সংসারে প্রকৃত সুখী সেই, যে সুখে থাকার চেষ্টাই করে না। ভাবেই না কতটা জমল, কতটা গেল।
কাল সারারাত বৃষ্টি হচ্ছিল। বাইরের গাছপালাগুলোতে জলের শব্দে মনটা বারবার এই বহুদিনের অভ্যাসে চেনা সংসারটাকে কিছুটা দূর থেকে দেখছিল। ঘুমন্ত সংসার। কিছুটা স্বপ্ন, কিছুটা আশা, কিছুটা সুখ, কিছুটা যন্ত্রণা বুকে নিয়ে, কি লড়াই করে সারা জীবন কাটিয়ে দেয় মানুষ। সত্যিই মানুষের মহিমা বোধহয় তার এই অসম্ভব সয়ে যাওয়ার ক্ষমতায়। ঈশ্বরের মহিমা বিশ্বাস হয় মানুষের মহিমা দেখে।
একটা ঘটনা মনে পড়ল। মায়ের মুখে শুনেছিলাম। মায়ের মা, মানে আমার দিদার বিয়ে হয় মধ্যপ্রদেশের একটা গ্রামে। প্রবাসী বাঙালী পরিবার। দাদু পেশায় ডাক্তার ছিলেন। দাদুর বাবাও খুব খ্যাতনামা ডাক্তার ছিলেন।
একদিন দুপুরে, প্রচণ্ড রোদ। দাদুর বাবা রুগী দেখে এসে বাইরের ঘরে বিশ্রাম করছেন। এমন সময় একজন বৃদ্ধ মানুষ ঝাঁকা মাথায় করে, বেগুন বিক্রী করতে আসেন। ছোট ছোট শুকনো কয়েকটা বেগুন। দাদুর বাবা, দিদাকে ডেকে পাঠান, বলেন বেগুনগুলো ঘরে নিয়ে যেতে।
দিদা ঘোমটার আড়ালে বেগুনগুলোর অবস্থা দেখে বলেন, বাবা ঘরে সব্জী যথেষ্ট আছে। আর না নিলেও চলবে।
তাঁর শ্বশুর মশায় মৃদু ধমক দিয়ে বলেন, তুমি ভিতরে নিয়ে যাও বউমা বেগুনগুলো। তাই হয়।
এর কিছুক্ষণ পর দাদুর বাবা, দিদাকে ডেকে বলেন, কি জানো বউমা, তোমাদের রান্না ঘরে সব্জীর অভাব নেই আমি জানি। কিন্তু ওই বুড়ো মানুষটা এই রোদে যে বেগুনগুলো বিক্রী করতে বেরিয়েছে, এই গ্রামে তা কেউ কিনবে? কেউ নেবে না মা। তোমার না লাগে তুমি গরু বাছুরকে খাইয়ে দাও। তুমি বলতে পারো ওঁকে কটা টাকা এমনি দিলেই হত। হত, কিন্তু তাতে তো ওর মানটা থাকত না মা। তাই নয় কি?
এ রকম সাধারণ মানুষের জীবনে অসাধারণ ঘটনার সম্মুখীন হয়েছি বহুবার। বিশ্বাস ফিরে পেয়েছি। বিস্মিত হয়েছি মানুষের সহ্য করার, ভুলে যাওয়ার ক্ষমতা দেখে। তাই বোধহয় পৃথিবীটা এখনো বাসযোগ্য আছে।
সৌরভ ভট্টাচার্য
8 April 2015