একবার হল কি ওশোর যৌনতার উপরে লেখা একটা বই নিয়ে একজন বরিষ্ঠ জ্ঞানীগুণী মানুষ, খুব সম্ভবত মোরারজী দেশাই মন্তব্য করেন, খুব অশালীন বই ইত্যাদি ইত্যাদি। ওশোকে জিজ্ঞাসা করা হয়, আপনার এই বিষয়ে কি বক্তব্য।
ওশো বলেন, দেখুন ওনার বয়েস এক প্রায় নব্বইয়ের কোঠায় পৌঁছিয়েছে। তায় এমন সংযমী মানুষ। যিনি নাকি স্বমূত্র সেবন করতেন। তো আমার লেখা অনেক বিষয়ে বই আছে, নানক, কবীর, কৃষ্ণ, খ্রীষ্ট, নানা দর্শন ইত্যাদি। উনি হঠাৎ ওই বইটা নিয়েই পড়লেন কেন? তার মানে কি ওনার মধ্যে এখনও সে তৃষ্ণা জাগ্রত আছে? তাই কি এই সমালোচনা?
আজ এই গল্প কেন মনে পড়ল? আরে শুনলাম ইউপি থেকে কে নাকি একজন এসে বলেছেন আমাদের এখানে অ্যান্টি-রোমিও স্কোয়াড খুলবেন। মায় বেলুড়মঠে জোড়ায় জোড়ায় বিকালে কত যুগল বসে থাকে গঙ্গার ধারে, তা ওনাদের তো গায়ে লাগেনি। হঠাৎ এনার আর এনার কিছু সাঙ্গপাঙ্গের এত গায়ে লাগল কেন? আসলে একটা চাপা ফ্রাস্ট্রেশন বুঝলেন না? বলি হ্যাঁ রে, কোনার্ক, খাজুরাহো এখনও ভেঙে পড়েনি, এখনও রাসলীলা অধ্যায়টা ভাগবত থেকে বাদ যায়নি, এখনও জয়দেবের গীতগোবিন্দ বাজারে দুষ্প্রাপ্য হয়নি। তোরা খামোখা এ ভাব কোত্থেকে আমদানি করলি বাপ আমার! যদি বলো শঙ্করাচার্যের মায়াবাদের পথে বিশ্বাসী। তবে জগতে সবই যদি মায়া, অনিত্য, তো কে কবে কোথায় কার সঙ্গে প্রেম করল সেইটাই এমন নিত্য হয়ে উঠল যে তাকে না রদ করলে বিধাতার সমস্ত খসে যাবে?
কেন আয়াপ্পা জন্মালো কি করে? বিষ্ণুর মোহিনী রূপ দেখে মহাদেবের নাকি বীর্যপাত হয়ে গিয়েছিল। শাস্ত্র পড়ে দেখ না বাবারা আমার, তারপর না হয় ঠ্যাঙা নিয়ে বেরোস। বিষ্ণু কেন ওইরূপ ধারণ করেছিলেন? কারণ নইলে সমুদ্রমন্থন করে যে অমৃত উঠেছিল সব ওই অসুরেরা খেয়ে নিত তো! তবে? না খেয়েই তাদের নিয়ে যা জ্বালা, খেলে কি হত সে ভগবানই জানেন। তাই বিষ্ণু সেই মোহিনীরূপ ধারণ করে ওদের ভুলিয়েছিলেন। এই হল গপ্পো। কেউ প্রশ্ন করতেই পারেন, কেন অপ্সরারা তখন কি করছিল? তাদের এ ভার দিলে হত না? হয় তো হত। কিন্তু আমাদের বিষ্ণুর অমন জেন্ডার বায়াসনেস ছিল না। যা করতে হবে তা করতেই হবে, তাই অত বড় রিস্ক আর নেননি অন্য কাউকে ভার দিয়েটিয়ে। সে কথা থাক, তবে যে কথা বলছিলাম, তো তোরা বাপু এ কোন ফ্রাস্টু খাওয়া সংস্কৃতির ভগীরথ হতে চাইছিস বাপ আমার।
