Skip to main content

সকাল ন'টা। গঙ্গার হাওয়া ফুরফুর করে আসছে। সারাটা সকাল যে শরীরটা রান্নাঘরের আগুনের তাপ ছাড়া কিছু পেত না, সে খাটে শুয়ে, তার গায়ে লাগছে মুক্ত গঙ্গার হাওয়া সেই সকাল থেকে। তার পায়ে আলতা। কপালে মাখা সিঁদুরে। গায়ে নামাবলী।

আজ লাইন আছে। আরো আটজনের পরে।

হঠাৎ নামাবলীটা উড়ে গেল হাওয়ায়। লালপাড় শাড়ীটা গঙ্গার হাওয়ায় নেচে উঠল। মাথার চুলগুলো উড়ে মুখের উপর এসে পড়ল। কেউ সরালো না। পায়ের উপর এসে ঝরে পড়ল এক মুঠো কৃষ্ণচূড়া ফুল। যেন কেউ অঞ্জলি দিল। রোগা ডান হাতটার উপর এসে বসল একটা নীল প্রজাপতি। কপালে চন্দনের টিপগুলোর সঙ্গে খেলা করছে অশ্বত্থগাছের পাতার ঝালর। এত আনন্দ চারদিকে! এত সুখ! এত পূর্ণতা!

চিমনি দিয়ে উড়ে যাচ্ছে এক একজন মানুষ। একা একা মিশে যাচ্ছে হাওয়ায়।

পায়ের কাছে গুটিয়ে শুয়ে একটা ঘেয়ো কুকুর। খাটের নীচে। সে যেন বুঝেছে, এখানে আছে আশ্রয়। আগুন না, মাটি না, মানুষের সঙ্গে যদি মানুষ মিশে থাকে তবে তাকে কেউ নিতে পারে না, আগুন না, মাটি না।

একটা খঞ্জনা পাখি এসে বসল মাথার কাছে। বলল, এরপরেই তোমার নাম। তুমি তৈরি তো?

বন্ধ চোখের উপর থেকে ধূপের গন্ধ ভেসে এলো। সে বলল, আমি তৈরি।

সে আজীবন তৈরি ছিল, চলে যেতে হবে জেনেও থেকে যাওয়ার অভিলাষে। থেকে যেতে যেতেও অভিসারের যাত্রাপথে আলপনা দেওয়ার অভ্যাসে।

আজ সে আলপনা পূর্ণ হল। সিঁদুর আর আলতা মেখে বসল আগুন। আজ অভিসারের দিন।