Skip to main content
আম্বেদকর

"Cultivation of mind should be the ultimate aim of human existence."


মননে অমৃত শুধু ওঠে না, বিষও ওঠে। কিন্তু কথাটা গরলেরও না, অমৃতেরও না। কথাটা মন্থনের। আম্বেদকরের জন্মদিন আজ। সকাল থেকে বাঙলা ভাষায় যেক'টা পোস্ট দেখলাম, তার বেশিরভাগই বিদ্রুপাত্মক আর ব্যঙ্গাত্মক। হাসিই পেল, করূণাও হল। স্বামীজি আর নেতাজী (যাদের বেশিরভাগ বাঙালী, বাঙালী হিসাবে দেখতেই পছন্দ করে, ভারতীয় হিসাবে নয়) দুই মহাপুরুষই বলেছেন, আমাদের সাবধান করেছেন - তোমাদের মধ্যে একটা অদ্ভুত রোগ ঢুকেছে, যে রোগের আশু চিকিৎসার ব্যবস্থা না হলে সমূলে বিনষ্ট হবার আশঙ্কা। রোগটা কি? - সব কিছু হেসে উড়িয়ে দেওয়া। যে কোনো ভারী ভাবকে অন্তঃস্থ করার অনিচ্ছা। ক্রমশ সে অনিচ্ছা অভ্যেসে পরিণত হয়। 

আজ সে অনিচ্ছার বহুলাংশে আমাদের সামনে। আমাদের বেশিরভাগেরই এখন অনেক কিছুই 'মাথার উপর দিয়ে বেরিয়ে যায়'। মাথাটা নীচু করতে করতে এমন জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে, কোনো উঁচু কথা বলতে, আলোচনা করতে আমাদের স্বজাতীয়দের সাথে দ্বিধা হয়, 'খিল্লি' করবে না তো! অহো আত্মশ্রদ্ধার মান আমাদের! তাই বাঙালীর কিছু সহজ হিসাব - মহাত্মা গান্ধী দেশভাগ করে, নেহেরুকে রাজা করে সব্বোনাশ করলে; নেতাজী বন্দুক নিয়ে এসে ঢাঁই ঢাঁই করে গুলি চালিয়ে সব সাহেব তাড়িয়ে দিলেন - সেকি ভীষণ যুদ্ধু! বাবা রে বাবা!... আম্বেদকর সারা জীবনে শুধু কাস্ট রিজারভেশান করে দেশের ভবিষ্যতে হ্যারিকেন ধরিয়ে দিলেন...
আমরা simplification-এ বিশ্বাসী। জৈন দর্শনে দুটো কথা আছে - একান্তবাদী ও অনেকান্তবাদী। প্রথমটার অর্থ হল কোনো কিছুকে একটা সিদ্ধান্তে এনে দেখা। পরেরটার অর্থ হল কোনো কিছুকে অনেকগুলো দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে দেখা। বলা বাহুল্য, আমরা অতশত ভাবাভাবিতে নেই, পড়াশোনাতে তো নেই-ই... কেন করব? আমাদের পূর্বপুরুষেরা যা বলে গেছেন, বিশ্বাস করে গেছেন, তাতে আস্থা নেই বুঝি? বই পড়ে দেখার কি দরকার? 
তাই কিছু কথা বলার ইচ্ছা হল। বেশ কিছু বছর আগে একটা প্রাইভেট নিউজ চ্যানেল বিভিন্ন ভারতীয় ব্যক্তিত্বের উপর একটা আলোচনা করেন, আর একটা ভোটের আয়োজন করা হয়, গান্ধী উত্তর ভারতবর্ষে কে সর্বোচ্চ প্রাসঙ্গিক ও প্রভাবশীল ভারতীয় হতে পারে। ফলাফল এসেছিল - আম্বেদকর। কেন? তার অনেক কারণ আছে। সে সবের দীর্ঘতালিকা ফেসবুক দেওয়াল সহ্য করতে পারবে না, বেজায় দীর্ঘ হবে। তাই মাত্র কয়েকটা দিক বলবার চেষ্টা করছি যা আমায় ভাবায়।


