Skip to main content


জানলাম নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী ভেঙ্কি রামকৃষ্ণন রয়্যাল সোসাইটিরর কর্ণধার হয়েছেন। গর্বিত হলাম। অবশ্যই তা ভারতের সাথে নাড়ীর যোগ থাকার জন্য। কিন্তু পরক্ষণেই মনটা দমে গেল। আচ্ছা আমরা আমাদের দেশে থেকে পারি না কেন?


মানুষের একটা খুব গভীর, আত্মিক স্বভাব হল অন্বেষণ। সে প্রশ্ন করে। সে জানতে চায়। বুঝতে চায়। এতে সে নিজেকে সম্পূর্ণ অনুভব করে। এতে তার গৌরব। সারাটা বিশ্ব ওলট-পালট করে ফেলছে তার এই জানার শক্তিতে, আবিস্কৃত তথ্যতে। আমরা স্বীকার করছি, Knowledge is Power. তবু কোথাও যেন কিছু একটা গোলমাল হচ্ছে।


বিজ্ঞানের এখন খুব স্থুল দৃষ্টিতে দুটো শাখা। বিশুদ্ধ বিজ্ঞান আর ফলিত বিজ্ঞান। আচ্ছা অন্যভাবে বলি, Science and Technology. যদিও পুরোপুরি এক না এ দুটো। তবু কোথাও ভাবগত মিল আছে।


প্রথমটাকে যদি মস্তিস্ক বলি, পরেরটাকে বলি হাত-পা-চোখ-নাক-মুখ ইত্যাদি। বিজ্ঞানের গবেষণা আমাদের শরীরের মস্তিস্কের মত। তাতে নতুন আলো আসে, দিশা আসে, উদ্ভাবন আসে। তার ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া কখনো হাত পা অবধি ছড়ায় আবার কখনো তা শুধুমাত্র জ্ঞানের আলো। আমাদের দেশে এই মস্তিস্কের দিকে ঝোঁকটা বড় কম দেখেছি। আমরা কি শুধুই হাত পা হয়েই থাকব। আর ভাড়া করে অন্যের মস্তিস্ক দিয়ে কাজ চালাব? কতদিন আর এভাবে চলবে?


যদিও জানি বিশুদ্ধ বিজ্ঞান গবেষণায় আমাদের দেশে অনেক বাধা। দুর্নীতি থেকে শুরু করে অপর্যাপ্ত গবেষণাগার - অনেক সমস্যা। জানি আছে। কিন্তু উৎসাহ? সেও কি আশানুরূপ আছে? মনে হয় নেই। আমাদের এখানে প্রথম সারির ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে এমন টেকনোলজিমুখী প্রবণতা যে, কেউ বিশুদ্ধ বিজ্ঞান গবেষণায় যেতে চাইলে তা প্রথম পাতার খবর হয়ে দাঁড়ায়! কেন?


তার একটা বড় কারণ আমাদের সেই মানসিকতাটার অভাব। সরকার থেকে উদ্যোগের অভাব। স্কুলগুলোতে সেই মানসিকতা গঠনকারী শিক্ষকের নিদর্শন ও অনুপ্রেরণা- দুইয়েরই অভাব। তার চেয়ে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হলে ভবিষ্যৎ অনেক বেশি নিরাপদ। "দেশের গবেষণার হালের কথা ভেবে তো আর আমি জীবন সংশয় করতে পারি না!"


ঠিক কথা। অথচ দেখুন সেই গেরুয়াধারী সন্ন্যাসীকে, যিনি তাঁর গুরুভাইদের চিঠি লিখছেন, একটা গ্লোব, কয়েকটা রাসায়নিক পদার্থ ইত্যাদি নিয়ে গ্রামে গ্রামে যাও। তাদের প্রাথমিক বিজ্ঞানটা শেখাও।


ভাবা যায়! তিনি বিবেকানন্দ। তিনি সন্ন্যাসী! বলছেন না গীতা-বেদান্ত পড়াও। বলছেন বিজ্ঞান পড়াও আগে। সাধে কি টাটা তাঁর বিজ্ঞানকেন্দ্রের ভার এই সন্ন্যাসীর হাতে সঁপে যেতে চেয়েছিলেন! তাছাড়া জগদীশ বাবু, সি ভি রমন, সত্যেন বোস ইত্যাদি মানুষদের কেন আমাদের আদর্শ বানানো গেল না স্কুল কলেজে, খুব আশ্চর্য লাগে। রবীন্দ্রনাথ, যিনি আজ গীতবিতান আর সঞ্চয়িতাতেই সীমাবদ্ধ - সে ভদ্রলোক জগদীশবাবুর বিজ্ঞান গবেষণায় কি ভাবে এগিয়ে এসেছিলেন তা ইতিহাস সাক্ষী। এ ছাড়াও বিজ্ঞানের প্রসারে ওঁর চিন্তাভাবনা পুরো একটা আলাদা প্রবন্ধের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।


সেদিন বিখ্যাত বিজ্ঞানী নার্লিকার মহাশয়ের (যাঁর মহাকাশ তত্ত্ব - The Hoyle–Narlikar theory of gravity, 'বিগ ব্যাং' তত্ত্বের বিপরীতে খুব শক্তিশালী তত্ত্ব হিসাবে বিশ্বে স্বীকৃত আজ) একটা সাক্ষাৎকার শুনছিলাম। পুরো সাক্ষাৎকারটার শেষে, সেই বর্ষীয়ান বিজ্ঞানীর গলাতেও শুনলাম একই ক্ষোভ - বিজ্ঞানচর্চাটা সেই মত এগোচ্ছে না ভারতে।


আমার মনে হয় প্রাথমিকভাবে এ কাজ স্কুল থেকেই শুরু করতে হবে। কৌতুহলের আনন্দ, বিশুদ্ধ বিজ্ঞানের খোঁজ নিয়ে আরো প্রকল্প স্কুলগুলোতে আনতে হবে। শিক্ষা যে একটা ভয়ংকর প্রতিযোগিতার চেয়ে অনেক বড় কিছু, সে পরিবেশ গড়তে হবে। তাতে স্কুলের সাথে সাথে বাবা-মায়ের উপরও কিছুটা দায়িত্ব বর্তায়। আর কিছু না, বিজ্ঞান মানেই যে ডাক্তার আর ইঞ্জিনিয়ার না, তার যে নিজেরও একটা মহিমাময় অস্তিত্ব আছে - অন্তত এই ধারণাটা তাদের মধ্যে যেন গেঁথে দেওয়া যেতে পারে।


তারপর রইল, ঝুঁকিপূর্ণ জীবনের কথা। তা আছে বৈকি। সব পথের পথপ্রদর্শকেরই সে ঝুঁকি থাকে। তা বলে কি ভেড়ার পালের নিশ্চিত জীবনই বাঁচতে হবে? আরে ভাই, মরতে মরতে বেঁচে থাকার চেয়ে, বাঁচতে বাঁচতে মরাই ভাল নাকি!