সংসারের চৌকাঠে আমার বাস। গৃহস্থের আঙিনায় ডাক পড়ে যখন তখন ভাবি যাই কি না যাই? আসক্তি তো প্রবল। যখন মানুষ প্রকৃতিতে মুগ্ধ হয়, আমি তখন গ্রামে-শহরের রাস্তায় ঘুরি। আমার মত কত মানুষ আমায় ঘিরে, সবাই কত আলাদা, আবার কত এক। ঈশ্বরের কৃপা পেলে শুনেছি মূক বাচাল হয়, পঙ্গু গিরি লঙ্ঘিয়ে যায়। যায়, আমি অনেকবার দেখেছি, কি কাঙালপনায়, কি আকুতি নিয়ে, কত অল্পে মানুষ একটা প্রাণকে আগলে ধরে দেখেছি। এক দরিদ্র মায়ের দেখেছি সহস্র হাত, এক দরিদ্র পিতার দেখেছি কুবেরকে লজ্জা দেওয়া শ্রমের আর স্নেহের ধন।
যে হতভাগার সেটুকু না থাকে? সেই স্নেহের আগলহীন মানব সন্তানের দায় নেওয়াকে তাই কোনো ধর্মে শ্রেষ্ঠ কাজের মধ্যে ধরা হয়। খ্রীষ্ট বলেছেন তুমি যখন আমার নামে কোনো সন্তানের ভার গ্রহণ করো তখন তুমি আমাকেই গ্রহণ করো। সত্যিই তো তাই। ভালোবাসা স্নেহের অভাব মানুষকে মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন করে তোলে আজ বিজ্ঞান দ্বারা প্রমাণিত। কত মানুষের অমানুষ হয়ে ওঠার আদিপর্ব এমন স্নেহের আশ্রয়হীন শুষ্কতায়। তাই খ্রীষ্ট যখন বলেন "আমার নামে" তখন মনে হয় তিনি বলেন এই ভালোবাসার নামে। যেখানে প্রশ্রয় নেই, "আমার বস্তু" বলে লোভ বা আসক্তি নেই এমন সবল ভালোবাসায়। যেখানে তাকে সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে দায়িত্বজ্ঞানসম্পন্ন করে বড় হয়ে ওঠার শিক্ষা থাকে এমন ভালোবাসায়।
মানুষের বাচ্চা সব চাইতে অসহায় হয়ে জম্মায়। তাকে মা কোলে তুলে না নিলে তার খাওয়া জোটে না। বুকের উপর চেপে না ধরলে তার ভয় যায় না। সে হাসে, কাঁদে, হাত পা ছোঁড়ে সবই নিজেকে বোঝাবে বলে। তার সেই না- মানুষী আদিম ভাষা যে পড়তে পারে তাকে সে তার ছোটো আদুরে আঙুলে জড়িয়ে ধরে। তার আদর সে মিষ্টি হেসে ফিরিয়ে দেয়, সাড়া দেয়। এ সব কথা রবীন্দ্রনাথের কাছেই শেখা।
যে শিশুটিকে বুকের কাছে ছুঁয়ে অনুভব করলাম, সে আমার বুকের ভীষণ কাছের। তার কারণ তার বাবা-মা, দেবাশীষ ও রিপ্পল। যাদের নিজের সন্তানের মত স্নেহ করি তাদের সন্তানকে কোলে নেওয়ার ভাগ্য, সুখ, আনন্দ ভাষায় আজ অবধি কেউ বলে উঠতে পারেনি, আমি তো কোন তুচ্ছ মানুষ। স্থির হয়ে তার চোখের দিকে তাকিয়ে মনে হল এ যেন আমার বহুজন্মের পূর্বপরিচিত। এদিনটার অপেক্ষাও যেন বহু দিনের কাঙ্ক্ষিত।
আমার একান্ত প্রার্থনা ওর জন্য, ও ভালোবাসা আর দায়িত্ববোধকে একে অপরের পরিপূরক হিসাবে বুঝুক। বড় হোক। আপনাদের সবার সঙ্গে অবশ্যই আমার সুখটুকু তো ভাগ করে নিলামই, সঙ্গে সঙ্গে ওর জন্য শুভকামনার প্রার্থনাও জানিয়ে রাখলাম।