Skip to main content

বুদ্ধ বললেন, আত্মা নেই। দুঃখই সত্য। বেদান্ত বললেন, আত্মা চৈতন্যময়। আনন্দই সত্য।

দুঃখ আর আনন্দ সামনা সামনি এসে দাঁড়ালো। সামনাসামনি দাঁড়ালেন যেন বুদ্ধ আর রামকৃষ্ণ। বুদ্ধ বললেন, নেই। রামকৃষ্ণ বললেন, সেও হয়। মা শূন্যও তো হয়। বুদ্ধ বললেন, সংসারে দুঃখই সত্য। রামকৃষ্ণ বললেন, দুঃখ সত্য। তবে দুঃখই সত্য নয়। আনন্দও আছে। তুমি যাকে বলো নির্বাণ। বোধে বোধস্বরূপকে অনুভব করা। সে অস্তি-নাস্তির পার।

চাঁদ উঠল। সামনে গঙ্গা বয়ে যাচ্ছে। সময় স্থির। চারদিকে কেউ নেই। হঠাৎ এক কান্না শুনে দুজনেই ফিরে তাকালেন। এক মৃত শিশুকে নিয়ে মা আসছেন। শিশুকে রাখলেন দুজনের পায়ের কাছে। বললেন, তোমরা এর প্রাণ ফিরে এনে দিতে পারো? দাও, দাও… ওগো যে করে হোক ফিরে দাও.. ওরা চিতা সাজাচ্ছে… এখনই আমার কোল থেকে কেড়ে নিয়ে গিয়ে আগুনে দেবে… আমার কোল শূন্য হবে… ওগো এই কি ওর পোড়ার বয়েস….

বুদ্ধ স্থির চোখে তাকিয়ে। করুণায় কাতর মুখের পেশীগুলো। রামকৃষ্ণের চোখের কোলে জল। বুদ্ধ বললেন, বাড়ি বাড়ি যাও…. এমন এক বাড়ি থেকে এক মুঠো সরষে এনে দাও, যে বাড়িতে মৃত্যু ঢোকেনি আজও… যাও….

মহিলা চলে গেলেন শিশুকে বুকে জড়িয়ে। বুদ্ধ আর রামকৃষ্ণ গঙ্গার দিকে তাকিয়ে বসে। বুদ্ধ বললেন, তুমি পারো এই মা'কে বোঝাতে ওর শিশু মারা যায়নি? আত্মা অবিনশ্বর… পারো বোঝাতে?

রামকৃষ্ণ চুপ করে বসে।

মা ফিরে এলো। উদভ্রান্ত।

কোনো বাড়িতে একমুঠো সরষে পেলাম না প্রভু…. তবে নিয়ে যাক ওরা… দিক ওকে আগুনে… পুড়ুক…

দাহ হল শেষ। রাতের আকাশে যুগান্তরের তারা। দুই মহাপ্রাণ বসে। হঠাৎ শুনলেন কার পায়ের আওয়াজ। ফিরে তাকালেন। সেই মা এসেছে। শোকতপ্ত। স্থির। বসল, পায়ের কাছে। জিজ্ঞাসা করল, সব কি হল শেষ?

বুদ্ধ রইলেন নিরুত্তর। রামকৃষ্ণ কিছু বলতে যাচ্ছিলেন। একজন অন্ধকারে ছায়ার মত এসে দাঁড়ালেন। শোকস্তব্ধ মা ফিরে তাকালেন। জিজ্ঞাসা করলেন, কে?

অন্ধকার থেকে উত্তর এলো, আমি মা। শত শত পুত্র হারানো শোক বুকে নিয়ে যুগযুগান্ত ধরে আছি, ধরিত্রীর মত। আমার বুকে এসো।

শোকাকুলা মা জিজ্ঞাসা করল, ফিরে পাব ছেলেকে আমার?

স্থিরকণ্ঠে মা বললেন, সান্ত্বনা পাবে। শান্ত হবে। একদিন এই শোক মহাবিশ্বের সামনে দাঁড় করাবে তোমায়। জানবে, তুমি আর তোমার সন্তানের যোগ চিরকালের। আমাদের সবার সঙ্গে সবাই আছি চিরটাকাল। হাঁটছি জন্ম-মৃত্যুর ভিতর দিয়ে আলোছায়া রাস্তায় অনন্তকাল ধরে।

তুমি কি মন্দিরের মা?

উত্তর এলো। আমি শুধুই মা। মায়ের মন্দির আঁতুড়ঘর থেকে শ্মশান অবধি। নইলে এ মহাকাশ মহাকালে লয় হয়ে যেত কবে…হয়নি শুধু আমি আছি বলে… আমি মা। এসো।