বিবেকানন্দকে প্রথম দেখি
প্রাইমারি স্কুলে পড়তে
সেই যে বস্তির লোকটা
কি একটা দুর্ঘটনায় মারা গেল
তার বুড়ি মা আমাদের বাড়িতে ভিক্ষা করতে এলো
ওর পিছনে পিছনে এসে দাঁড়ালো বিবেকানন্দ
কিছু বলছিল না
শুধু বড় বড় চোখে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল
তারপর দেখেছি কলেজে পড়তে
অনেকে যাকে নষ্ট মেয়ে বলে
সেই মেয়ের বাড়িতে
সে ভাত বেড়ে দিচ্ছে
বিবেকানন্দ দাওয়ায় বসে
তার সাথে গল্প করতে করতে ভাত খাচ্ছে
আলুসিদ্ধ আর ডাল দিয়ে
এরপর থেকে বিবেকানন্দকে প্রায়ই দেখি
ট্রেনে বাসে রাস্তায় গঙ্গার ঘাটে
কারোর পাশে বসে ভিক্ষা দিতে বলছে
কোনো বৃদ্ধার ভারি ব্যাগটা হাত থেকে নিয়ে নিতে বলছে
কোনো ক্ষুধার্ত মানুষের হাত থেকে বিস্কুটের প্যাকেটটা কিনে নিতে বলছে
রাস্তায় ছড়িয়ে যাওয়া ভিখারির পয়সাগুলো উবু হয়ে বসে কুড়াচ্ছে
জানলার দিকে তাকিয়ে বসে থাকা
ফ্যালফ্যাল চোখ অথর্ব কোনো মানুষের
মশারি টাঙিয়ে দিচ্ছে
দোকানের কোনে বসে
একা একা ভাত খাওয়া মানুষটার পাশে বসে বলছে
আরেকটু ভাত নেবে?
আমি অনেক মন্দিরের বাইরে বিবেকানন্দকে দেখেছি
পায়চারী করতে
ওদের সঙ্গে বসে গল্প করতে দেখেছি
যাদের মন্দিরে ঢুকতে নেই
ঢুকলে নোংরা হয় নাকি
এমনকি আমি মন্দিরের আরাত্রিকের সময়ও বিবেকানন্দকে দেখেছি
বাইরে তাকিয়ে থাকতে
কাদের যেন অপেক্ষায়
কাদের যেন খুঁজছেন
আমি আমার একলা ঘরে
আমার শাস্ত্রীয় বইয়ের পাতা মুড়ে দেওয়া
বিবেকানন্দর হাত দেখেছি
সে বলেছে,
ভালোবাসা পড়তে শেখো
কিন্তু বিশ্বাস করুন
কোনো দেবালয়ে, বক্তৃতা মঞ্চে
মুর্তিতে, পথশোভায়, শাস্ত্র আলোচনায়
আমি ওনাকে দেখিনি আজ অবধি
খুঁজে পাইনি
এমনকি আজকে জন্মদিনে যখন খুঁজতে গেছি
শাস্ত্রের বাগানে
না পেয়ে ফিরে আসছি
একটা বাচ্চা লাল সোয়েটার পরে এসে বলল
আমার সঙ্গে খেলবে একটু?
দেখি তার পিছনে দাঁড়িয়ে
আমার বিবেকানন্দ
দুষ্টু হেসে বলছে, চ খেলবি
এই আমার বিবেকানন্দ
যাকে প্রণাম করতে গেলেই
বুকে জড়িয়ে নিয়ে একটা কথাই বলে
মরার আগে যেন নিজেকে নিয়ে কোনো ক্ষোভ না থাকে দেখিস
তাকেই বলে সাধনা
এমনভাবে বাঁচিস