রাধাকান্তবাবুর বহুদিনের অভ্যাস, ঘুম থেকে উঠে কখনও হাতে তালি দিয়ে, কখনও খোল বাজিয়ে, খঞ্জনি বাজিয়ে রামনাম করেন। কখনও "প্রেম মুদিত মন সে কহো রাম রাম রাম, শ্রীরাম রাম রাম"....কখনও "শ্রীরামচন্দ্র কৃপালু ভজ মন".. এইসব ভজন গান। বাড়ির লোক, পাড়াপ্রতিবেশী সকলে তার সরল প্রাণের ভক্তিতে আবিষ্ট হয়ে, সাধু সাধু বলেন।
কিন্তু ইদানীং কয়েক মাস হল তিনি রামনাম গাইলেই বাড়ির সবাই বা পাড়ার কেউ কেউ বলে, "ধীরে ধীরে গান, আসতে আসতে, কেন নিজেকে এই বয়সে মিছিমিছি রাজনীতিতে জড়াবেন।"
রাধাকান্তবাবুর সরল প্রাণে ব্যথা জন্মালো। তিনি কেঁদে রামকে বললেন, প্রভু তুমি আমার একান্ত প্রাণের আরাম, মনের শান্তি, তুমি তো পার্লামেন্টের নও, তুমি তো আড়ম্বরের নও, তুমি আবার আমার একান্তের হও প্রভু।
এখন থেকে প্রতিদিন কাকভোরে রাধাকান্তবাবু উঠে, সাইকেলে করে ধানক্ষেতের দিকে চলে যান। ধানক্ষেতের মাঝখানে একটা বড় পুকুর। তার ধারে বসে হাতের খঞ্জনিটা বাজিয়ে প্রভুর নামগান করেন। পুকুরের ধারের যত বড়বড় গাছ, সে গাছে যত পাখি তার গানের সঙ্গে সুর মেলায়। ক্ষেতের ধারে চরতে আসা পশুরা তার গানে মোহিত হয়ে মাথা দোলায়। পুকুরের জলে গানের তালে তালে ঢেউ খেলে যায়। রাধাকান্তবাবু তন্ময় হয়ে গেয়ে যান.. "শ্রীরামচন্দ্র কৃপালু ভজ মন হরণ ভবভয় হরণম"...
ফেরার সময় প্রার্থনা করেন, হে রাম, আমায় তোমার প্রতি মমতা আর সকলের প্রতি সমতা দাও প্রভু, আমার বুদ্ধিভ্রষ্ট কোরো না, আমার হৃদয়ে তুমি শান্ত হয়ে বোসো, তোমার নামে আমায় এমনই বিভোর করে রাখো।
শান্ত, নীরব রাধাকান্তবাবু বাড়ি ফিরে আসেন। খঞ্জনি রেখে স্নানে যান। দৈনন্দিন কাজে লেগে পড়েন। পাড়ার লোক, বাড়ির লোকে কি একটা যেন অভাব বোধ করে, কিন্তু কেউ মুখ ফুটে কিছু বলে না, কোথায় যেন একটা সুরের অভাব, কোথায় যেন তাল কেটে যাচ্ছে। কিন্তু কেউ কিছু বলে না। সবাই চুপ।