Skip to main content
 
 
      কাঁকিনাড়া কিম্বা ভাটপাড়ায় কেউ ‘মার্কিং সেফ’ অপশান পাচ্ছে না। মানে ফেসবুকের কথা বলছি। ভূমিকম্প, বন্যা, অ্যাক্সিডেন্ট ইত্যাদি এক সমস্যা। বোমাবাজি, হানাহানি, হিংসা ইত্যাদি আরেক সমস্যা। নানা মুনির নানা মত। ব্যালট থেকে ইভিএম, মোদি থেকে মমতা, রাহুল ইত্যাদি ইত্যাদি চলছেই। একদল বিজ্ঞজন চিঠি দিলেন --- দেশ খুব খারাপ অবস্থায়। আরেকদল চিঠি দিয়ে বললেন, বটে? একদল ভাবল, তাই তো, এরা প্রতিবাদী, ওরা সুবিধাবাদী। অন্যদল ভাবল, একদল হিংসুটে, আরেকদল স্বচ্ছদর্শী। মোট কথা যেরকম গড়ায় সময় সেরকম গড়াচ্ছে। প্রত্যক্ষ আঘাতে প্রতিঘাত, পরোক্ষ আঘাতে চিন্তায় আলোড়ন, লেখায় সুনামি, আর প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ কোনোরকম ঝুটঝামেলায় না থাকা মানুষেরা উদাসীন, নীরব খবরদর্শী বা খবরপাঠক। 
      কথা হচ্ছে, আমি আগেও চটতুম। এখন চটি না। আমি জানি যাই ঘটুক না কেন, মানুষের আগ্রহ, মানে আত্মপ্রেমের আগ্রহে সে নিজেকে সম্পূর্ণ নির্লিপ্ত রাখতেই পারে সব কিছু থেকে। এর অভিজ্ঞতা কি আমাদের নেই? ভাবলেই আছে, না ভাবলেই নেই। ভাবুন মানিক স্যার, থুড়ি মানে সত্যজিত মহাশয় জন্মালেন ১৯২১ সালে, মানে যখন বিয়াল্লিশের আন্দোলন হচ্ছে, কিম্বা স্বাধীনতা আন্দোলন হচ্ছে তখন তিনি কি নিজেকে তার সাথে জড়িয়ে মাথা খারাপ করছেন? করছেন না তো? যদি করতেন তবে কি হত? আঠারো বছর তো হয়েই গিয়েছিল না? "আঠারো বছর বয়স কি দুঃসহ”... আরে ধুর, ওসব কাব্যের কথা। সবার যদি দুঃসহ হত তবে আর দেখতেই হত না। পৃথিবীতে শান্তি বলে কিছু থাকতই না। সবাই সারাদিন বিপ্লব করে মরত। আচ্ছা কোনো মানে হয় বলুন? তিনি এইসবে জড়ালে হয়ত বেঘোরে জেলে থাকতেন, নয়ত শহীদ হতেন। আমরা এমন আন্তর্জাতিক স্তরে আমাদের চলচ্চিত্রকে দেখতে পেতুম? অমন একটা ইন্টেলেকচুয়ালাইজেশান অফ ইণ্ডিয়ান কালচার দেখতে পারতুম? না পেতুম না।
      তাই কথা হচ্ছে নিজেকে ইনস্যুলেশানে রাখাটা অভ্যাস করতে হবে। ক্ষণকালে কি হচ্ছে আমাদের কি দরকার তাতে? আমাদের চিরকালের দিকে তাকিয়ে মনের নানা নান্দনিক, কোমলভাবগুলো নিয়ে ভাবনাচিন্তা করা দরকার বইকি। যেমন মানিক স্যার বলেছিলেন না? 'আমার বয়েসী ছেলেরা যখন কবিতা লিখে খাতা ভরাচ্ছে, আমি তখন বিঠোভেন বাক শুনছি।' কি অসম্ভব আত্মবিশ্বাসী কথা না? শুনলেই রোমাঞ্চ হয়। আমার তো ভীষণ হয়। কোথায় কি হল তা নিয়ে এত প্রতিক্রিয়া দেওয়ার তো কিছু হয়নি রে বাবা। যা হওয়ার তাই হচ্ছে। সংসারে একটা পাতাও নাকি ঈশ্বরের ইচ্ছা ছাড়া নড়ে না, তা এতগুলো বোমা তাঁর ইচ্ছা বিনা পড়ে গেল, তাই হয়? জয়গুরু। আচ্ছা আপনি নাস্তিক? নাস্তিক না মাকু ঝেড়ে কাশুন। মাকু হলে নাস্তিকতার প্রদর্শন আপনার অঙ্গ, সে যতই আপনার নেতা তারাপীঠে পুজো দিন, আর স্বভাবে নাস্তিক হলে সে অন্য কথা। প্রদর্শনের থেকে অন্বেষণ সেখানে বড় কথা। কিন্তু আপনাদের কি যুক্তি দেব? আছে, সে ব্যবস্থাও আছে। সে হল, কার্য-কারণ সম্পর্ক। কারণ বিনা কার্য হয় না, আবার কার্য হয় কারণের খোঁচাতেই। কি, কেমন বললাম? হুঁ হুঁ বাবা, এমনিই কি আর মাথার চুলগুলো সাদা হয়ে গেল?
