Skip to main content

দাঁড়ান। ও কি! অত জোরে জোরে পা ফেলছেন কেন? এত জোরে জোরে কেউ শ্বাস নেয়? আরে অত তড়বড় করে কি বলে ফেলছেন কিছু খেয়াল আছে?
      বুঝেছি আপনার অসুবিধাটা কোথায়। সকাল থেকে একটাও অ্যালপ্রাজোলাম পড়েনি বুঝি?
     কি বললেন? অ্যালপ্রাজোলাম খান না? মানে! এ কি মামাবাড়ির আবদার নাকি, হ্যাঁ! কে বলেছে আপনাকে অ্যালপ্রাজোলাম না খেয়ে ঘর থেকে বেরোতে? কি মনে করেন নিজেকে? আর ঘর থেকে বেরোনোর কথাই বা বলছি কেন, ঘরেই বা নয় কেন?  
     মশায় শুনুন, খেয়ে দেখুন। ভাল লাগবে। প্রথমে প্রথমে কিচ্ছুটি টের পাবেন না। একটু পর হাত পা ঝিমঝিম করবে, মাথাটা হাল্কা হাল্কা লাগবে। চারিদিকটা এক নিরবিচ্ছিন্ন শান্তিতে ভরে আসবে। তবে না?
     এবারে আপনি খবরের কাগজটা খুলে বসুন, দেখুন কোনো অসুবিধা হচ্ছে? ওই ধর্ষণের খবরটা পড়ুন। কেমন লাগছে? আর রাগ লাগছে, গা চিড়বিড় করছে? করছে না তো। হু হু ভায়া সাধে কি আর বলছিলাম। আচ্ছা এবার খেলার পাতাটা খুলুন। একই রকম লাগছে না? ওই ধর্ষণের খবর, রাজনীতির খবর, সারদা, রোজ ভ্যালী, আলুচাষীর আত্মহত্যা, যাদবপুর সব এক রকম না? আর ওই রাস্তায় ধর্মান্ধদের মুক্তচিন্তাকারীদের হত্যার ঘটনাটা.. আরে ধুর ধর্মান্ধ আবার কি? সবাই ভালই দেখে মশায়। কে যে কি দেখে এটাই বলা শক্ত। তবে তাতে আপনার আমার কি? আমরা তো অ্যালপ্রাজোলামের ভক্ত, কি বলেন... হি হি... হা হা হা... কি রকম হাসি পাচ্ছে না?
আচ্ছা এবার টিভিটা চালান। হ্যাঁ হ্যাঁ খবরের চ্যানেলগুলোই চালান না! ওই শুনুন, আলুচাষীর বউটার কান্না। ওটা? ওটা একটা বাচ্চাকে ডুবিয়ে মেরেছিল, তার মায়ের কান্না। ছাড়ুন। আপনাকে আরেকটা জিনিস দেখাব। পেন ড্রাইভে এনেছি। সেই একটা ডক্যুমেন্ট্রি হয়েছিল মনে আছে? আরে ওই দিল্লীর ধর্ষণের ঘটনাটাকে নিয়ে, বিবিসির? হ্যাঁ হ্যাঁ ওটা চালিয়ে দিচ্ছি। আমি চুরি করে টরেন্ট থেকে নামিয়ে রেখেছি। তার সাথে আরো দুটো হেভি পানুও নামিয়েছি। আছে আছে, ওই পেনড্রাইভেই আছে। পর পর দেখে যান। আরে ওভাবে সোজা হয়ে বসলেন কেন? আপনি ভুলে যাচ্ছেন আপনার অ্যালপ্রাজোলাম খাওয়া হয়ে গেছে। হ্যাঁ হ্যাঁ, আর বলছি কি? কোলের কাছে পাশবালিশটা নিন। নিয়েছেন, বাঃ লক্ষী ছেলে। এবার কাত হয়ে শুয়ে পড়ুন, আমি 'নির্ভয়া' তথ্যচিত্র চালিয়ে দিচ্ছি। তারপর দুটো হট পানু। দেখবেন আমার অ্যালপ্রাজোলামের খেল! আপনি দেখুন, আমি ঘুরে আসছি। ঘন্টা তিনেকের মধ্যে চলে আসছি।


