যখন ছোটো ছিলাম তখন শুনতাম সত্যজিৎ-ঋত্বিক-মৃণাল সেন এরা নাকি দেশের দারিদ্রকে উপাদান করে সিনেমা বানিয়ে বিদেশ থেকে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
আজ আবার সেই একই কথা, অমর্ত্য সেন তো বিদেশে থাকেন, দেশের অর্থনীতিতে কি করেছেন ইত্যাদি।
পার্থক্যটা হচ্ছে সেদিন মূর্খামি, অজ্ঞতা, ক্ষুদ্রবুদ্ধি, ভ্রষ্টবুদ্ধি - এরা এমন সেলিব্রেটেড ছিল না। এখন অমুক বোকার মত কথা বলছে থেকে ভয়ংকর হচ্ছে 'এমন কথা শোনানো যায়', এই পরিবেশ তৈরি হওয়া। তা নিয়ে ঢেউ তোলা যায়।
যখন অভিভাবকেরা এসে বলেন, "না চাবকালে আমার ছেলে বা মেয়ে পড়ে না, আপনি মেরে হাড়গোড় ভেঙে দিলেও আমি কিছু বলব না", এবং এ কথা সেই বাচ্চাগুলোর সামনেই বলেন, তখন বুঝি বর্বর শিক্ষাদান পদ্ধতি ছাড়া সভ্য শিক্ষাদান পদ্ধতিতে আমাদের আস্থা এখনও জন্মায়নি। বাচ্চাগুলোও সুপথে, সুস্থমতে বোঝানোকে দুর্বল ভেবে মারের ও বকার অপেক্ষায় থাকে সঠিক শিক্ষাদানের উপায় হিসাবে। কারণ সে নিজেকে সেভাবেই চিনেছে। রবীন্দ্রনাথ যদিও একশো বছর আগে মানুষকে তার মনুষ্যত্বের গৌরব ও সম্মানের চোখে দেখে মানুষ হওয়ার সভ্যপথে শিক্ষাদান পদ্ধতি শুরু করেছিলেন, কিন্তু আমাদের তাতে আস্থা জন্মায়নি। তাই যার যত আস্ফালন, যার যত চোখ রাঙানি, যার যত মাস্তানি তাতে আমার তত বিশ্বাস। সেই আমার চোখে আত্মবিশ্বাসী, আমার কান্ডারী হওয়ার যোগ্য। আমরা আদতে বন্যপশু, আমাদের তাই শিক্ষক না, আমাদের ট্রেনার দরকার।
শান্তিনিকেতন যে শিক্ষার আলো, ও যে শিক্ষাদানের পদ্ধতি আনার প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, মুষ্টিমেয় কয়েকজনকে বাদ দিলে সারা দেশের কথা দূরে থাকুক, বাংলাকেই তা প্রভাবিত করে উঠতে পারেনি। রবীন্দ্রনাথ বুঝতে পারেননি, বা মেনে নিতে পারেননি যাই হোক, আমাদের আদতে চাবুক আর অলৌকিকত্বের ককটেল দরকার, বাকি যা তাতে আমাদের ভরসা নেই।