      তো ঈশ্বর তো মহাজাগতিক ব্যপার নিয়ে থাকেন। তারা পূজ্য। তারা নমস্য। তাদের আমাদের মত ছোটোখাটো কথায় মন ভুলবে না, যদি না একটা ইয়া মাপের আদর্শ আনতে পারো সামনে। যেমন আমাদের এখানে এককালে কত কিছু হয়েছিল, না? একটা বিশেষ রাজনৈতিক আদর্শকে বাস্তবায়িত করার জন্য কত কত মানুষ একজোট হয়েছিলেন। একটা বিদেশী আদর্শ গো। কত গান হল, সিনেমা হল, পুঁজিবাদের হাত গুঁড়িয়ে দেওয়ার কথা হল। কারা পুঁজিবাদ? উফ, ধুত্তোর এতো কিছু বোঝে না গো, আরে যারা অস্কার-টস্কার পুরস্কারগুলো দেয় গো। হুম তারাই।
কিন্তু কিচ্ছু গুঁড়োলো না জানেন। হাতগুলোই কালের চাকায় ঢেকে গেল। সময়ের স্রোত বুঝবে কে বলো? কার্য-কারণ বলে যতই লাফাও চাঁদ আমার, কোন কারণের যে কি কার্য হবে তা কার্যটি না হওয়া অবধি বোঝে কার সাধ্যি গো! নিজের মন নিয়েই এত গোলমাল তা জগতের মনের কি খবর রাখি!? দাঁড়াও একটা গান মনে আসছে, "আপন মন যদি বুঝিতে নারি, / পরের মন বুঝে কে কবে॥" ... আহা কি গান! জয় মা। 
      তো কথা হচ্ছিল ইনস্যুলেশানের। দাঁড়ান, গানটা কার লেখা? আরে শান্তিনিকেতনের মানুষটার গো। ভাবুন দেখি সুভাষ, গান্ধী সবাই বলছে, আপনি বলুন, আপনি বলুন। কি ঠিক বলুন। কি ভাবছেন বলুন। মানুষটার অতবড় জোব্বাখানা ইনস্যুলেশানের কাজ করল না। দেখলেন? আচ্ছা ওনার রাজনৈতিক আদর্শ কে ছিলেন? মহাত্মার কে ছিলেন? কেউ না। কেন বলেন দেখি? আপনাদের একটা তত্ত্বকথা বলে লেখাটার বিরাম টানি। কারণ কি জানেন? আচ্ছা ধরুন একজনের বাচ্চা হল। আপনি গিয়ে যদি জিজ্ঞাসা করেন, আচ্ছা আপনি কোন আদর্শ অনুযায়ী বাচ্চাটাকে মানুষ করছেন? কার মতন করে স্তনে মুখ দেওয়াচ্ছেন? কার আদর্শ অনুযায়ী ওর খাদ্য গলাধঃকরণের আদর্শ সময় নির্ধারিত করেছেন? ইত্যাদি ইত্যাদি প্রশ্ন যদি করেন, উনি সেই ‘হাস্যকৌতুক’ নাটকের মত করে বলবেন, ‘মিনসেটা কি বকছে ভাই?’
      আসল কথাটা হল ভালোবাসা জাগলে আর আদর্শ'র ক্যাটাগরি লাগে না। যেমন দক্ষিণেশ্বরের সেই ক্ষ্যাপা মানুষটা বলত না, এমনি বাতাস দিলে আর হাতপাখা লাগে না। বাকি সব আদর্শের গল্পই হল সেই না ভালোবেসে ভালো করতে যাওয়ারই ফল। মানুষকে সব চাইতে বড় অপমান করার উপায় শান্তিনিকেতন ঠাকুর বলছেন, "তাহার হিত করা অথচ তাহাকে প্রীতি না- করা।"
      কি কথা মাইরি না? তার চাইতে ইনস্যুলেটেড থাকাটা ভালো নয়কি? কে জানে? নাকি একটা প্রদর্শনী প্রতিবাদ, প্রদর্শনী সহমর্মিতা, কাল্পনিক যথার্থতার জন্য 'রে রে' করে ঝাঁপিয়ে পড়াটা ঠিক। কোনটা কাজের কথা বলুন তো? ভারি শক্ত কথা। সলোমনকে ডাকতে হবে। কোনটা আসল ফুল আর কোনটা নকল বেছে দেবে। কিন্তু যদি নকল মৌমাছি ঢোকে, ড্রোনের মত? জয়গুরু।