Skip to main content

রেলকলোনিতে আরপিএফদের কোয়াটার্স। প্রতি শনি-মঙ্গলবার সন্ধ্যেবেলায় বসে রামনাম সঙ্কীর্তন। প্রায় সবাই অবাঙালি। ইউপি, বিহার, ঝাড়খণ্ড, এমপির মানুষ।

আজ শনিবার। চলছে নাম সঙ্কীর্তন। প্রচণ্ড ঠাণ্ডা। সেই ঠাণ্ডার আমেজ কাটাতে হাতের পেশীতে যতটা জোর হয় সেই জোর দিয়ে বাজানো হচ্ছে ঢোল, করতাল। সামনে ছোটো হনুমানজীর মূর্তি।

গাইতে গাইতে রামভরণের চোখ পড়ল রাস্তার দিকে। রাস্তা ফাঁকা। তাই আরো ভালো করে চোখে পড়ছে, একটা বাচ্চা দাঁড়িয়ে। তাকে ঘিরে যেন কিসের আলো। আলোটা রাস্তার পিছনে রেললাইনে কাজ হচ্ছে সেইখান থেকে আসছে। হাই পাওয়ারের আলো। সেই আলোর ছটা গায়ে মেখে দাঁড়িয়ে ছেলেটা। রামভরণের মনে হল যেন ভগবান এসে দাঁড়িয়েছেন। রামভরণের হাতে করতাল। দ্রুত ছন্দে চলছে সঙ্কীর্তন। তাল রাখতে ঘাম ছুটে যাচ্ছে। কিন্তু বাচ্চাটা দাঁড়িয়ে কেন?

সব শেষ করে রামভরণ শুতে গেল যখন এগারোটা। রাস্তার বাচ্চাটা অন্ধকারে মিলিয়ে গেছে। রামভরণের ঘুম আসছে না। এ পাশ ওপাশ করতে করতে গায়ের কম্বলটা ফেলে উঠে বসল। চটিটা পায়ে দিয়ে নামল। গায়ে শালটা জড়িয়ে বড় টর্চটা নিয়ে বাইরে এলো। ঘন কুয়াশা। রেললাইনের কাজটা হচ্ছে না। কিন্তু আলোটা জ্বলছে। কি একটা অস্বস্তি হচ্ছে রামভরণের। সুখ নয়। আনন্দ নয়। একটা অপরাধবোধ হচ্ছে। নিজেকে সুখী করতে পারেনি। নিজেকে ভালো রাখতে পারেনি। সৎ রাখতে পারেনি।

রাত একটা। রেললাইনের পাশে এসে দাঁড়ালো। সিগন্যাল আপ ডাউন দুদিকেই লাল। নিজেকে ভীষণ ছোটো লাগছে নিজের কাছে। ঘেন্না করছে। কেন অসৎ হল? কেন এত টাকার লোভ হল?

নিজের ভিতর থেকে অনেকগুলো মানুষের কথা এলো। কেউ আসল না। লোভের অনেক মাথা। রাবণের মত। রামভরণ হাঁটু মুড়ে বসল। এইখানে ছেলেটা দাঁড়িয়েছিল। ধুলো মাখল মাথায়। গায়ে। নিজেকে ভীষণ ছোটো লাগছে। এত অসৎ! এত ঠকিয়েছে! ছি!

বেলায় ঘুম ভাঙল। রামভরণ চায়ের দোকানে এসে বসেছে। চারদিকে প্রচুর মানুষ। রামভরণ মানুষ দেখতে দেখতে চায়ে চুমুক দেখছে। গ্লানি কমছে। মানুষ অসৎ। অসৎ না হলে বাঁচা যায় না। রেলের কাজ হচ্ছে দিনের আলোয়। আলোটা নেভানো। সেই বাচ্চাটা হয় তো ভিক্ষা করছে কোথাও। কিম্বা চুরি করছে। লোভ বাঁচিয়ে রাখে মানুষকে। রামভরণ দারিদ্র্য দেখেছে। আর দেখতে চায় না। প্রাচুর্য চায়। লোভ ডেকে নিয়ে যায় রামভরণকে। রামভরণ সাড়া দেয়। সুখী হয়। বিষ মেশানো সুখ। তবু অন্য সুখে ভরসা করে না মানুষ। শুদ্ধতা আকাশের নীলের মত। ছোঁয়া যায় না। আক্ষেপ করা যায়। রামভরণ আক্ষেপ নিয়ে বাঁচে।