Skip to main content

মানুষ মানেই ভয়। 'সাহস' ঠিক ভয়ের বিপরীত শব্দ নয়। সাহস হল ভয়কে প্রতিরোধ করার শব্দ। বা আরো সাদা ভাষায় ভয়ের সঙ্গে যোঝার শব্দ। 'অভয়' শব্দটা ভয়হীনতা, সে সবার আসে না। সক্রেটিস, ব্রুনো, চৈতন্য, খ্রীষ্ট, স্পিনোজা, গ্যালিলিও প্রমুখ যেসব বিখ্যাত মানুষদের কথা ইতিহাসে শোনা যায়, যারা নিজেদের জীবন বিপন্ন করে হলেও একটা আদর্শকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন। তাদের নিয়ে কথা নয়। ভয় হয় তো তাদের প্রাণেও জন্মেছিল। শোনা যায় খ্রীষ্ট ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার আগে ভয় পেয়েছিলেন। পিটারের কথায় তা পাওয়া যায়। হিস্ট্রি চ্যানেলে সেন্ট পিটারকে নিয়ে যে তথ্যচিত্র হয়েছিল সেখানে পিটারের মুখ দিয়ে এই কথাটা বলানো হয়। গান্ধী বলতেন, ভয় পাবে এটা স্বাভাবিক, তবে ভীতু হবে কিনা এটা তোমার চয়েস। 

    দেখুন, একটা পশু কেবল তার সহজাত প্রবৃত্তির মধ্যেই জন্মায়। কিন্তু একটা মানুষ জন্মায় একটা সমাজের মধ্যে। যে সমাজ একটা ধারাবাহিক স্মৃতি, প্রথা, বিশ্বাসের ধারা। মোট কথা সে জানে যে তার মধ্যে অনেক অপূর্ণতা, সে আদিম, তাকে সভ্য হওয়ার জন্য কিছু বছর দেওয়া হবে স্কুল ইত্যাদির মাধ্যমে। তাকে নিজেকে সমাজে চলমান হিসাবে তৈরি করে নিতে হবে। সে ব্যষ্টি হিসাবে যদিও অপূর্ণ, অন্যদিকে তাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে থাকা সমাজটা পূর্ণ, খাঁটি। শৈশব-কৈশোর-বয়ঃসন্ধিকাল জানল বড়রা সবাই পারফেক্ট। সমাজের সব ব্যবস্থা পারফেক্ট। তাকে ধীরে ধীরে এ সবের মধ্যে নিজেকে গড়েপিটে নিতে হবে। অবশ্যই তার জন্য নানারকম সাহায্যের ব্যবস্থা আছে। এই শুরু হল তার সাইকোলজিক্যাল ভয়ের গোড়াপত্তন। ভয় মানে আদতে তো নিজের অপূর্ণতা, অক্ষমতার বোধ। মানুষ ভূতকে ভয় পায়, অন্ধকারকে ভয় পায়, রাজাকে ভয় পায়, রাজার পেয়াদাকে ভয় পায়, সমাজকে ভয় পায় ইত্যাদি নানা কিছুকে ভয় পায় কারণ সে জানে এগুলো সবার সামনে সে অক্ষম, অপূর্ণ। 

