Skip to main content

 

জি পাল অ্যাণ্ড সানস জুয়েলার্স। দুপুরবেলা। ভিড় নেই দেখে পারমিতার মনটা দমে গেল। একটু বসে যাবে ভেবেছিল। আজ অর্ণব তাড়াতাড়ি ফিরে এসেছে কাজ থেকে। কী করবে এত তাড়াতাড়ি বাড়ি গিয়ে?

=======

“অনেকদিন পর দিদি….দাদা ভালো আছেন? মাসিমা?....”

পারমিতা উত্তর দিল। দোকানের চারদিকে চেনা মুখ খুঁজতে খুঁজতে। ইচ্ছা নেই কারোর সঙ্গে দেখা হোক। বসল।

“আংটি নেব। পৈতে, মৌসুমির ছেলের”।

মৌসুমি ননদ। মৌসুমিকে নিয়ে গল্প শুরু হল। গল্প ব্যবসার কৌশল। শুধু দোকানে না। সংসারের সব জায়গায়।

একটা বাজে ঢেকুর উঠল। অম্বল হল। বগল থেকে জল গড়িয়ে নামছে। এসিতেও। অস্বস্তিটা বাড়বে। অর্ণব আজ অসময়ে ফিরেছে। তাড়াতাড়ি।

=====

মানুষের যতটা শরীর ততটা সোজা। ততটায় সে জন্তু। খিদে, তেষ্টা, ব্যথা, সুখ, কাম। সব বাঁধা নিয়মে। সুখ মানে আরাম, না আহ্লাদ?

যেখান থেকে চিন্তা সেখান থেকে মানুষ শুরু। অমানুষও একজাতের মানুষ। অর্ণব অমানুষ না। আলাদা। ভীষণ আলাদা। যতটা আলাদা হলে পাশাপাশি বাঁচতে অসুবিধা হয়, তার থেকেও বেশি, যতটা আলাদা হলে বাঁচাটা অসম্ভব লাগে।

=======

জল খেল। একটা আইসক্রিম আনিয়ে দিল দোকানি। মৌসুমির ছেলের হাতের আঙুলটা বড় কথা নয়। মৌসুমির চোখের চাহনিটা বড় কথা। চাহনিকে তুষ্ট করতে হবে। শাশুড়ি ভয় পায় মৌসুমিকে। মৌসুমিও ভীষণ আলাদা শাশুড়ির থেকে। মৃত শ্বশুরের মত। সব ভয় অনুগামী হতে বলে না, বাধ্য হতেও বলে। মৌসুমি বাধ্য করে। হাত পা বাঁধা। শ্বশুর অনুগামী করে রেখেছিল।

=======

কয়েকটা আংটির ছবি হোয়াটসঅ্যাপে পাঠালো। শাশুড়ি দেখবে। পারমিতার ঘাড়টা ব্যথা করছে। শাশুড়ি বেছে কয়েকটা পাঠালো। সঙ্গে লিখল, ইচ্ছা হলে দেরি করে ফিরো। আমি সামলে নেব।

=====

শাশুড়ি আর পারমিতা শরীর নিয়ে কথা বলেছে। জন্তর কতটা দৌড় মানুষের মধ্যে ভেবেছে। সুখ মানে আরাম না আহ্লাদ? শাশুড়ি বলেছে সোনার শেকল। পারমিতা বলেছে মরীচিকা। মরীচিকা শুধু ভ্রান্তই করে না। বেঁধেও রাখে মরুভূমিতে। অর্ণব একা একা বাঁচতে পারে না। পারমিতাও পারে না। তার শাশুড়ি অঞ্জলিও পারে না। মৌসুমিও পারে না। এই না পারাটাই মরীচিকা। সুখটা না।

======

আংটিটা নিয়ে বাইরে এলো। বাজারে ভিড় নেই। একটা বেজে দশ। একটা অটো নিলে দশ মিনিটে অর্ণবের সামনে। হয় তো হাফপ্যান্ট পরে, খাটে আধশোয়া, মোবাইলে রিল দেখছে। কিম্বা ঘুমাচ্ছে।

পারমিতা অটো না নিয়ে স্টেশানের দিকে এলো। স্টেশানের উল্টোদিক তার বাড়ি। কিন্তু এদিকেও যাওয়া যায়। গেলেই যাওয়া যায়।

স্টেশানে বসে ফোনটা বার করল। হোয়াটসঅ্যাপে লিখল, “মা, আমি জুঁইয়ের বাড়ি ঘুরে আসি। তুমি সামলে নেবে?”

======

শাশুড়ি ভয় পাবে। তবু উত্তর দেবে, যাও। খুশী হবে না। কিন্তু স্বস্তি পাবে। হালকা লাগবে। কাউকে স্বাধীনতা দিলে, নিজের পরাধীনতার হাঁসফাঁসটা কমে।

অর্ণব মেসেজ করল। “আইসক্রিম এনো”।

======

পারমিতা অটোতে বসে। ছাড়বে। ব্যাগে চাকদার টিকিট কাটা। জুঁইয়ের বাড়ির। ফেলেনি। এরকম না যাওয়া টিকিট অনেক জমে আছে।

বাড়ির সামনে এসে নামল। দরজা খোলা। শাশুড়ি দাঁড়িয়ে। বলল, তুমি বাবুর সঙ্গে দেখা করেই বাইরে এসো। জয়তীর মায়ের শরীর খুব খারাপ। প্রেশার বেড়ে মাথাটা ঘুরে পড়ে গিয়েছিল রাস্তায়।

=====

টোটোতে বসে দুজনে পাশাপাশি। অঞ্জলি এখন কথা বলবে না। পারমিতাও না। সঙ্কোচ হবে। তারা পালিয়ে এসেছে। কাজটা ঠিক না। কিন্তু উচিত। যে কাজ ঠিক না, কিন্তু উচিত, সে কাজ নিয়ে কথা বলা যায় না। বলতে নেই।

পারমিতা বলল, মা…

কী….

জল নিয়েছ?

তেষ্টা জলের না। একবার “মা” ডাকার। কৃতজ্ঞতার।

অঞ্জলি বলল, আছে।

পারমিতা শুনতে পেল না। চিন্তাগুলো বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে ভিজছে। যে আকাশে মেঘ নেই সে আকাশের রঙ নীল কি?