সমীরণ নন্দী, মানে আমাদের সমীরণদা, আমার কাছে শান্তিনিকেতনের গৌরবজ্বল দিনগুলোর কয়েক খণ্ডের জীবন্ত ভাষ্য। এবারেও পঁচিশে বৈশাখ উপলক্ষ্যে বন্ধুরা সবাই মিলে হইহই করে শান্তিনিকেতন পৌঁছালাম। শান্তিনিকেতন গেলে আমাদের প্রধান আকর্ষণই সমীরণদা। বয়েসে আমার থেকে বছর কুড়ি ছোটো। হ্যাঁ, ঠিকই পড়েছেন। বাইরে যেটা দেখা যায়, ওটা নিতান্ত ছলনা। আমার যে সব বন্ধুরা ছবি তোলে, তারা ওঁকে গুরু বলে মানে। আমি আমার প্রাণের অত্যন্ত কাছের এক সুহৃদ বলে মানি।
বহুদিন আগে, সমীরণদার সঙ্গে আমাদের একবার বেড়াতে যাওয়া হল বেশ কিছুটা দূরে। সমীরণদা গল্প করেন। সেকি গল্প রে বাবা! আমাদের গল্পে কারা আসেন? পাড়ার অমুকদা, পরিবারের লোকজন, মাষ্টার, ডাক্তার, দুধওয়ালা, পেপারওয়ালা, মুদিওয়ালা এইসব। আর এনার গল্পে?! হা ঈশ্বর! সুনীতি পাঠক, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, অমর্ত্য সেন, শিবনারায়ণ রায়, শান্তিদেব ঘোষ, শঙ্খ ঘোষ, রবিশঙ্কর…..আরো আরো কত কিংবদন্তী সব মানুষেরা। তাঁদের অনেকের ছবি ওঁর ক্যামেরা বন্দী। শুনতাম আর ভাবতাম এ সব গল্প ওঁর সঙ্গে সঙ্গে চলে যাবে? সে হয়? কয়েকবার অনুরোধ করেছিলাম, এ সব কথা লিখে রাখলে হয় না? তো হল বুঝলেন। এইবার বইমেলায় বেরোলো। সেই সব গল্প। ঠিক যেন ওঁর মুখে আবার শুনছি। “হারানো ফ্রেম”। পড়ে দেখতে পারেন। ছবিতে সব ডিটেলস পেয়ে যাবেন।
শান্তিনিকেতনে রতনপল্লীতে বসে গল্প। কিছুটা দূরে ইলামবাজারের জঙ্গলে ঘুরতে ঘুরতে গল্প। সেখানে আদিবাসী স্কুল। সেখানের শিক্ষক। নাম না জানা গাছ। একদমই অকিঞ্চিৎকর পোকা। সব নিয়েই প্রবল উৎসাহ আমার এই “দাদা” বলে ডাকা পক্ককেশী তরুণ মানুষটার। কী করে যে সময় গেল! তারপর আর কী? বাড়ি চলে এলাম। মন খারাপ লাগে ফিরে এসে। বয়েসটা আবার চড় চড় করে বাড়তে থাকে। আবার মুখিয়ে থাকি, আবার যাই কবে!
দাদা, আপনি ভালো থাকুন। এমনিই থাকুন। আপনার অনেক ছবি আমাদের কাছে আছে। বেছে বেছে কটা দিলাম। ভুলত্রুটি নিজগুণে মার্জনা করে দেবেন। আর বইটার জন্য আমাদের সবার তরফ থেকে প্রচুর ধন্যবাদ। ইচ্ছা ছিল বইটা নিয়ে একটা ছবি তুলে এ লেখাটা লিখব, ভুলে গেলাম। আপনার না হোক, আমার তো বয়েস হচ্ছে, স্মৃতিভ্রষ্ট হই মাঝে মাঝে। প্রণাম জানবেন। আর অনেক অনেক ভালোবাসা।