    এরপরে আসে একজন পারফেক্ট সর্বদ্রষ্টা সিসিটিভিতুল্য ঈশ্বরের ভয়। তিনি যদিও বন্ধুত্বপূর্ণ। কিন্তু তিনিও তাঁর শর্ত ছাড়া এক পা নড়েন না। শর্ত মেনে চললেই বন্ধু, নইলেই শাস্তি, শাপ, বিচার ইত্যাদি। এক এক ক্রিডে এক এক ধরণের শর্ত। আমি 'ধর্ম' কথাটা না বলে 'ক্রিড' কথাটাই বললাম। কেন বললাম একটু বলে নিই। দেখুন আমরা সবাই যেমন ভোট দিতে যাই, কিন্তু গণতন্ত্র নিয়ে আর কতজন সিরিয়াসলি মাথা ঘামাই? ওই ভোট দেওয়াটা আমাদের একটা ওপরসা ওপরসা গণতান্ত্রিক আচারের মত। সেরকম ধর্মও। বেশিরভাগের কাছেই একটা আচার-অনুষ্ঠানের প্রথা। সেখানেও যদিও ভয় আছে, তবে অতটা গভীরে নয়। আমি যদি জানি আমার ঈশ্বর শনিবারে নিরামিষ খেলেই খুশী তবে তাকে তুষ্ট রেখে চলতে আমার অসুবিধা হয় না। কিন্তু যেখানে যুক্তি সেই সমাজ স্বীকৃত বিশ্বাসের বিরুদ্ধে যাচ্ছে তখন একটা ক্রিডের ক্ষেত্রে সেটা তো 'ব্লাশফেমি', অর্থাৎ ঈশ্বরনিন্দাতুল্য। তখন মানসিক সংকটটা অনেক গভীরের। ঈশ্বর নিন্দার তো একটাই পথ, ঈশ্বরের অস্তিত্বকে অস্বীকার করা। যুক্তি কিছুতেই মানছে না, অন্যদিকে মনের মধ্যে জমা সামাজিক শিক্ষা-প্রথার ছাপ, যা তাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে, এ ভয়ংকর। এই দুই লড়াইয়ের সহজ সমাধান আসে না মোটেই। দেখেছি যাদের মধ্যে নাস্তিকতাটা স্বভাবগত বোধের সঙ্গে সহজ হয়নি, তার নাস্তিকতাটা বড্ড লাউড। যখন-তখন, যেখানে-সেখানে সে নিজেকে কারণে-অকারণে ঘোষণা করে ফেরে। বাইরের আস্তিকতার সমস্ত অলঙ্করণকে সন্তর্পণে এড়িয়ে যায়, পাছে তাকে কেউ আস্তিক ভেবে বসে। কিন্তু যার মধ্যে সত্যি অর্থে নাস্তিকতা এসেছে তার কিছুতেই ভয় নেই। খুশবন্ত সিং যখন বিভিন্ন ধর্মের প্রার্থনা নিয়ে একটা বই লিখছেন, বা শিখদের ইতিহাস নিয়ে বই লিখছেন, বা প্রজাপতি ব্রহ্মকুমারীর আশ্রমে গিয়ে সেখানে তাদের কার্যকলাপের প্রশংসা করছেন তখন খুশবন্ত সিং-এর নিজেকে নিয়ে কোনো সংশয় জন্মাচ্ছে না। সুনীলবাবু যখন ‘সেই সময়’-এ রামকৃষ্ণ-বিবেকান্দের জীবনের অংশ বা কি ‘মনের মানুষ’-এ লালনের জীবন লিখেছেন তখন সেখানে কোনো বাড়াবাড়ি নেই কোনো পক্ষ নিয়েই। কিন্তু মাঝারিদের নিয়ে বড় সমস্যা। কিছুদিন আগে কোনো একটা ফেসবুকীয় গ্রুপে কেউ একজন বিদ্যাসাগরের জীবনী লিখতে গিয়ে রামকৃষ্ণ ও বিবেকানন্দকে নিয়ে যা সব একপেশে নেগেটিভ সিদ্ধান্ত লিখছেন দেখলাম, তাতে বোঝা যায় সমাজের “নানা ভাষা নানা মত নানা পরিধান” লেখকের বোধের সঙ্গে সম্পৃক্ত না হতে পারায় বদহজম হচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন সে জীবনীটা নাকি ভীষণ বস্তুনিষ্ঠ জীবনী হচ্ছে। মুশকিল হল কোনো মানুষেরই জীবনী বস্তুনিষ্ঠ হলে বিপদ, সেটা ডাইনোসরের জীবনীর ক্ষেত্রে খুব বড় কথা। সেখানে প্রতিভাসম্পন্ন মানুষের জীবনী আরো জটিল। সে জীবনীতে ঘটনাপঞ্জী থেকে তাদের মানসিক নানাবিধ স্ববিরোধ আর সামঞ্জস্যের বিধানের ধারাবিবরণীতেই হয় আসল জীবনী। যাকে সময়ের সঙ্গে, তার আশেপাশের পরিবেশের সঙ্গে তুল্যমূল্য বিচার করে দেখতে হয়। 

