Skip to main content

বাচ্চাটা লজেন্স নিয়ে দোকান থেকে বেরোলো। পিঠে স্কুলের ব্যাগ। ঘেমেনেয়ে একশা অবস্থা। কিন্তু দাদুটা কই? লজেন্স চেয়েছিল যে একটা?

কি হয়েছিল বলি, সে একটা কাঠির মাথায় লাগানো লজেন্স চুষতে চুষতে হাঁটছিল। দাদুটা ঘুমাচ্ছিল ফুটপাথে, খেয়াল করেনি। রাস্তার ওপারে ইয়াব্বড় একটা আইসক্রিমের ছবি টাঙানো বোর্ড। ওরকম আইস্ক্রিম সে খায়নি, অনেক দাম নাকি, বাবা বলেছে। বাবা সব্জী বিক্রি করে, অত টাকা নেই। তবে পুজোর সময় কিনে দেবে বলেছে। তো এই সব ভাবতে ভাবতে সে হাঁটছে, ধুম করে দাদুটার গায়ে পা লেগে হুড়মুড় করে দাদুটার ঘাড়ে গিয়ে পড়ল। লজেন্স ছিটকে দাদুর বোঁচকার উপর পড়ল। দাদুটা কেমন যেনলেগেছে কি লাগেনি, এ সব প্রশ্ন না করে লজেন্স তুলে মুখে পুরে নিল। কোনো মানে হয়? সে থ্রি-তে পড়ে, সে-ও জানে অন্যের এঁটো খেতে নেই... আর দাদু কিনা বুড়ো হয়েও জানে না....

সে বাড়ি চলে এলো। পরের দিন আবার ওই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে যখন দাদুটা ধরেছে তাকে, বলে লজেন্স খাওয়া আবার। কিন্তু রোজ রোজ কি তার কাছে টাকা থাকে নাকি! মা মাসে চারবার কি পাঁচবার দেয়। সে বলল, আচ্ছা, মা যেদিন দেবে সেদিন তোমায় খাওয়াব।

আজ মা টাকা দিল। কিন্তু দাদুটা কই?

সে একে তাকে জিজ্ঞাসা করে। কেউ বলতে পারে না। শেষে দু'দিন পর দাদুকে দেখল রাস্তার ধারে একটা কলে মুখ ধুচ্ছে। সে গিয়ে আচ্ছা করে বকা দিল। বলল, কি আজব লোক গো তুমি... আমি দু টাকা দিয়ে লজেন্সটা কিনলাম তোমার জন্য, আর তুমি কিনা....

দাদুটা প্রথমে তাকে চিনতেই পারছিল না। তারপর চিনতে পেরেই বলল, এই শালা, তুই আমার জন্যে সত্যিই লজেন্স কিনেছিলি? আমার ছেলেই আমায়.. কই দে….

এখন আছে নাকি? আমিই তো খেয়ে নিয়েছি। তোমার ছেলে আছে?

আছে। কিন্তু নেই। আমার মাথার গোলমাল তো, তাই আমায় ঘরে থাকতে দেয় নাযদি কামড়ে দিই….

এই বলে দাদুটা হলদে দাঁত বার করে খ্যাকখ্যাক করে হাসল। গোবলুর ভালো লাগল না। গোবলু বলল, আবার মা যবে টাকা দেবে, আমি কিনব, কিন্তু তোমায় কোথায় পাব?

দাদুটা তার গালে হাত দিয়ে একটা চুমু খেলো। বলল, তুই আমায় মনে করে কিনেছিস এই আমার কাছে অনেক। কেউ তো আমায় মনে রেখেছে।

কি পাগল দাদুটা, এই বলে কেঁদেই ফেলল। গোবলু বলল, কাঁদছ কেন? আমি আনব তো বলেছি। আর দেখো, ওই যে ওই আইস্ক্রিমটা দেখো, ওটা আমায় বাবা পুজোর সময় কিনে দেবে বলেছেতাকাওওই যে

দাদুটা তাকালো বোর্ডের দিকে। বলল, এ কোথায় পাওয়া যায়?

গোবলু বলল, আরে ওই যে গো রাধাকৃষ্ণ মিষ্টির দোকান আছে না? ওইখানেআমি ওদের দোকানের উপরেও অ্যাড দেখেছি

দাদু বলল, কি দেখেছিস?

গোবলু বলল, তুমি বুঝবে না আমি যাই, দেরি হয়ে যাচ্ছে, আজকে বুধবার, মা মনে হয় সামনের সোমবার আমায় টাকা দেবেতুমি সরস্বতী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে থাকবেআচ্ছা?

এই বলে গোবলু চলে যাচ্ছিল হঠা দাদুটা তার হাতটা ধরে বলল, ….

গোবলু অবাক হল, দাদুটার হাতে এত জোর!সে বলল, কোথায়?

ওই আইস্ক্রিম খাবোনা হয় ভিক্ষাই করিতবু হবেকত দাম রে?

গোবলু চোখটা বড় বড় করে বলল প ন্.. চা টাকা….

দাদু ভুরু কুঁচকে কি ভাবল। তারপর তাকে হ্যাঁচকা টেনে বলল, বেশ, না হয় একটাই কিনব

মিষ্টির দোকানের সামনে এলো। যেই না গোবলু আইস্ক্রিমের নামটা বলেছে অমনি দোকানদার বলল, অনেক দাম….

দাদু বলল, পঞ্চাশ টাকা তোদাও

দোকানের লোকটা কেমন রাগ রাগ করে আইস্ক্রিমটা বার করে দিয়ে বলল, বাইরে গিয়ে খাও এখানে বসবে না…..

গোবলু দাদুর দিকে তাকালো। দাদু মাথা নেড়ে বলল, বেশ বেশ, বাইরেই খাবদে দেখি….

গোবলুর হাতে আইস্ক্রিমটা দিয়ে দাদু বলল, চ আমরা বাসস্ট্যান্ডে বসে বসে খাই।

 

বাসস্ট্যান্ডে এসেই দাদুটা হঠা পেট চিপে রাস্তায় বসে পড়লবলল, উফ্... কি পেটে ব্যথা রে... গোবলু আমায় এক্ষুনি হাগু করতে যেতে হবে…. তুই খা, আমি আসি আধঘন্টায় না এলে তুই বাড়ি চলে যাস

গোবলু কিছু বলার আগেই দাদু ছুটলকি জোর হাগু পেয়েছে তবেগোবলু খিলখিল করে হেসে ফেললতার তো একবার প্যাণ্টেই হয়ে গিয়েছিল ক্লাস টু-তে…. সে দাদুকে চীকার করে বলল, সোমবার কিন্তুসরস্বতী প্রাথমিক বিদ্যালয়….

দাদু হাতটা নেড়ে না তাকিয়েই বলতে বলতে চলে গেল…, আচ্ছা আচ্ছা…. আচ্ছা….

 

দাদুটা আর আসেনি, এক ঘন্টা পরেও না। আর কোনোদিন না।