Skip to main content
 
 
     আমি তোমায় ছোটোবেলায় কোনোদিন জিজ্ঞাসা করেছি, কেমন আছ? তোমার যখন জ্বরব্যাধি হত আমি কি খুব উদ্বিগ্ন হতাম? আমি কি কোনোদিন তোমায় ভাত বেড়ে দিতাম? জল এগিয়ে দিয়ে স্কুলে গেছি কখনও? কাচা জামাকাপড়, যার অর্ধেকের বেশি আমার বাবার ভাইয়ের, ছাদে মেলে দিতে গেছি তোমার বারবার করে বলার আগে? তোমার খাওয়া শেষ না হওয়া অবধি বসে থেকেছি তোমার পাশে? কারেন্ট চলে গেলে আমার-ভাইয়ের নাম লেখা হাতপাখাটায় হাওয়া করেছি তোমায় কোনোদিন, তোমার খাওয়ার সময় অথবা তোমার ঘুমের সময়? কোথায় বেড়াতে যেতে চাও এবার? - আমরা জিজ্ঞাসা করেছি তোমায় একবারও? আমরা, মানে আমি-বাবা জোঁড়াসাকো বা রবীন্দ্রসদন পঁচিশে বৈশাখে যাওয়ার সময় একবারও জানতে চেয়েছি, তুমিও যেতে চাও কিনা? ফিরে এসে তোমার অভিমানভরা মুখকে বা লালচোখকে তাচ্ছিল্য করেছি কি? দেখেও না দেখার ভান করিনি? কোনোদিন সকালে নিজে উঠে চা করতে ইচ্ছা করেছে আমার? কোনোদিন বলেছি, থাক, আজ রেঁধো না, আজ বাইরে থেকে খাবার আনিয়ে নিই? কোনো বিষয়ে তোমার মতামত ছাপিয়ে গেছে অনেকগুলো পুরুষ কণ্ঠস্বর?
 
      আসলে বাবারা কোনোদিন ভুল হয় না। আসলে সব সময় ভুল হয়, বোকার মত কথা বলে, বোকার মত ইচ্ছা করে মায়েরা। আমরা ছেলেরা জানি এসব কথা ছোটো থেকেই। আমরা জানি মায়েদের জরুরী চিকিৎসাকেও অপেক্ষা করতে হয় আমাদের পরীক্ষা শেষ হওয়া পর্যন্ত। বাবাদের তক্ষুনি সব লাগে, চাই কি পরীক্ষা স্কিপ করার প্রস্তাবও আসে। মায়েরা প্রচণ্ড দরকারি এলেবেলে। মায়েরা ভীষণ কাজের প্রদীপের দৈত্যের মত, যারা কাজের শেষেই মিলিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি রাখে। মায়েরা নির্দিষ্ট আকার-আকৃতিহীন বাতাসের মত অস্তিত্ব একটা। তার নির্দিষ্ট কিছুই থাকতে নেই। না সময়, না ইচ্ছা, না অভিমান, না খিদে, না পরিচয়, না অধিকার। সবটাই নির্ভর করে আমাদের উপর। কারণ মায়েরা আসলেই বড় দুর্বল। বোকার মত ভালোবাসা-সম্বল উদবাস্তু।
      তারপর ছেলেরা বড় হয়। পাঁচিল ডিঙিয়ে মাথা তোলে। কেউ কেউ পাঁচিল ভেঙে বাইরে আনে মাকে। কেউ কেউ পাঁচিল তোলে আরো কয়েক হাত উঁচু, বাবার চাইতে বড় বাবা হয় আরো। মা হয়ে যায় আরো বায়বীয়, আরও নিরাকার, আরও অনির্দিষ্ট কিছু।
      আমার যেদিন পাঁচিল ছাড়িয়ে মাথা উঠল, সেদিন তুমি নেই। অলক্ষ্যে, অযত্নে কানে ভেসে আসা তোমার অনাদৃত অবাস্তবায়িত ইচ্ছাগুলো মাথার ভেতর বাসা বেঁধে আছে অনেকদিন। নিরুপায় আমি। আমাতে তোমাতে না শোধা রইল অনেক ঋণ। অনেক অনেক অনেক ঋণ।