     একি দাদা! ঘুমিয়ে কাদা যে! চলুন চলুন বাইরে বেড়িয়ে আসবেন একটু। দেখলেন? শেষ পানুটা দেখতে দেখতে চোখ লেগে গিয়েছিল? সে তো লাগবেই! প্রথম প্রথম না। কিন্তু বলুন, কোনো অসুবিধা হয়েছিল দেখতে? না তো! বলেছিলাম না।
     এবারে ট্রেনে বাসে নিশ্চিন্তে যাতায়াত করুন। কোনো অসুবিধা নেই। কে ইভ টিজিং করল, কোথায় বোম পড়ল, কার টাকা কে মেরে পালাল, কোথায় কে মস্তানী করল, এসবে আপনার আমার কি? আমরা শুধু দেখে যাব, শুনে যাব। মাঝে মাঝে 'আহা, আহা' বলব। তবে মজা দেখবেন, আহাগুলো আর বুকের ভিতর থেকে বেরোচ্ছে না। গলার কাছে তৈরী হচ্ছে। ওই বড় বড় মানুষেরা যেমন কোনো দুর্ঘটনায় 'গভীর শোক' প্রকাশ করেন বা 'তীব্র ভাষায় প্রতিবাদ' জানান, এও সেরকম আর কি। আপনি আইসক্রিম চুষতে চুষতেও সমবেদনা জানাতে পারেন, কম্পিউটারে বা আপনার স্মার্টফোনে গেম খেলতে খেলতেও দেশের দুর্দশা, পাশের বাড়ির খুন, ডাকাতি নিয়ে টুইট করতে পারেন। শুধু তাই? আপনার বাড়িতেও তো শুনি হাজার ক্যাঁচাল। কোনো প্রবলেম নেই। ছেলে মাল খেয়ে এসে বউ পেটাক, মেয়ে পাড়ার ছেলেদের সাথে লাফড়া করুক, বউ পাশের পাড়ার টনির সাথে মাঝরাতে হোয়াটস অ্যাপ করুক। আপনার শালা কি ছেঁড়া গেল তাতে। যার যা খুশী করুক। সারা দুনিয়া লাফড়াতে ভরে গেল দাদা, আপনার পরিবার কি আর সত্যযুগের হবে... কি বলেন? আরেকটা সত্যি কথা কি জানেন, আমার মনে হয় ভীষ্ম, দ্রোণ, এসব মাল অ্যালপ্রাজোলাম খেত। নাহলে তোদের বাড়ির সমত্থ বউটারে পিরিওডের সময় শাড়ি খুলে নিচ্ছে, আর ওইরকমভাবে ল্যাদ খেয়ে বসে থাকা যায়! এ অ্যালপ্রাজোলাম ছাড়া সম্ভব না দাদা। আমি বেট্ লাগাতে পারি। শালা ওই ব্যাটা পাণ্ডবদের গলাতেও যদি একটু করে তরল অ্যালপ্রাজোলাম ঢেলে দিত না, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধটাই আর বাধত না। সব শান্তি। হে হে। সব অ্যালপ্রাজোলামের দান দাদা। এক মুখে আর কত গুণ গাইব?
       উফ্, কি অদ্ভুত অনুভুতি না দাদা? একেই বলে বেঁচে থাকা। লাইফটাকে হেল না করে বেঁচে থাকা। ভাল ভাল গান শুনুন, নভেল পড়ুন, কবিতা লিখুন, রান্না শিখুন, ধর্মের চ্যানেল দেখুন, ফ্যাশন চ্যানেল দেখুন, রাতে রোজ একটা করে গরম বই পড়ুন বা দেখুন, সকালে খবরের কাগজ পড়ুন, গজল শুনুন, সমাজ সচেনতন সিনেমা দেখুন পপকর্ন হাতে নিয়ে। শুধু একটাই মূল মন্ত্র, নিজেকে কোনো ক্যাঁচালেই শালা জড়ানো নেই।

উপায়? অ্যালপ্রাজোলাম।