Skip to main content

দড়িটায় ফাঁসও লাগানো হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু পেটটায় এমন মোচড় দিল আর গাছে ওঠা হল না। অথচ এই পূর্ণিমার চাঁদ দেখতে দেখতে হরেনের টুক করে ঝুলে পড়ার কথা ছিল।

শালা ভল্টুর চপ….

একটা ঝোপে গিয়ে বসল। যা হওয়ার হল। সমস্যা বউকে নিয়ে। বাপের বাড়ি গেলে আর ফেরে না। মাসের পর মাস কাটিয়ে দেয়। এদিকে বয়েস তো হয়েছে নাকি…. নাই নাই করে সাড়ে পঞ্চান্ন তো হল…. আজ যেই বলেছে সামনের অমাবস্যাটা কাটিয়ে যাব…. তখনই মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে হরেন… এই বৈবাহিক জীবন আর রাখা যাবে না…. সন্ন্যাস নেওয়ার ক্ষমতা থাকলে নিত…. কিন্তু সে আর এ জন্মে হবে না… আজও পরমার চুড়ির ঝংকার বুকে আকুপাকু ডাক তোলে… কাছে এলে নিজেকে কিশোর মনে হয়…. যাক গে….

হয়ে যাওয়ার পর শরীরটা ছেড়ে দিয়েছে। ক্লান্ত লাগছে। বসন্তের বাতাস। ফুরফুরে। ঘুম আসছে যে!

দড়ি ফাঁস হয়ে দুলছে। তাতে কটা জোনাকি বসে। আহা! কি রূপ। আকাশে চাঁদ। ফাঁসের দড়িতে জোনাকি। যে দড়িতে পেট না মোচড় দিলে এতক্ষণ সে অতীত।

মাথায় কে বিলি কাটে?

ওমা, একি! এ সে শাশুড়ি মা। যিনি পা ফসকে উঠানে পড়ে এক্কেবারে বৈকুন্ঠধামে গিয়ে সেঁধিয়েছিলেন।

মা আপনি….

আহা, উঠছ কেন হরেন…. বলি কি কিত্তি করছিলে গো…. মেয়েটা আমার মাছ ছাড়া থাকতে পারে না…. এত বড় সব্বনাশ করছিলে! কেন গো?

হরেনের অভিমান হল। বলল, আর আমি? আমার মরাটা কিছু নয় না?

বালাই ষাট! মরবে কেন? আমি পায়ের নীচে ওই লগিটা চেপে ধরতাম না। কিন্তু পেটের একি অবস্থা বাবা, এতটুকু চপ সহ্য হচ্ছে না! তোমার বাবা তো এই বয়সে গোটা পাঁঠা খেয়ে নিতো গো… ছি ছি….

সে আপনি যাই বলুন… আমি কেন মরতে যাচ্ছিলাম জিজ্ঞাসা করবেন না একবার?

সে আর জেনে কি করব বলো…. যে দুটো আলুর চপ হজম করতে পারে না… তার বাঁচার যে কোনো অধিকার নেই সেই কথাও আমায় বুঝিয়ে দিতে হবে!

হরেন থতমত খেয়ে চুপ করে গেল। খানিক ঝিম মেরে থাকল। তারপর বলল, কি সুন্দর জোনাকি… ফাঁসের দড়িতে…. দেখছেন মা?

শাশুড়ি হাওয়ায় মিশে মাঠে শুয়ে বলল, সত্যিই বাবা…. এতদিন সংসার করলুম এমন জোনাকির বাহার চোখে পড়ল না…. রান্নাঘর আর গোয়াল সামলে জীবন কাটল…. সত্যিই তাই, তুমি ফাঁসটা না পাকালে অমন গোল করে মালা হয়ে বসত ওরা বলো?

হরেনের বুকে-পেটে হঠাৎ তুবড়ির মত সুখের ফোয়ারা খুলে গেল। বলল, মা, কাল থেকে সব গাছে একটা করে ফাঁস লাগাবো, জোনাকিগুলো এমন করে মালা হয়ে বসবে… আপনি আসবেন?

হরেনের শাশুড়ি উদাস হয়ে তাকালো হরেনের চোখের দিকে। বলল, সংসারে এমন অকাজে কেউ একটিবারও ডাকেনি আমায় জানো… ডেকেছে মানেই জেনেছি কাজ আছে…. তুমিও আমার মেয়েটাকে কখনও ডেকেছ…. এমন করে?

হরেনের মাথায় যেন রঙের গামলা উলটে গেল। এদ্দিন রঙ দিয়ে ছবি এঁকেছে খালি। রঙ এলোমেলো করে খেলেনি তো কোনোদিন। রঙকে জিজ্ঞাসাই করেনি সে কি হতে চায়…. সব যেন তার মর্জির দাস…. সবাইকে দাস করার ফিকিরে নিজেই হয়েছে জন্মের দাস….

হরেন বলল, মা… কাল আপনি মেয়েকে ডেকে আনুন… আমি ততক্ষণে সারাদিন আরো কতগুলো ফাঁস বানাই… গাছে গাছে লাগাই… তারপরে একসঙ্গে আমি আর ও জোনাকির মালা দেখব… আপনিও.. দেখবেন… একটু আড়ালে.. কেমন?

শাশুড়ি হেসে বলল। আড়ালে থাকতে আপত্তি নেই। সংসারে যে এত কিছু দেখার আছে না মরলে জানতাম না…. তাই ভাবছি… তুমি বানাও… আমি ওকে ডেকে আনি….

শাশুড়ি মিলিয়ে যাচ্ছিল….

হরেন বলল, মা দাঁড়ান। ভোর অবধি থাকুন। এই ফাঁসের দড়িতে শিশির জমবে। আমার মন বলছে সেই শিশিরে সূর্যের আলো পড়ে মুক্তোর মালা হবে…. এটা পুবদিক তো… আসুন… আমার মন বলছে হবে…. দেখি আমরা…

শাশুড়ি বসে বলল, আমারও মন বলছে….