Skip to main content
গীতায় শ্রীকৃষ্ণ বললেন, বাপু তোমায় নিজেকে নিজের best friend হতে হবে।
      শুনেই খটকা লাগল। তবে কি আমি নিজে নিজের বন্ধু হতে পারিনি? না সত্যিই পারিনি। শরীরকে যে ভাবে ইচ্ছামত কাজে লাগানো যেতে পারে, মনকে সেভাবে পারে কি?
- না পারে না
- কেন পারে না?
- কারণ মনেরও একটা মন আছে, তাই পারে না।
- মনেরও মন?!
- হ্যাঁ, মনেরও মন। তোমার অতীতের সব চিন্তা, অনুভুতি, অভিজ্ঞতা, ভয়, বাসনা, ক্ষোভ ইত্যাদি সব মিলে একটা মনের মন তৈরি করেছে। তাই তুমি যা বলবে, তাই সে শুনবে কেন? তুমি হাসতে বললেই সে হাসবে, ভাবতে বললেই সে ভাববে, পড়তে বললেই পড়বে - সেটি হবে না। আর সে না করলেই তুমি মুখ হাঁড়ি করে ঘুরে বেড়াবে, আমার মনটা পাজি, হতচ্ছাড়া ইত্যাদি বলে দুষবে।
- হ্যাঁ, এ তো হামেশাই হয়। তবে উপায়?
- উপায়টাই তো ভগবান বললেন, মনের বন্ধু হও।
- সে কিরকম?
- ধরো তোমার ইচ্ছা হল কারোর সাথে বন্ধুত্ব করবে। তখন তুমি কি করো? তার কথা শোনো, তাকে বোঝার চেষ্টা করো, নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করো। সর্বোপরি তার সাথে সময় কাটানোর চেষ্টা করো, তাই তো?
- হ্যাঁ।
- ঠিক তেমনই মনের সাথে কথা বলো, তার কথা শোনো, নিজে বোঝো, তাকেও বোঝাও, অবশ্যই বন্ধুর মত। ধৈর্য্য ধরো। কারণ এ তো আর পাড়ার বা স্কুলের বন্ধু নয়, যে চাইলেই এড়িয়ে যেতে পারো। এ তোমার ভিতরের বন্ধু। তোমার সাথে রাত-দিন তার ওঠা, বসা, শোয়া। সে তোমায় যতটা বোঝে, এ সংসারে কারোর সাধ্য নেই তোমায় ততখানি গভীরে গিয়ে বোঝে। তাই শ্রীকৃষ্ণ গীতাতে বললেন যে নিজের বন্ধু হও।
যদি না হতে পার?
    ইম্যা
নুয়েল কান্টের মতে আমাদের মনের মধ্যেই যথেষ্ট বোধশক্তি নিহিত। যাকে উনি self-enlightenment বলছেন। আমরা তার যথোপযুক্ত ব্যবহার না করে করে নিজেদের সম্ভাবনাগুলো নষ্ট করে ফেলছি। নিজে নিজের বন্ধু হতে না চাইলে সে শক্তির অপচয়ই হতে থাকবে যে সারা জীবন! কি ভীষণ ক্ষতি!
     কান্ট আরো বলছেন। বলেছেন মানে, রীতিমত ধমকেছেন! বলেছেন - তা বাপু হবে নাই বা কেন? তোমার ভাল-মন্দের বিচারের ভার তো তুমি বাইরের লোকের হাতে দিয়ে বসে আছো। তোমার পুরুত আছে, গুরু আছে, মহাপুরুষ আছে, বই আছে। তারা তোমার হয়ে সব ভেবে দিচ্ছে। তুমি শুধু অধীন, দীন হয়ে ভাবছ, “যা হোক আমায় তো আর কষ্ট করে ভাবতে হচ্ছে না।”
ফলে তোমার দুর্বলতারও অন্ত নেই আর তোমার অভিভাবকেরও অন্ত নেই। কান্ট একটা দুর্দান্ত উদাহরণ দিচ্ছেন। বলছেন, তুমি যেন পালিত পশু। আর তোমার সমাজের তথাকথিত অভিভাবকেরা তোমার মালিক। তারা তোমায় সারাদিন ভয় দেখাচ্ছেন, “ওদিকে যেও না জুজু আছে, এ দিকে ফিরো না অমুক হবে”। আর তুমি ভয়ে জবুথবু হয়ে বসে আছো। নানারকম ভয়ের শিকল তোমার পায়ে। অথচ কেউ বলছেন না, “বাবা নিজের পায়ে দাঁড়াবার চেষ্টা করো। প্রথমে কয়েকবার পড়ে যাবে যদিও, তাতে কিছু হবে না। কিন্তু সারাজীবন অন্যের ঘাড়ে চড়ে বেড়নো ভাল না।“
    কান্ট বলছেন, তা হলে আমরা নিজেরা নিজেদের বন্ধু হয়ে উঠতে পারি না কেন? কারণ সাহসের অভাব, পাছে ভুল হয়! আর তার সাথে আছে অলসতা - আবার ভাবতে হবে!
ভগবান তাই গীতার উক্ত শ্লোকের শেষার্ধে বলছেন, ওহে বন্ধু, নিজেই নিজে উদ্ধার করো।
আগে নিজে নিজের বন্ধু হও। তখন তুমি সবকিছুকেই অনুভব করতে পারবে নিজের সুস্থ উদার চিত্তের কেন্দ্রে। কোনো অন্ধকার মন্দিরের কোণে নয়, অনুষ্ঠানে নয়, অন্ধ অনুকরণেও নয়।
এতেই তোমার মুক্তি। দুর্বলতা, অলসতা থেকেই অজ্ঞানতা। আর অজ্ঞানতা মানেই বাঁধন। সাহস করে খুলেই দেখো না, কি হয়!