সৌরভ ভট্টাচার্য
21 March 2022
ছেলেটা তার দম দেওয়া ট্রেনটাকে বলেছিল
ভাঙবি না কোনোদিন
ট্রেনটা একদিন ছাদের কার্ণিশ থেকে পড়ে
স্প্রিংট্রিং বার করে হাঁ হয়ে পড়েছিল কুয়োপাড়ে
ছেলেটা তার প্রিয় টিনটিনের বইটাকে বলেছিল, রোজ আমরা একসঙ্গে গল্প করব, ছাদে, সবাই ঘুমিয়ে পড়লে দুপুরে
পুজোর সময় বাড়িতে কত লোক,
কে নিয়ে গেল মলাটে ডোনাল্ডডাক আঁকা তার টিনটিনের বইটা
আর পেলো না!
ছেলেটা মায়ের আট বছর পর বাবাকে দাহ করে যেদিন বাড়িতে কাটিয়েছিল প্রথম গ্রীষ্মের দুপুর একা
ঘুঘু ডাকছিল ছাদে অনবরত
সেদিন সে নিজের গরম নিঃশ্বাসকে বলেছিল, তুমিও যেতে পারো,
অভিমান করব না আমি
ছেলেটা মেয়েটার ঠোঁটে চুমু খেয়ে সেদিন তার সর্বাঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে বলেছিল,
তুমি না হলে আমি বাঁচব না
ছেলেটা সে মেয়েটার অন্যত্র বিয়ের পরেও প্রতিদিন অফিসে গেছে, ট্রেন ধরে বাড়ি ফিরেছে,
অন্য মেয়ের সঙ্গে তার সংসার আজ
ছেলেটা যে চাকরিটাকে পায়ের তলায় অনড় অচল পাথর ভাবত
লকডাউনে সেও যখন গড়িয়ে গেল অন্ধকারে
তখন সে আর তার স্ত্রী অনেকবার ভেবেছে
জীবনটা শেষ করে দিলেও হয়
বাড়িতে দড়ি আর ঝুলন্ত পাখা দুটোই যখন আছে
তাও তারা আজও বেঁচে আছে
অন্য কোনো রাস্তা খুঁজছে
বেঁচে থাকার জন্য মরিয়া হয়ে
সমস্ত সংসারে সব কিছু নশ্বর জেনেও
তুমি যদি জিজ্ঞাসা করো
আমার কাছে কবিতার সংজ্ঞা কি?
আমি বলব এই -
নশ্বর সংসারে এই অবিনশ্বর মরিয়াপনা!