    যা হোক অন্য দিকে চলে গেলাম। যেটা বলছিলাম, মানুষের একটা ভয় জন্মায়, পারফেক্ট ঈশ্বরের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলার নানা চ্যালেঞ্জে ভয়।

    এতটা যদি অনুগ্রহ করে পড়লেন, তবে এবার দৃষ্টিটা একটু অন্যদিকে নিয়ে আসতে চাইব। পৃথিবীর ইতিহাসে ভয়ের অধ্যায়টা স্বাভাবিক। কিন্তু ভয়ের এক্সপ্লয়টেশানের ইতিহাসটা বড় নির্মম। 

    এক্সপ্লয়েটেশানে প্রথমেই যা আসে, তা হল ধর্ম। খুব অল্প কথায় দেখুন মানুষের মধ্যে ঈশ্বরের ধারণা যুগে যুগে বদলিয়েছে। আগে মানুষ প্রাকৃতিক নানা দুর্যোগ, নানা ঘটনা, নানা রোগব্যাধি ইত্যাদিকে ঈশ্বরের কার্যকলাপ বলে জানত। ক্রমে 'একেশ্বরবাদ' এলো। তারপর 'অন্তর্যামীভাব' এলো। 'কিংডাম অব গড ইজ উইদিন ইউ', বা 'ঈশ্বরঃ সর্বভূতানাং হৃদ্দেশেহর্জুন তিষ্ঠতি', বা 'চিত্তশুদ্ধি'ই হল সমস্ত ধর্মের সার। আর হৃদয়কে শুদ্ধ করার নীতি হল - "সবারে বাসরে ভালো নইলে মনের কালো ঘুচবে না রে"। সব ধর্মের মূল নীতিটা এটাই। এখানে ভয় নেই। এখানে স্বাধীনতা। আনন্দ। সুখ। চেতনা। 

    কিন্তু এ হল ধর্মের হৃদয়। আমাদের শরীরে যেমন হৃদয়কে ছেড়ে হাত-পা-চোখ-নাক-মুখ ইত্যাদির প্রবল বিত্তাপ চোখে পড়ে ধর্মেও তাই, মুখ্যকে ছেড়ে গৌণদের আস্ফালনই বেশি চোখে পড়ে। যীশু ফরীসীদের ভর্ৎসনা করছেন এই বলে যে, তোমরা কেন মানুষের ঘাড়ে নানা কৃত্রিম নিয়মের বোঝা চাপিয়ে তাদের দুর্বল, তাদের ভীতু করে তুলছ? তিনি শ্রেষ্ঠ আদেশ বলতে বুঝলেন, ঈশ্বরকে তোমার মন প্রাণ দিয়ে ভালোবাসো আর তোমার প্রতিবেশীকে তোমার মত করে ভালোবাসো। একে অন্যকে ভালোবাসো যেমন আমি তোমাদের ভালোবেসেছি। 

    এই হল মূল কথা। কিন্তু খ্রীষ্ট সে কথা বললেও, খ্রীষ্টধর্ম সে কথা বলে না। দস্তয়েভস্কি'র 'দ্য ব্রাদার্স কারামোজভ' -এর 'দ্য গ্রেট ইনকুইজিটার' অধ্যায়টা পড়ার অনুরোধ রাখলাম, সেটা নিয়ে ইউটিউবে একটা ছোটো নাটিকাও আছে সেটাও দেখে নেওয়ার প্রস্তাব রেখে গেলাম যদি বই না পাওয়া যায় তো। সেখানে পোপের সঙ্গে যীশুর কথোপকথনেই সবটা বলা আছে। যদিও উনি শুধু নন, টলস্টয়ের 'দ্য কিংডাম অব গড ইজ উইদিন ইউ', বা কাহলিল জিবরানের 'প্রফেট' সহ অন্যান্য লেখা এ সত্যের সাক্ষী বহন করে। যেখানে জিবরান এতটা এগিয়ে বলছেন যে, একদিন জেরুজেলামের যীশুর সঙ্গে ভ্যাটিকানের যীশুর দেখা হয়েছিল, কেউ কাউকে চিনতে পারেননি। 

