Skip to main content

তখন সদ্য টুইটারে অ্যাকাউন্ট খুলেছি। কলেজ পাশ করেছি সদ্য, মনে বেশ একটা দেশের কাজ করার ইচ্ছা। হঠাৎ রবীন্দ্রনাথ টুইট করলেন যারা যারা শান্তিনেকতনে ব্রহ্মচর্যাশ্রমে যোগ দিতে চাও, নীচের লিঙ্কে ক্লিক করে ফর্ম ভরে ফেলো। 

    আমি ভীষণ কনফিউজড। কারণ ওদিকে বিবেকানন্দ ব্লগে লিখেছেন যে উনিও দেশের কাজের জন্য কিছু জোয়ানমরদ চাইছেন। তখন ব্লগ বেশ পপুলার ছিল। তবে উনি অনলাইনে ফর্ম দেবেন না, বেলুড় মঠের বাইরের কাউণ্টার থেকে দেওয়া হবে। 

    এবার আমি কোনদিকে যাই। ব্রহ্মানন্দজীকে ফোন করলাম, রামকৃষ্ণদেব তো ফোন ব্যবহার করেন না, কিন্তু ওনার সঙ্গে যদি একবার পরামর্শ করে নেওয়া যেত। মা সারদাও বাইরে। মানে নেটওয়ার্ক কভারেজের বাইরে। ব্রহ্মানন্দজী বললেন, ঠাকুর আজকাল আর সমাধি থেকে নামছেন না। নরেন্দ্র নামটা নিয়ে ওনার নাকি এমন কনফিউশান তৈরি হয়েছে যে, যা নাকি মা কালী আর ব্রহ্ম নিয়েও হয়নি। মাঝে মাঝেই আধা সমাধি থেকে বলে উঠছেন, "ওরে সব নরেন্দ্রই নরেন্দ্র হলেও, সব নরেন্দ্র আমার নরেন না"....

    এর কি মানে কেউ ঠাহর করতে পারেছেন না। এমনকি রামমোহন, বিদ্যাসাগরকেও ডাকা হয়েছিল। তারাও কেউ কিছু বলতে পারলেন না। শুধু শোনা যায় নাস্ত্রাদুমাস নাকি কি এক রহস্যময় হাসি হেসেছিলেন এই কথা শুনে। 

    আমি কিছুই বুঝলাম না। কিন্তু এদিকে তো দেশের কাজ না করলেই নয়। তখন হঠাৎ দেখি ফেসবুকে দাদা সাহেব ফালকে তার সিনেমার জন্য মড়া খুঁজছেন। মানে মরা মানুষের জীবন্ত অভিনয় করার জন্য। নাম দিয়ে দিলুম। ডাক এলো। নিজের অভিনয় দেখে নিজেরই চোখে জল এসেছিল। মুম্বাইতে দশরাত শুটিং সেরে ফিরতাম। ফিরতে পারছিলাম না। কেন? সে নিজের চরিত্রের স্খলনের কথা কি আর বলি। ওই মধুবালা...আহা হৃৎপিণ্ড ঝাঁঝরা হয়ে গেল গো! কি রূপ! কি লাবণ্য। ব্যস, পড়লাম ফাঁদে। প্রায়ই ওর বাড়ি যাই, চা খাই। কিশোর আসে মাঝে মাঝে। কথা হয়। আরো কত কি হয়!

    জীবনটা ভেসেই যাচ্ছিল বুঝলেন। হঠাৎ করে একদিন দেখলাম একটা ফেসবুকের গ্রুপে শঙ্করাচার্য বলে কে একটা ছেলে 'মোহমুদগর' বলে দারুণ একটা কবিতা লিখেছে। আহা কি ভাব! কি তার বৈরাগ্যমূলক কথা। সেই কবিতা দেখে ভতৃহরি বলে আরেক যুবক 'বৈরাগ্যশতকম' বলে আরেকটা কবিতা লিখেছে। ব্যস, আমার মোহ ভেঙে গেল। চলে এলাম। তখন মুম্বাই থেকে কলকাতা জাহাজ চলত। সেই জাহাজে একজন কিশোরের সঙ্গে আলাপ, রামপ্রসাদ সেন। কি উজ্জ্বল চোখ!

    আহা, কি গানের গলা। তার সঙ্গে গল্প করতে করতে ফিরছি, জাহাজ হালিশহর পার হচ্ছে, হঠাৎ দেখি রাসমণিদি মেসেজ করলেন, হালিশহরে কিছু জমি পাওয়া যাচ্ছে, নিলে এখনই নিয়ে নাও। রামপ্রসাদ সেনও বললেন, নিয়ে নিন দাদা, জায়গার জল হাওয়া ভালো, আমিও এখান থেকেই আমার ইউটিউব চ্যানেলে গান আপলোড করি। ব্যস, থেকে গেলাম। 

    যা হোক, অনেকদিনের জমানো কথা লিখে ফেললাম, কেউ যেন কিছু মনে করবেন না। আসলে কাল থেকেই আমার মাথাটা কিঞ্চিৎ দবদবাচ্ছে। আর মাথা দবদবালে আমি নিখাদ সত্য কথা ছাড়া কিছু লিখতেই পারি না যে। জয়গুরু।