Skip to main content

 

মনের একটা আঁশময় দিক আছে, যা হল চিন্তা। আরেক রসময় দিক আছে, যা হল আবেগ। আঁশ বেশি জড়ালে, বেশি ছড়ালে পেঁচিয়ে, জট পাকিয়ে যাচ্ছেতাই কাণ্ড ঘটে। তেমনই রস বেশি ঘাঁটাঘাঁটি করলে গেঁজিয়ে গিয়ে, ফেনা উঠে, ভুড়ভুড়ি কেটে বিতিকিচ্ছিরি কাণ্ড ঘটিয়ে বসে।

আঁশ চায় নিজের জালে জগৎলীলা ধরতে। মানে চিন্তা করে করে জগতের সব রহস্য বুঝে ফেলতে। জগৎলীলাকে তার আপন মুকুরে ধরতে।

আর রস চায় থিতু হতে। যে ভীষণ রেগে আছে সে ভাবছে একটা চড় মারলে, কি খুন করলে মনটা শান্ত হবে। যে লোভে আছে সে ভাবছে এই পরিমাণ সম্পদ জোগাড় করলে বেশ থিতু হয়ে যায় মনটা। যে প্রেমে আছে সে ভাবছে, প্রেম ছুটেছে যার দিকে তাকে সম্পূর্ণভাবে পেলে মনটা থিতু হয়।

আবেগ অনেকটা জলের মত। ততক্ষণ গড়িয়েই যাবে যতক্ষণ না স্থির হচ্ছে একটা জায়গায় গিয়ে। আবার বাইরে থেকে কিছু একটা ঘটল। তার স্থিতাবস্থা টলল, আবার শুরু হল নতুন যাত্রাপথ।

এই যে এত এত অপরাধ থেকে এত এত গোলাপ-চকোলেটের বিক্রি, সবই এই আবেগ থিতুকরণের উদ্দেশ্যে। কেউ অন্যের ক্ষতি করে। কেউ অন্যের ক্ষতি না করে। সবাই চাইছে আবেগের পাকাবাড়ি। যেখানে সে নিরুপদ্রব কাটাবে। হায় রে হায়। কী মায়া!

=======

এখন কথা হচ্ছে, এই থিতুকরণ কি মন একা একাই করতে পারে? তার আঁশালো দিক আর রসালো দিককে সঙ্গে নিয়ে? না পারে না। এখানে আরেকজনের সাহায্য লাগে। সে হল বুদ্ধি।

বুদ্ধি চাঁদের আলোর মত আঁশের মধ্যে দিয়ে এসে রসকে পথ দেখায়। কখনো শুভ পথ, কখনও অশুভ পথ। নির্ভর করছে বুদ্ধি আর আঁশের অবস্থানের উপর। যে বুদ্ধি বলছে, ওর গলায় খুর চালিয়ে, ওকে এই পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিলেই তুই থিতু হবি, সে অশুভ। শুভ সে-ই, যে আর যাই বলুক, অন্যের ক্ষতি চায় না, এমনকি নিজেরও না।

মনের থিতু হওয়ার দুটো দিক আছে। এক বিভ্রান্তিকে অচল ধ্রুব জেনে তার মধ্যে বিশ্রাম। যা হল বিষাদ। আরেক হল শান্তির মধ্যে, যা হল প্রসন্নতা। তুষ্টি। কিন্তু পথ কে নির্ধারণ করবে? বুদ্ধি।

আমরা কথায় বলি, লোকটার বুদ্ধিশুদ্ধি নেই। অর্থাৎ বুদ্ধি একা থাকলেই হয় না। সঙ্গে একটা শুদ্ধির অনুপান চাই। তবেই মনের আঁশে শুভবুদ্ধি চাঁদের আলোর মত পড়ে অলঙ্কারের মত উজ্জ্বল হবে, আর রসে শান্তিমুক্তোর মধ্যে পূর্ণতা বোধের আনন্দে ডুবে যাবে।

কিন্তু এতই কি সোজা? উঁহু। সঙ্গ করো মন হে। সঙ্গ করো। সাধন ভজন সব মিথ্যা। সঙ্গ করো। বাউল কেঁদে কাঁদাবে। ময়লা যাবে। আলো স্বচ্ছ হবে। "বিদ্যাবধূ জীবনম"। সব হবে। সঙ্গ ছেড়ো না। ডুবে যাবে। বাউল কে? যার হাতে একতারা। মানে যার মন এক তারে বাঁধা। “এক মন যার সেই যেতে পারে”। জল থিতু হবে প্রসন্নতায়। চিত্ততুষ্টিতে। বিষাদে ডুবে কী হবে? ওতো ভ্রান্তি। ওকি তোর আপন? একদম নয়। ও ছল। সরে আয় মন, সঙ্গ কর। সঙ্গ কর। যে প্রসন্ন, যে চিত্ততুষ্টিতে জগত তুষ্টি করেছে তার সঙ্গ কর। সেই সার। বাকি সব অসার!