    বুদ্ধ, চৈতন্য, নানক, কবীর, রামকৃষ্ণ, শিরডি সাঁই প্রমুখ যারাই এসেছেন তারাই কোনো না কোনোভাবে মানুষকে ভয় থেকে মুক্ত হওয়ার কথাই বলেছেন। নইলে রবীন্দ্রনাথের ভাষায় শুধু একটা বিশুদ্ধ আত্মহত্যা পথের শিক্ষার জন্য কেউ বুদ্ধের কাছে যেত না। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী, সে শুদ্ধতা আর পরের প্রজন্ম অবধিই টিকে থাকেনি নিজের স্বীয় শুদ্ধতায়, সরলতায়। যে হাত মানুষের বাঁধন খোলার জন্য ব্যবহার হয়েছিল, সেই হাতের ধারক বাহকেরাই নতুন শৃঙ্খল তৈরি করে বসল। 

    এর পর আসে সমাজনীতি আর রাজনীতি। সেখানেও সক্রেটিস থেকে শুরু করে রুশো, ভল্টেয়ার; এদিকে রামমোহন থেকে শুরু করে বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ অবধি একই কথা বলা হল। মানুষের সমাজে মানুষের স্বাধীনতার কথা। 'চিত্ত যেথা ভয় শূন্য' উচ্চারিত হল। মার্ক্সের দর্শনেও সাধারণ মানুষের নির্ভীক জীবনের কথা বলা হল। কিন্তু বাস্তবে সে সবের পরিণতি? কোনো সমাজেই আজ অবধি উদাহরণ নেই। কোনো বাস্তব রাজনীতিতেও নেই। সাম্যবাদের যে ছবি আজ রাশিয়া আর চীন দাঁড় করিয়েছে তাতে মার্ক্স বেঁচে থাকলে নিজেকেই হয় তো ক্রুশবিদ্ধ করতেন। 

    মোদ্দা কথাটা হল মানুষের ভয়কে ব্যবহার করা যায়। মানুষ নিজের ভয়কে অনুভব করে আর অন্যের ভয়কে জানে। জানা আর অনুভবের মধ্যে অনেক পার্থক্য। অনুভব যতটা বাস্তব হয়, জানা ততটা নয়। বুদ্ধির তীক্ষ্মদৃষ্টি থাকলে জানা ক্রমে অভিজ্ঞতায় পরিণত হয়। অভিজ্ঞতার উপর বিশ্বাস করে তৈরি হয় আত্মবিশ্বাস। সে আত্মবিশ্বাসে সে অনুভব করে যে ভয় একটা সাধারণ অনুভব। অপূর্ণতার বোধ, অক্ষমতার বোধ তার একার কেবল নেই। এ সার্বজনীন অনুভব। একে এক্সপ্লয়েট হতে দিতে নেই। 

    হিটলারের কথায় আসুন। হলোকাস্টের মত আমাদের সময়ে আর একটাও নৃশংসতা নেই হয় তো। হিটলার বুঝিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিল যে ইহুদীরা সারা পৃথিবীর পক্ষে একটা থ্রেট। পৃথিবীকে ইহুদিশূন্য না করতে পারলে সবাই শেষ হয়ে যাবে। এ ভয় যদি মানুষের মনে সত্য হয়ে দানা না বাঁধত তবে একা হিটলারের পক্ষে এত প্রবল আকারে নৃশংসতাকে বাস্তবায়িত করা সম্ভব হত? আসলে তো বিশ্বযুদ্ধ দুটো হচ্ছিল। এক দেশে দেশে, আর এক ইহুদিদের বিরুদ্ধে। হিটলার যখন নিজে বুঝতে পারছে সে হেরে যাচ্ছে তখনও সে এক ক্যাম্প থেকে আর এক ক্যাম্পে ইহুদিদের নিয়ে গিয়ে শেষ করে দিচ্ছে। এমনকি এও ঘোষণা করছে যে সে মরে গেলেও যেন এই ইহুদি নিধন কর্মকাণ্ড থেমে না যায়। 