১) প্রতিবাদী ও প্রতিষেধক চিন্তক
-------------------------------- 
আম্বেদকর বৌদ্ধধর্ম নিয়েছিলেন। ঠিক যে কারণে গৌতম একদিন বুদ্ধত্বের দিকে এগিয়েছিলেন ঠিক সেই কারণে। বিদ্রোহ করেছিলেন - যত ক্ষুদ্রতা, অমানবিকতা, শোষণ, পীড়ন হিন্দুধর্মের নামে হয়ে আসছে, বলা যায় ব্রাহ্মণ্য ধর্মের (কারণ শুধু দর্শন দিয়ে ধর্ম হয় না। গীতা, বেদ-উপনিষদের ধর্ম আর অনুশীলিত হিন্দুধর্মের মধ্যে বিস্তর ফারাক) নামে হয়ে আসছে তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন। ভারতবর্ষের মানুষ বিচারশীল, যুক্তিবাদী, আরো বেশি মানবিক হোক চেয়েছিলেন। 
বার্ট্রাণ্ড রাসেলের 'Principles of social reconstruction' বইয়ের প্রস্তাবিত মতের বিরোধিতা করতে গিয়ে বলছেন, বলের আবশ্যকতা আছে। কিন্তু যদি তা গঠনমূলক কাজের জন্য হয় তবে তা শক্তি কিন্তু যদি তা ধ্বংসাত্মক কাজের জন্য হয় তবে সেই বল-ই ভায়োলেন্স। 
আরেক জায়গায় বলছেন, Buckle এর মতে ইতিহাস হল ভূগোল আর পদার্থবিদ্যার সমন্বয় - এ যেমন অর্ধসত্য, তেমনই মার্ক্সের মতে - ইতিহাস অর্থবলের গতিপথের সাক্ষ্য, এও অর্ধসত্য। এরা দু'জনেই যে ভুলটা করলেন, তা হল মানুষকে কোনো স্থান না দেওয়া। তার মতে অকৃত্রিমতা আর মেধা - চরিত্রের এ দুটো মহৎগুণ তো নিশ্চই, কিন্তু যথেষ্ট নয়। এর সাথে তার থাকতে হবে সামাজিক দায়বদ্ধতা, সচেতনতা, তাকে সমাজের 'scavenger' বা ঝাড়ুদার হতেই হবে। 
বলছেন, শুধুমাত্র অসন্তোষ থেকে কোনো বিপ্লব জন্মাতে পারে না। শুধু সেটুকু হলে তা নঞর্থক। দরকার সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকারবোধ, ন্যায়ের উপর আস্থা, বিশ্বাস। নইলে শুধুই কোলাহল, শুধুই বিতণ্ডা। 
জীবনের শেষদিনগুলোতে বুদ্ধ আর তার শিক্ষাকে একটা বই (যা উনি দেখে যেতে পারেননি) আকারে লেখেন। যা পয়েন্ট করে করে লেখেন, অসামান্য বিশ্লেষণে বুদ্ধ ও তাঁর শিক্ষার সামাজিক ও রীতিনীতির বিচারে।


