Skip to main content
 
সবার বাড়ির একটা পিছনের দরজা থাকে। সত্যি সত্যি দরজা না। তবু মিথ্যাও না। সে দরজাটার কথা সে ছাড়া আর কেউ জানে না। যখন তখন সে দরজাটা দিয়ে সে বেরিয়ে যায়। বাইরে কি আছে? ঘুটঘুটে অন্ধকার। শুধু নিজেকে দেখা যায় এতটাই মাত্র আলো। সে আলো তার পিছু পিছু পিছনের দরজাটা দিয়ে এসে কয়েক হাত মাটি আলোকিত করে রেখেছে। সামনে শুধুই অন্ধকার। সে অন্ধকার থেকে কখনও সমুদ্রের গর্জন আসে। নোনা হাওয়া ভেসে আসে। ঝোড়ো হাওয়ায় ঝাউবনের মর্মরধ্বনি শোনা যায়। দেখা যায় না যদিও। যদি সে ভাবে যাই, যাওয়া যায় না। ওই আলো টেনে রাখে। মায়ায় জড়িয়ে রাখে। খানিক পরে বলে, এবার ওঠো, ফিরতে হবে যে। সে উঠতে চায়, তবু চায় না। অন্ধকারে কারা যেন আবছায়ায় এসে দাঁড়িয়েছে। যারা ওপারের এখন। তাদের ছুঁতে পারা যায় না। ডাকা যায় না। যাওয়াও যায় না। শুধু বোঝা যায় তারা খুব কাছেই দাঁড়িয়েছে তার, মাঝে দুর্ভেদ্য অন্ধকার। এমনি করেই চলে যদ্দিন না হঠাৎ করে দরজাটা দিয়ে সে নিজে হারিয়ে যায়।
      হ্যাঁ, হারিয়ে যায়। তার সেই পিছনের দরজাটা দিয়ে হারিয়ে যায়। অন্ধকারে মিশে যায়। তার সমস্ত পড়ে থাকে সে আলোকিত সংসারে, শুধু সে নিজে ছাড়া। তখন আরেকজন কেউ সেই পিছনের দরজাটার খবর পায়। গুটিগুটি পায়ে এসে বসে। অন্ধকারে তাকে খোঁজে যে হারিয়ে গেল খানিক আগে। যেতে চায়, যেতে পারে না। তারও পিছু টেনে আছে, সে আলোর মায়া। সেও সমুদ্রের গর্জন শোনে, ঝাউবনের মর্মর শোনে। মনে মনে ভাবে আমিও যাব। একদিন নিশ্চয় যাব।
      আজ দুপুরে সেই অন্ধকারের আবছায়ায় মা এসে দাঁড়ালেন। আমার তখন তন্দ্রা। গান শুনছি, "এসো গো একা ঘরে, একারও সাথী....তোমারে গোপন ব্যথা জানব গোপনে".... গানের স্বর্গীয় মাধুর্য, সে অন্ধকারের মানুষ, সমুদ্রের গর্জন, ঝাউবনের মর্মর মিশে সব একাকার। তন্দ্রা ভাঙল। আমার সিক্ত চোখ মেঘলা আকাশে, জানলার গ্রিলের ফাঁক, অবকাশ। গানটা যিনি গেয়ে পাঠিয়েছেন তাঁর কাছে আমার ঋণের শেষ নেই। সে মাধুর্য আমার বর্ণনাতীত। শুধু কৃতজ্ঞ রইলাম নিজের ভাগ্যের কাছে। Srilekhaদির কাছে। প্রণাম দিদিভাই।