    শুধু হিটলার না। যুগে যুগে ধূর্ত মানুষেরা, অসৎ মতলবী মানুষেরা সাধারণ মানুষের জন্য ছলেবলে এরকম নানাবিধ কৃত্রিম শত্রু তৈরি করে যাচ্ছে। কেউ বুঝিয়ে দিল আমাদের ধর্ম, আমাদের সভ্যতা, আমাদের সংস্কৃতি ইত্যাদির পক্ষে অমুকরা থ্রেট হয়ে যাচ্ছে। ব্যস, যে ভয় আমার মধ্যে আজন্ম নৈর্ব্যক্তিক আকারে ছিল, সেই এবার নিজের বাইরে স্পষ্ট একজন শত্রুর মুখ দেখে আরো তীব্র তীক্ষ্ণ হয়ে উঠল। ভয় মানুষকে নির্মম, নিষ্ঠুর, স্বার্থপর করে তুলতে পারে অনায়াসেই। যুক্তির পর যুক্তি সাজিয়ে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য তাকে এমন তাতিয়ে তুলবে যে ভয়কেই সে নিজের ধ্রুবতারা মেনে নেবে। আরো গভীরের কথা হল, ভয়ের এমন একটা এমন স্পষ্ট আকার দেখে নিজের ভিতরে সদা বহমান ভয়ের চাপা ভার থেকে মুক্ত হওয়ার আনন্দে, সে এমন একটা কৃত্রিম উল্লাস অনুভব করে যে সাধারণ চেতনা লুপ্ত হয়ে যায়। হনুমানের লেজে আগুন লাগতে সে এমন ক্ষেপে গেল যে সারা লঙ্কায় আগুন লাগিয়ে দিল, খেয়ালই রইল না যে সে লঙ্কায় স্বয়ং তার আরাধ্যা সীতাদেবী আছেন। 

    ভয় জাত ক্রোধ, উদ্বেগ, কাল্পনিক অস্তিত্ব সংকটের বোধ মানুষকে দিয়ে যা কিছু করিয়ে নিয়ে পারে। আর তাই জন্যেই হলোকাস্ট সম্ভব হল। নইলে এত এত মানুষকে এক সঙ্গে এমন বিকারগ্রস্ত করে তুলে ফেলা যায় যে ইহুদি শিশুদের পা ধরে দু'ফালা করে শয়ে শয়ে নদীতে ভাসিয়ে দিতে পারে? লক্ষ লক্ষ মানুষকে গ্যাস চেম্বারে ঢুকিয়ে মেরে ফেলতে পারে? আরো আরো কত নৃশংসতা তা বলে শেষ করা যায় না। 

    এ সবই সম্ভব শুধু একটা স্বাভাবিক নিয়মে জাগা ভয়কে বিকারগ্রস্ত করে তুলে। আবার কেউ একজন আসে, যে প্রাণপণে বলতে শুরু করে পৃথিবীতে সব চাইতে বড় পাপই হল চিত্তের দুর্বলতাকে স্বীকার করে নেওয়া। “নেই যে রে ভয় ত্রিভুবনে ভয় শুধু তোর নিজের মনে”। সমস্ত ভয়কে তুচ্ছ করে মাথা উঁচু করে না দাঁড়াতে পারলে যে আমার কোনো মন্ত্রে, কোনো নীতিতে, কোনো রাজার শাসনে মুক্তি নেই - এ অনুভব না জন্মালে বাকি সব কিছুই বড় অগভীর। অনর্থক।