্কুট খেয়ে গেল। 
        লোকটার ফোনটা বাজল। "যেতে যেতে পথে হল দেরি", রিংটোন, পিয়ানোতে বাজানো। লোকটা ফোনটা নিয়ে কানে দিয়ে কিছু একটা শুনল, তারপর ধরা গলায় বলল, "বডি ছাড়তে আরো তিন ঘন্টা"। 
        মানুষটার পিছনে সার দিয়ে বসা মানুষ। জ্যান্ত মানুষ। আমরা অপেক্ষা করছি ভিজিটিং আওয়ার শুরু হওয়ার। আরো কুড়ি মিনিট বাকি। আমার সামনে থেকেও কৃষ্ণচূড়া, পাখির ডাক, সুন্দরী মেয়ে, চা তেষ্টা মিছিলের মত হেঁটে, কুয়াশায় মিলিয়ে গেল। 
        জিজ্ঞাসা করলাম, কে?
        বউটা...
        মানুষটার চোখদুটো এত লাল, দেখিনি, গায়ে বিড়ির গন্ধ, দাঁতে ময়লা ছোপ, হয়ত চল্লিশ কি বিয়াল্লিশ বয়েস। 
        ভিজিটিং আওয়ার শুরু। দেরি করা যাবে না। প্রচুর ভিড়। এগিয়ে যেতে যেতে ভিড়ের ধাক্কায়, জীবন্ত মানুষের ধাক্কায়, মনে হল বেঁচে থাকাটা খুব জরুরী। যে মানুষটা অপেক্ষা করছে দেখে এলাম, ওকেও বলে আসি মনে হল। অবশ্য ও বুঝে যাবে, আসলেই বেঁচে থাকতে চাওয়াটাই খুব জরুরী।