অবশেষে বাবাকে নিয়ে হাস্পাতাল থেকে ফিরলাম। তা কেমন অভিজ্ঞতা হল? শুনুন বলি।
আজ হল গিয়ে শুক্রবার। এই গত মঙ্গলবারের আগের মঙ্গলবার দুপুরবেলা কলকাতার সুবৃহৎ সুপারস্পেশালিটি রেল হাস্পাতালে ভর্তি করে এলাম। তার আগে বাবা এখানকার স্থানীয় রেলের হাস্পাতালে দুদিন ছিলেন। ডাক্তার বললেন, কঠিন ব্যামো, শীগগির কলকাতায় নিয়ে যান।
বুধবার গেল। বৃহস্পতিবার গেল। শুক্রবার ডাক্তার ভিজিটে লাইন দিলাম। মধ্য বয়েসী ডাক্তার। আমার টার্ন আসতেই সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।
- কত নম্বর বেড?
বললাম
- কি অসুবিধা নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন?
- আজ্ঞে সোডিয়াম পটাশিয়াম কম হয়েছিল।
- আপনি কি সোডিয়াম পটাশিয়াম নিয়ে স্পেশাল পেপার করছেন? ( ডাক্তারের চীৎকারে সারা ঘর কেঁপে উঠল। বিরাট রুম। পুরো রুম এসি। কয়েকটা বেড পরেই বাবা শুয়ে। প্রচুর বেড। ঝাঁ চকচকে চারদিক। বেশ কিছু বেড ফাঁকা যদিও।)
ভেবলে গেলুম। এমন উগ্রমূর্তি হওয়ার কারণ বুঝলাম না। ক্ষীণ কণ্ঠে বলতে চেষ্টা করলাম, আজ্ঞে ওখানকার অমুক ডাক্তার যা বললেন...
- ডেকে আনুন তাকে তবে। তিনিই চিকিৎসা করুন। (সেই মেদিনী কাঁপানো গলা)
আমি চুপ। উনি বলে চললেন।
"ওনার কিডনি থেকে ইউরিন আসার পথে একটা বাধা আছে। ইউরিন ব্যাক ফ্লো করে একটা কিডনি পুরো নষ্ট করে দিয়েছে। বুঝছেন? তাতে একটা বিশাল ইনফেকশন হয়েছে যা সারা রক্তে ছড়িয়ে পড়েছে। ওটাকে ইম্মিজিয়েট অপারেশান না করলে উনি বাঁচবেন না। আর অপারেশন অমুক ডাক্তার কতটা কি করতে পারবেন তাও বলা যাচ্ছে না।"
আমার পালা শেষ। পরের রুগীর বাড়ির লোক এগোলেন ধীর পায়ে।
আমার মাথা ভোঁ ভোঁ করছে। ট্রেন ধরে বাড়ি ফিরলাম।
শনিবার আবার দেখা করতে গেলাম ডাক্তারের সাথে। আজ তিনি শান্ত। বললেন, আমি অমুক ডাক্তারের কাছে সব তথ্য পাঠিয়েছি, উনি যদি কিছু করতে পারেন তো হবে....
বলতে বলতেই সেই ডাক্তারের কাগজ এলো। সিটি স্ক্যান করাতে হবে।
উনি বললেন, এই কাগজ দেখলেন, আমার এই স্ক্যান করিয়ে কাজ শেষ। বাকিটা ওনার।
বললাম, কবে দেখা করব? শুনলাম, আগামীকাল রবিবার, পরশু সোমবার ছুটি (ঈদ) মঙ্গলবার আসুন।
রবি সোম কোনোমতে কাটিয়ে মঙ্গলবার গেলুম। উনি বললেন স্ক্যান হয়ে গেছে, আমি আজ রিপোর্ট দেখার সময় পেলে কাল জানাব।
ফিরে এলাম। ফের বুধবার গিয়ে হাজিরা দিলাম। উনি বললেন, ওনার একটা কিডনিতে সিস্ট আছে আরেকটা কিডনির মাথায় বিশাল বড় টিউমার আছে। কিন্তু যেহেতু ওগুলো কিডনির কাজে বাধা হচ্ছে না, তাই অপারেশান আমরা করছি না। পটাশিয়ামটা বাড়লেই ছেড়ে দেব।
আনন্দে বাড়ি ফিরলাম। রাস্তায় হঠাৎ মনে হল - টিউমার? বিনাইন না ম্যালিগন্যান্ট?
বৃহস্পতিবার গেলাম না। আজ গেলাম। গিয়ে শুনলাম ডাক্তার বাড়ি চলে গেছেন বাবাকে বাড়ি যাওয়ার ছাড়পত্র দিয়ে। জুনিয়ার ডাক্তারের কাছে ভার দেওয়া। তার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। বললাম, যে টিউমারটা পাওয়া গেছে সেটা বিনাইন না ম্যালিগন্যান্ট?
তিনি আমার মুখের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে বললেন, টিউমার? কই টিউমার? দুটো কিডনিতে দুটো সিস্ট আছে, ব্যস! আর উচ্চরক্তচাপটাকে সাবধানে রাখতে হবে।
বললাম আর কিছু?
উনি বললেন, না। যাওয়ার আগে সিস্টার সব কাগজ বুঝিয়ে দেবেন।
ডাক পড়ল। কাগজ বুঝতে এলাম। একটা কাগজে হাতে লেখা সব রিপোর্টের সংক্ষিপ্তসার। বললাম স্ক্যানের প্লেট পাব না?
সিস্টার বললেন, না। স্পেশাল কেস ছাড়া দেওয়া হয় না।
ফেরার পথে সে কাগজে চোখ বুলাতে গিয়ে দেখি লেখা, রেনাল ক্যালকুলি। অর্থাৎ বৃক্ক পাথুরি। সাথে সিস্ট আছে অবিশ্যি। কিন্তু এই পাথরের কথা তো কই কেউ বললেন না...
কিন্তু গাড়ি ততক্ষণে শিয়ালদহ ছেড়ে রাজাবাজারের রাস্তায়।
কথা হল, তবে হলডা কি?