Skip to main content

আমার সারা গায়ে চন্দনের গন্ধ।
গলায় তুলসীমালা। ঈশ্বরের জন্য সেজেছি।
গোপালের জন্য পাত্রভরা মাখন - নৈবেদ্য।
গোপাল তখন একবেলা খাবারের জন্য রাস্তার মোড়ে, কিম্বা প্ল্যাটফর্মে মানুষ ভরতি ট্রেনের জানলায় জানলায় হাত পাতছে। একজন ভক্ত খুঁজছে, হাতে ভাতের মূল্য দেবে। নৈবেদ্য।
আমার গায়ে লাল কাপড়। কপালে সিঁদুর। গলায় রুদ্রাক্ষ। মায়ের ধ্যানে বসেছি। ধূপে-কর্পূরে-ধুনোয় ম ম মন্দির। মহানিশা।
মা তখন কোনো ঘুপচি ঘরে নগ্ন শুয়ে খাদকের নীচে। কিম্বা কোনো মোড়ে, অথবা বিপুল সংসারের জোয়ালের তলায় মগ্ন আত্মদানে। করুণ চোখদুটোয় নিষ্ফল আকুতি - একজন ভক্তের জন্য।
আমি ধ্যানমগ্ন। আত্মজ্যোতিতে আলোকিত আমার চিত্ত। সব মায়া। সব স্বপবৎ। সব মিথ্যা।
মিথ্যা খিদেতে যখন আমার গলায় নামছে মিথ্যা খাদ্য, তখন আমার দরজায় দাঁড়িয়ে মিথ্যা ভিখারি, তার মিথ্যা খিদের মিথ্যা খাবারের জন্য। একজন সত্য আত্মজ্ঞানী খুঁজছে, যে মিথ্যা সংসারে সত্য করুণায় তাকে ডাকবে।
আমার নাস্তিক সত্তা ব্যস্ত সুক্ষ্ম বিচারে। ইতিহাসের রাশি রাশি ভুল-ভ্রান্তিকর সব কিছু তছনছ করে ফেলবে জাগ্রত তীক্ষ্ম বিচার। সব কেটেকুটে দাঁড় করাব একটা বিজ্ঞানালোকিত সমাজ। সারাদিন আমার খাঁড়ার সামনে দাঁড়িয়ে ঈশ্বর-আল্লাহ-গড। অসহায়।
আমার আশেপাশের অসহায় মানুষগুলো একটা সংবেদনশীল সহজ কথা শুনবে বলে ঘুরে ঘুরে ফিরছে। ইজম না, ইতিহাস না। কিছু স্বপ্নের কথা, কিছু মাটির কথা আর কিছু ফুল-পাখির কথা ওরাও জানে, তাই বলতে চায়। কিন্তু বিশ্ব-বিদ্যালয়ে যে বিশ্বের কথা বলে, সে বিশ্বের ওরা কেউ নয়। তাই ভাষার সাথে ভাব মরছে ক্ষেতের নাড়ার মত অবহেলায়।
ঈশ্বর যখন তখন সরে যাচ্ছে। মন্ত্র মালা হারিয়ে যাচ্ছে। সব কিছু শাস্ত্র জীবাশ্ম হয়ে মৃত। শুধু উন্মাদের মত মাথা কুটে মরছে একটা হৃদয়। বুকের মধ্যে প্রতি মুহূর্তে লিখছে শাস্ত্রের নতুন বাণী, পুরোনো মসীতে - অনুকম্পা।