২) জাতিভেদ ও সংরক্ষণ
------------------------- 
প্রথম কথা উনিই বোধহয় প্রথম যিনি এই জাতিভেদ প্রথার সমূল বিনাশ চেয়েছিলেন। পারেননি সে আর আলাদা করে বলতে হবে না যদি বৃহৎ ভারতবর্ষের প্রেক্ষাপটে দেখি। উনি বলেছিলেন, তোমরা উঁচুজাতেরা শিক্ষা পাচ্ছ, আলো পাচ্ছ, কিন্তু আপামর বঞ্চিত শ্রেণীরা বঞ্চিতই থেকে যাচ্ছে। বড়জোর বিধবা-বিবাহ, বাল্যবিবাহ ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা, সংস্কারের চেষ্টা চলছে, কিন্তু কখনওই মূল যে জাতিভেদ প্রথা তার বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলছেন না। তার প্রধান কারণ হিসাবে উনি বলেন, এক, সাধু-সন্ত-মহাত্মাদের জাতিভেদপ্রথাকে স্বীকার করা (এখনও রামকৃষ্ণ মিশন, অনুকূল ঠাকুর ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে এই প্রথা চলে আসছে); দ্বিতীয়, আমাদের শাস্ত্র'র সমর্থন ও শিক্ষা। তিনি বলেন, এই নিষ্ঠুর পদ্ধতি শ্রমের ভেদ করছে না, করছে শ্রমকারীর ভেদ, এ লজ্জা!, এ অন্যায়!, এ অমানবিক! একে উচ্ছেদ করো। আধুনিক শিক্ষার মাধ্যমে এর সমূল বিনাশ হোক, মানুষ শাস্ত্রের ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে এসে যুক্তি দিয়ে ভাবুক, চিন্তা করুক।
বলা বাহুল্য, সে হয়ে পারেনি। কিঞ্চিৎ কোথাও কোথাও হয়েছে। তার একটা বড় কারণ, বহু আধুনিক ধর্মগুরুদের এর সমর্থন আশ্চর্য সব যুক্তিতে। তার সব চাইতে বড় যুক্তি হল - এত দিনের প্রাচীন পদ্ধতি সব ভুল?! 
চিন্তা যেখানে প্রাচীনত্বের ভারে এগোয়, সেখানে 'অ্যান্থ্রোপলজি' কি করে বোঝাবে endogamy (অন্তর্জাত বিবাহ) আর exogamy (আন্তর্জাত বিবাহ) -এর পরিণাম কি কি? অন্তর্জাত বিবাহের পরিণামই সতী ইত্যাদি? ক'টা মানবিক কথা শোনাতে রামমোহন আর বিদ্যাসাগরকে জীবনপাত করতে হয়েছিল... এ কি খুব সোজা কাজ?
বারবার বলতেন, কোনো ধর্মের আর তার অনুগামীর মূল্যায়ন শুধুমাত্র তার সামাজিক মূল্যবোধ আর নৈতিক মূল্যবোধের উপর হওয়া উচিৎ। বাকি সব অর্থহীন।
আর সংরক্ষণের ব্যাপারে উনি যা বলেছিলেন তার সাথে আমাদের কোটা সিস্টেমের বিস্তর ফারাক। উনি চেয়েছিলেন দশ বছর এই প্রথাটা থাকুক (নেটে এর বহু প্রমাণ পাওয়া যায়, আর সর্বোপরি ১৭ খণ্ড আম্বেদকর রচনাবলী আর প্রধান লেখাগুলোর সংকলনও বিনামূল্যে ডাউনলোড করা যায়), তারপর তা দীর্ঘায়িত করা হবে কি হবে না বিবেচনা করা যাবে। ভাল করে ওনার লেখাগুলো পড়লে সে যুক্তিগুলো স্পষ্ট বোঝা যায়, কিন্তু ওই যে বললেন উনি, শুধু অসন্তোষে কোনো পরিবর্তন হয় না, অধ্যবসায় আর বিশ্বাস তো লাগবেই না?

৩) হিন্দী ভাষা আর ভারতের একতা
----------------------------------- 
বেশ কিছুদিন আগে হিন্দীভাষাকে নিয়ে লিখতে গিয়ে বিস্তর গাল খেয়েছিলাম (যদিও আশাও তাই ছিল)। সে নিয়ে নতুন করে কিছু বলব না আর। শুধু কয়েকটা কথা বলে ওনার উদ্ধৃতি দেব, অনুগ্রহ করে যদি পড়েন। সারাটা দেশ বাঁধা আছে একটা কালচারের সূত্রে। খুব ঠিক। কিন্তু United India-র যে স্বপ্ন উনি দেখেছিলেন, তাতে বলেছিলেন সারাটা দেশে একটা প্রধান ভাষা হওয়া দরকার ছিল। যাকে ঘিরে একটা দেশ দাঁড়াত। ইংরাজীতে যতক্ষণ না প্রতিটা মানুষকে যোগ্য করা যায় ততক্ষণ হিন্দীই সঠিক নির্বাচন। এটা মেনে নিলে ভারত একটা সম্মিলিত রাষ্ট্র, না হলে সদাবিবাদমান রাজ্যের একটা সমষ্টি।


"This danger is of course inherent in the creation of linguistic States. 

There is equal danger in not having linguistic States. The former danger a 
wise and firm statesman can avert. But the dangers of a mixed State are 
greater and beyond the control of a statesman however eminent.
How can this danger be met ? The only way I can think of meeting the 
danger is to provide in the Constitution that the regional language shall not be the official language of the State. The official language of the State shall be Hindi and until India becomes fit for this purpose English. Will Indians accept this ? If they do not, linguistic States may easily become a peril.
One language can unite people. Two languages are sure to divide people. This is an inexorable law. Culture is conserved by language. Since Indians wish to unite and develop a common culture it is the bounden duty of all Indians to own up Hindi as their language.
Any Indian who does not accept this proposal as part and parcel of a linguistic State has no right to be an Indian. He may be a hundred per cent Maharashtrian, a hundred per cent Tamil or a hundred per cent Gujarathi,
but he cannot be an Indian in the real sense of the word except in a 
geographical sense. 
If my suggestion is not accepted India will then cease to be India. It will be a collection of different nationalities engaged in rivalries and wars against one another.
God seems to have laid a heavy curse on India and Indians, saying ‘Ye 
Indians shall always remain divided and yet shall always be slaves!’....."