Skip to main content

একটা বড় মেলা। কত রকম আলো, কতরকম নাগরদোলা, কত রকম সুখ। একটা রিফ্রেশিং স্পট - রবীন্দ্রনাথ। 

    পঁচিশে বৈশাখ, বাইশে শ্রাবণ - মেলায় ভীষণ ভিড়। পঁচিশে বৈশাখ অপেক্ষাকৃত বেশি। সেদিন মেলার ফাউণ্ডেশন ডে। বাইশে শ্রাবণ, ভিড় কিছুটা কম, সেদিন মেলার কর্তৃত্ব হস্তান্তরণের দিন। বাকি দিনগুলো কেউ না কেউ আসেই। 

    মেলায় কত আলো! কত কত আলো! সেই আলো জ্বালিয়ে রাখার জন্য জেনারেটারের হাতল ঘুরিয়েই যাচ্ছে এক বৃদ্ধ। সাদা দাড়ি। একটু কুঁজো। সেই সেদিন থেকে আজ অবধি মেলায় আলো জ্বেলে রাখার কাজটা সে একাই করে চলেছে। সেদিনও সঙ্গী ছিল না। আজও নেই। সেদিনও অনেকে এসে মেলার অনেক খুঁত ধরেছে। আলো ভেঙেছে। আজও কেউ কেউ এসে সেই খুঁত ধরা, আলো ভাঙার কাজটা করে যায়। নিষ্ঠা নিয়েই করে যায়। কেউ কেউ গোপন চিঠি খোঁজে। কেউ কেউ আলখাল্লার আড়ালে লুকিয়ে থাকা কালো মুখ খোঁজে। কেউ কেউ আবার অতশত মাথা না ঘামিয়ে ফি শনিবার বারঠাকুরের মন্দিরে পুজো দেওয়ার মত করে ফুল চন্দন ছড়িয়ে যায়। মন্তর পড়ে যাওয়ার মত করে কয়েকটা গান কবিতাও পড়ে যায়। 

    কেউ জিজ্ঞাসা করে না, আপনি কেমন আছেন? সেদিনও জিজ্ঞাসা করেনি, আজও জিজ্ঞাসা করে না। করবেও না। শুধু আলোর নীচে এসে দাঁড়াবে। উঁচুতে ওঠা নাগরদোলায় উঠে নির্মল বাতাসে শ্বাস নিয়ে নেমে আসবে। আর কিচ্ছু দেবে না! কিচ্ছু না। 

    আমাদের কি কি দেওয়ার ছিল? সবার আগে তো যে ভাষাটাকে ভালোবেসেছিলেন, সেই ভাষাটাকে যথাযোগ্য মান দেওয়ার ছিল। 

    দিইনি। প্রাথমিক শিক্ষা থেকেই কেড়ে নিয়েছি মাতৃভাষার উপর অধিকার। তারপরের কথাগুলো আর বারম্বার বলে কিই বা হবে। 

    আর কি চেয়েছিলেন? আমাদের একটা স্বাধীন চিন্তাশীল, কৃষি-বাণিজ্য-শিক্ষা-গবেষণা ইত্যাদিতে আত্মনির্ভরশীল জাতি হিসাবে দেখতে চেয়েছিলেন। ভিতটা গড়ে দিতেও চেয়েছিলেন। 

    হলাম না আমরা। অন্যান্য অনেকের থেকে পিছিয়েছে পড়েছি রোজ। অল্প অল্প করে পিছোচ্ছি। সহিষ্ণুতা, উদারতা, ভদ্রতা, উচ্চভাব - ব্যক্তিগত জীবনে ছেড়ে গিয়ে পোশাকি জীবনে শুধু। পড়ে থাকছে সংকীর্ণ দলাদলি, তর্কপ্রিয়তা, চাতুরী, শর্টকাট খোঁজা, জোড়াতালির খেলা।

    রবীন্দ্রজীবনী - ব্রাত্য। গীতবিতান আর সঞ্চয়িতার থেকে বেছে নেওয়া অল্প কয়েকটা পাতায় ধরতে চাইছি একটা এমন জীবনকে, যে জীবনের থেকে শেখার ছিল অনেক কিছু। অনেক অনেক কিছু! যে জীবনের পরিমাপ আমাদের উচ্চতম কল্পনার নাগাল পেরিয়েও অনেকখানি। সেখানে অন্বেষণ নেই, আছে গোঁজামিলে ভরা বায়বীয় রূপ।

    আজ আছে শুধু মেলা। উৎসব। শৌখিন আবেগ। ছবি। মূর্তি। কয়েকটা নির্দিষ্ট গান-কবিতা-নাচ। বাদ গেল গোটা জীবনটা। যে জীবনজুড়ে ছিল নানা চেষ্টা। নানা প্রয়াস। নিজেকে ছাপিয়ে আরো বড় হওয়ার ব্রত। নিজের ক্ষুদ্রতাকে নিজেরই বোধের মহত্বের কাছে সমর্পণ করার সাধনা। 

    সে জীবনটার কাছাকাছি যেতে পারছি কি আমরা? বা আদৌ কি চাইছি?