না, এটা আমি বুঝি যে মানুষকে হেনস্থা করার মধ্যে এক বিকৃত সুখ অনেকে পায়। কিন্তু সে তো স্বাস্থ্যকর না। যেমন শুনেছি ল্যাটিন আমেরিকায় নাকি জলাতঙ্ক রোগ হলে তাকে বেঁধে রাখা হত চার্চে শয়তানে ভর করেছে বলে। বেদম অত্যাচার করা হত তাদের উপর। অবশ্যই রোগের আর অজ্ঞতার অত্যাচারে সে বেচারিরা মারা যেত। তারপর তো রেবিস ভাইরাস আবিষ্কার হল, ভ্যাক্সিন আবিষ্কার হল। এখন আর চার্চে কাউকে বাঁধে? মোটেই না। এখন ও কথা শুনলে লোকে হাসে। আসলে আমাদের এখানে কত কিই তো হয়, ওদিকে মহিলাদের নাকি পা দেখা গেলেই সমাজ উচ্ছন্নে চলে যাচ্ছে, ওদিকে কারা যেন সম্পূর্ণ ল্যাংটো হয়ে স্নান করলেও কারোর কিছু হচ্ছেটচ্ছে না। কারণ ওদিকে আধ্যাত্মিক ব্যাপারস্যাপার আছে। তা বাপু আমাদের রামকৃষ্ণ চৈতন্য কি কম দূর এগিয়েছিল সাধনায়? অমন ল্যাংটাব্যাংটা হয়ে তো বাপু রাস্তাঘাটে ঘোরেনি। কি জানি, কখন যে কোন নীতিতে থাকো বাপু বুঝি না।
তবে বাংলায় ওসব বলেছ, বেশ হাসিমজার খোরাক হয়েছ বেশ। এর বেশি কিছু হবে না। মানুষকে কোনো মতেই হেনস্থা করার সামাজিক বিধান রামকৃষ্ণ, মা সারদা, বিবেকানন্দ আমাদের শেখায়নি বাপু। তোমাদের হিঁদুয়ানি তোমাদের মুখ চেয়ে হামাগুড়ি দিচ্ছে। সে সাবালক হয়নি। তাই তোমাদের এত ভয়। আমাদের রামকৃষ্ণ, চৈতন্যের হিন্দুধর্ম মহীরুহ হয়ে সারা বিশ্বকে বলে, যে যেমন আছ, তেমনই থাকো, রামকৃষ্ণের ভাষায় "টেনেটুনে ভাব বদলানোর দরকার নেই"। সবাই আমরা একই সত্যের আচ্ছাদনে আছি। "এ সমস্ত জগত ঈশ্বর দ্বারা আচ্ছাদিত"....উপনিষদ বলেন। গীতা তো আরো এগিয়ে বলেন কারোর বুদ্ধিভেদ জন্মাতে দিতে নেই। যে যেভাবে চললে ভালো থাকে, মানে ভারসাম্য রেখে চলতে পারে, সেভাবেই সে চলুক। তোমাকে কে গায়ে পড়ে বোঝাতে বলেছে! আর বিবেকানন্দ তো দুপাতা পড়েই ভাবছ আহা কি জেনেছি...তা তিনি যে পই পই করে বলে গেলেন ধর্মের সমাজের ব্যাপারে নাকগলানো মোটেই উচিত কাজ না, তা সে কথা কানে ঢোকেনি বুঝি! অবিশ্যি রাজনীতি করা সাধু দেখলে তিনি কি বলতেন সে সহজেই অনুমেয়।
তা তোমাদের বাপু এত গায়ে ফোস্কা কিসের? নিজে সাম্য রেখে না চলতে পারলে অন্যের গায়ে ঢলে পড়ে এমন মানুষ লোকাল ট্রেনে মেলা দেখেছি। ধাক্কা দিয়ে বলতে হয়, ও দাদা ঝিমোচ্ছেন কেন? তা আপনাদেরও কি সেই সমস্যা? ধাক্কার দরকার?