তো সে কি করল, একটা মন্দির বানালো। কিন্তু মন্দিরে কোনো মূর্তি, বা ঘট কিছুই রাখল না।
সবাই এসে জিজ্ঞাসা করল, ওহে, মন্দিরে কিছু নেই কেন?
সে বলল, বাহ্ রে, জানো না আমি নাস্তিক! কিছু যে নেই সেইটে প্রমাণ করতেই তো এটা বানালাম। দেখো, কিচ্ছু নেই।
একজন বললে, তবে মন্দিরটা বানালে কেন?
"নেই" মতটা প্রতিষ্ঠা করতে একটা বেদী লাগবে না? সেটা কোত্থেকে হবে? এ সেই বেদী।
একজন বলল, এখানে কি হবে?
সে বলল, সকালে, দুপুরে আর সন্ধ্যেতে "তিনি নেই" এই গানে কীর্তন হবে। দুপুরে, রাতে ভোগ চড়বে। সবাই আসবে। খাবে আর বলবে "তিনি নেই"।
লোকের বেশ কৌতুহল হল। সব নতুন নতুন নিয়ম হল। অন্নপ্রাশন, জন্মদিন, বিয়ে, শ্রাদ্ধ… সব নতুন নিয়মে ঢালাও করে সাজানো হল। নিয়ম সোজা, মাঝে-মাঝেই হাত তুলে বলতে হবে, তিনি নেই.. নেই.. নেই।
ক্রমে লোকের ভাব হতে শুরু করল। কেউ কেউ "তিনি নেই.. নেই.. নেই" বলে এমন কান্নায় আকুল হল, সেই দেখাদেখি আরো অনেকে আবেশে কাঁদতে শুরু করে দিল। খোল-করতালের সঙ্গে পাশ্চাত্যের অনেক বাদ্য আমদানি করা হল। সবাই উচ্চৈঃস্বরে সকাল-সন্ধ্যায় নগর কীর্তনে বেরোতে শুরু করল।
ভালোই চলছিল, হঠাৎ এক পাগল এসে জুটলো কোত্থকে। সে একবার আল্লাহ্, একবার হরি, একবার ইশা… এই সব বলে হুঙ্কার দিয়ে লাফিয়ে ওঠে। এখানে এসে বসে পাত পেড়ে খেলো। নাস্তিক প্রসাদ। তারপর হেসে বলল, কি নাম দিয়েছ… "নেই"? বাহ্, ভালো ভালো। এ-ও এক নাম বটে। নেই আর আছের মধ্যে পার্থক্য তো শুধু মনের। মন গেলে নেই-ও নেই, আছেও নেই। আবার আছেও আছে। নেই-ও আছে।
সবাই হুড়মুড় করে তেড়ে গেল পাগলের দিকে। পাগল মার খেল। ধুলো-কাদায় মাখামাখি হয়ে বলল, যাই গিয়ে তবে। এ উৎসবটাও ভালো। আছে-র মার, আর নেই-এর মার, দুইই হজম হয়, যদি পেটে কিছু থাকে। তোমাদের আছে-নেই-এর বিলাসিতায় দুটো খাইও আমায় তাইলেই হবে।
একজন তাকে নগরের সীমানায় ছেড়ে দিতে গেল।
সীমানার বাইরে রেখে জিজ্ঞাসা করল, সত্যি করে বলো তো, সে কি আছে?
পাগল বলল, আরে ধুর!
সে বলল, আমিও জানি। যাক গে, যাও, এদিকে আর এসো না।
পাগল সীমানা ছেড়ে যাচ্ছে, হঠাৎ সে আবার দৌড়ে এলো… এসে জিজ্ঞাসা করল, একদমই কি নেই?...
পাগল হেসে বলল, আরে ধুর… আছে আছে…. নেই নেই… ওরম প্রথম প্রথম মনে হয়… সব আছে…
সে পাগলের মুখের চোখের দিকে তাকালো।
পাগল হো হো করে হেসে উঠল। বলল, যাও যাও.. ফিরে যাও। যদ্দিন মন আছে তদ্দিন সব আছে, আবার নেইও।