সৌরভ ভট্টাচার্য
23 January 2019
আগুনকে সন্তর্পণে গায়ে মাখলে আগুন পোড়ায় না। রত্নার পোড়া শরীরটা পুড়বার জন্য আগুন চায়নি, পুড়ে যাওয়া ছাইটুকুরও অস্তিত্ব মেটাবে বলে আগুন চেয়েছিল।
শ্মশানে তখন বিকাল ফুরিয়েছে। পোস্টমর্টেমের ঘর ঘুরে রত্না সমাজের শেষ দরজাটা পেরোবার অপেক্ষায়। দ্বিধা নেই। সংকোচ নেই। সন্তান নেই। স্বামী নেই। কলঙ্ক আছে। সমাজ দু'হাতে মাখিয়েছে। সে মেখেছে। মুছতে চায়নি তা না, মোছার ন্যাতাগুলোতেও এত কালি যে সে ইচ্ছা ছেড়েছে বহুকাল আগে।
আমি কলঙ্কের গল্পটা বলব না। সে ভার পাঠকের থাক। স্বভাব চরিত্রও আলোচনা করব না। আমি শুধু পড়ন্ত আলোয় একটা পোড়া শরীর আর একটা মুক্তি পাওয়া মানুষের অস্তিত্বের মধ্যে ডুবছি। পাখিদের ঘরে ফেরার শব্দ। গঙ্গার পবিত্র জল। আরো পদস্থ সম্মানিত মৃতদেহের পাশাপাশি রত্নাকে দেখছি।
অন্ধকার নামল। দাহ শেষ। রত্না শেষ। গল্পটা বেঁচে থাকবে। কারোর উদাহরণ, কারোর উদ্দীপনা হয়ে। আকাশে তারার সংখ্যা আজ কম না বেশি জানি না। রত্নার বাড়ির চৌকাঠে আজ প্রদীপ কেউ দেবে কিনা জানি না। পৃথিবী পাপমুক্ত হয়ে শুচিস্নান সেরে উঠোন নিকিয়ে নিশ্চিন্তে পুবে মুখ ফিরে জপে বসেছে কিনা জানি না।
যা জানি তা হল, একটা জীবন শিকড় উপড়ে পড়ল। শিকড়ের প্রাণ ছিল না তা নয়, মাটির প্রতি তার কোনো ঔদাসীন্য ছিল বলেও দেখেনি কেউ। শুধু তার শরীরটা মনের আন্দাজে সত্যি হয়েছিল অনেক বেশি। আর মনটা মন্দিরের চূড়ায় বসা কাকের ডানার সাথে উড়েছিল অনেকটা দূর, যদ্দূর উড়লে মাটিতে মেশা মানুষের চোখের বাইরে চলে যেতে হয়, আর ফুলের রেণুর অপচয়ের মত এর গায়ে ওর গায়ে লেগে একদিন মুছে যেতে হয়। রত্না শেষ হয়ে গেল। গল্পটা রয়ে গেল। তবে আপনারা যে গল্পটা এখন পড়লেন সে গল্পটা নয়। এটা তো গল্পই নয়, সেটা অনেক রঙিন গল্প।