Skip to main content
স্নানে গেছেন কমলাক্ষ। তিনি ভাস্কর। গ্রামের প্রান্তে ছোট একটা কুটিরে তাঁর কর্মশালা। 
ডুব দিতেই হঠাৎ তাঁর পায়ে ঠেকল কি যেন। জল থেকে তুলে দেখেন অপূর্ব এক শিলা। মন হয়ে উঠল পুলকিত। আপনমনে বলে উঠলেন, "সুন্দর!" 
বাড়ি ফিরে পূজা সেরে বসলেন শিলার সামনে। মনে ভেসে উঠল এক রূপ। স্থির হয়ে গেল লক্ষ্য। নিয়ে আসলেন তাঁর সরঞ্জাম - ছেনি, হাতুড়ি আরো কত কি। 
প্রথম আঘাতটা করতেই তিনি চমকে উঠলেন। 
শিলা বলে উঠল, "থামো। কি করছ?" 
কমলাক্ষ অবাক। এতদিন এত মূর্তি গড়েছেন, এমন তো হয় নি কখোনো। 
নিজেকে স্থির করে তিনি বললেন, "মূর্তি গড়ব।" 
শিলা বললে, "বেশ। তবে আমি যেমন বলব তেমন ভাবেই হবে। তুমি শুধু আমার আজ্ঞাবহ, মনে রেখো।" 
কমলাক্ষ হলেন নির্বাক, তাও কি হয়! 
বললেন, "সে হয় না।" 
"কেন?" 
শিল্পী - তুমি কি জান কি তোমার মধ্যের প্রচ্ছন্ন রূপ? যা প্রকাশিত হতে চাইছে আমার সাধনায়। তুমি জান না। 
শিলা - বটে। আমার রূপ আর আমিই জানি না? এত অহংকার তোমার? 
শিল্পী - অহংকার না। এ আমার বিশ্বাস, আমার এতদিনের সাধনালব্ধ ধন এ। লক্ষীটি, তুমি জেদ ছাড়। 
শিলা - আমার ব্যাথা লাগে তোমার আঘাতে। আমি সইব কেন? নাম ডাক তো হবে তোমার। 
শিল্পী - না ভাই। যতদিন চলবে কাজ ততদিন তুমি থাকবে প্রচ্ছন্ন, আমি হব প্রধান। শেষে আমি হব প্রচ্ছন্ন তোমার মধ্যে। তুমি দেখো। 
শিলা - সে দিন আমি যে হব তোমার সৃষ্টির পিছনে আড়াল। এ আঘাত আমি সইব না। 
কমলাক্ষ কোনো জবাব পেলেন না। স্মরণ করলেন বিশ্বকর্মাকে। 
তিনি হলেন আবির্ভূত। সব শুনে মৃদু হাসলেন। 
তারপর শিলাকে বললেন, "তুমি বৃথাই দূষছ কমলাক্ষকে। তুমি ওর ছেনি, হাতুড়ি আর আঘাতটাকেই করেছ লক্ষ্য। তাই ওগুলোকে এত বেশি মনে হচ্ছে তোমার।ভাবছ এ তার অহংকার। তুমি তাকিয়ে থাকো ওর দুচোখের দিকে। দেখবে আঘাতগুলো শুধুই বাইরেই থাকবে, ভিতরে প্রবেশের পাবে না অধিকার। ধীরে ধীরে ওর চোখে দেখা রূপ তোমার সমস্ত অবয়বে হবে বিকশিত। তুমি ধন্য হবে, সার্থক হবে তোমার জন্ম। পাবে গুণীজনের জগতে স্থান আর মান।" 
শিলা শুনলে নীরব হয়ে। 
কমলাক্ষ বাকি কাজটুকু সারলেন নির্বিঘ্নে। 
সব শেষে দেখলেন, শিলার চোখে জল। 
কমলাক্ষ হলেন অপ্রস্তুত। তিনি ভাবলেন, কি অত্যাচার তিনি করলেন শিলার ওপর। বললেন, "খুব লেগেছে ভাই? আমায় ক্ষমা করো। আমি ফিরিয়ে দিয়ে আসি তোমায় নদীগর্ভে। আমার চাই নে এমন সাধনা।" 
শিলা বললে, "না প্রভু। আমার মধ্যে যে এরূপ আছে তা ছিল আমার ধারণার অতীত। তবে আমি সে জন্য কাঁদছি না।" 
"তবে?", উদ্বিগ্ন কমলাক্ষ। 
"তুমি আমায় দিলে অমূল্য ধন। যে ধনহীন হয়ে আমি পড়েছিলাম নদীগর্ভে শুধুই একখন্ড পাথর হয়ে।" 
"কি সে ধন ভাই?" 
শিলা হেসে বললে, "বিশ্বাস।" 
কমলাক্ষ জড়িয়ে ধরলেন তাঁর নবসৃষ্টিকে। দু'জনের অশ্রুতে দু'জনেই হলেন সিক্ত। 
বিশ্বকর্মা হাসলেন অলক্ষ্যে।