Skip to main content
রাত দুটো। গঙ্গাতীর। কালীপূজার রাত। শুনতে পেলাম আরতির আওয়াজ। মন ছুটল শব্দভেদী বাণের মত। 

শিব মন্দিরে সাধু। আরতি করছে আর গুনগুন করে গাইছে - জয় শিব ওমকারা....

-এত রাতে কি করো সাধু?

- প্রভুর সেবা
- রোজ?
- হ্যাঁ। রোজ। চারটের মধ্যে প্রভুর শৃঙ্গার দিতে হয় যে!
-তা বলে মাঝরাতে জাগাবে ভগবানকে?
- সে জেগেই থাকে। ঘুমাই আমরা। আমাদের ঘুমেও যে আমাদের মধ্যে জেগে থাকে সেই ভগবান।
- তুমি চেনো ভগবানকে?
- ওই যে আমার গুরু (ইঙ্গিত করল এক মর্মর মূর্তির দিকে। মন্দির লাগোয়া)। খুব ত্যাগী ছিলেন। প্রতিদিনের উপায় প্রতিদিনেই লাগাতেন, সঞ্চয় করতেন না। যা কিছু অতিরিক্ত তা বিলিয়ে দিতেন। বলতেন আজকের ভাবনাই শুধু আজকের জন্য যথেষ্ট, কালকের জন্য ভাবো কেন? 
সেই চেনালো ওকে (শিবলিঙ্গের দিকে আঙুল দেখালো সাধু)। ওই তো সব করায়। আমার তোমার ক্ষমতা কই? ওর শক্তিতেই জগত চলে। 
সাধু দেখাল ভগবান। আমি দেখলাম ঈষৎ ক্ষয়ে যাওয়া পাথর। সাদা পাথর। 
ওদিকে খানিক দূরে গাড়ি করে এসেছে একদল যুবক। কারণবারিতে পরমানন্দের উল্লাস। এদিকে মাঝবয়েসী এক মানুষ সব ছেড়েছুড়ে এক পাথরে পেয়েছে সব জিজ্ঞাসার উত্তর। 
আকাশ ভরতি তারা। পাশে গঙ্গা। মাঝখানে আমি - ক্ষুদ্র চেতনা। উত্তর খুঁজছি অবিশ্বাসে। 
মন তোমার বিশ্বাস নেই। ভীতুর মত যুক্তির খুঁটি খোঁজ। আসলে বিরোধীপক্ষ না থাকলেই যে আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগি। বিরোধীর অস্তিত্বেই আমার অস্তিত্ব। ছায়ার মত অস্তিত্ব আমার, আলোর মত না। 
সাধুকে জিজ্ঞাসা করলাম, মন্দিরে বসি? না আপনি জপে বসবেন? 
সাধু হাসল। বলল, এ মন্দির কি আমার বাবু? বসুন। সেবা করুন প্রভুর। আমিও করি। 
সাধু চলে গেল। বসল সাধনায়। মন বাচ্চা ছেলের মত কঁকিয়ে উঠল। যেও না সাধু.... আমায় শিখিয়ে যাও ডাকে কি করে... কি করে এই পাথরের খণ্ডে অখণ্ডকে দেখো......
প্রশ্নগুলো মিলিয়ে গেল। কান্নাটা থেকে গেলো। বাড়ি ফিরছি। রাত তিনটে। রাস্তায় এখানে সেখানে কারণসুধার দৌরাত্ম্য। আধাঘুমন্ত শহর। 
তবু কে যেন যে জেগে আছে, সাধু বলল না? ঘুমের মধ্যেও যে জেগে থাকে সেই সে? 
সব ভুল, সব অপরাধ, সব অক্ষমতা তার সেই জেগে থাকায় মিলিয়ে নেবে না সে আমার? সব শেষে আমার কান্নাটাই কি বুকে জাগবে না তার? যদি না জাগে, তবে সে শুধুই শিলা সাধু.... ভগবান না...
মন প্রসন্ন হল। তবে কি সে শুনল?