সৌরভ ভট্টাচার্য
11 September 2020
অভিসারের কোনো নির্ঘন্ট হয় না
রচনাঃ সৌরভ ভট্টাচার্য্য
পাঠঃ সংহিতা ব্যানার্জী
মূল কবিতা
========
বাঁশি পাঞ্চজন্যকে বলল, ভালো আছো?
পাঞ্চজন্য বলল, তোর বুকে সুর ওঠে?
বাঁশি বলল, ধুলো জমেছে।
পাঞ্চজন্য বলল, আমার বুকে কারা যেন বাসা বেঁধেছে, সারাদিন ঘড়ঘড়, ফিসফাস আওয়াজ।
সূর্যোদয় হল। সূর্যের প্রথম আলো এসে পড়ল বাঁশি আর পাঞ্চজন্যের উপর। নদীর তীরে ধীরে ধীরে জনসমাগম হতে শুরু করল। এর পায়ে, ওর পায়ে ধাক্কা লাগতে লাগতে পাঞ্চজন্য আর বাঁশি জলের ধারে গিয়ে পড়ল। জলের ঢেউ আছড়ে পড়ল তাদের উপর।
জল বলল, আমার সাধ্যমত ধুয়ে দিলাম। আজ জন্মাষ্টমী। ওরা ভুলে গেছে তোমাদের।
বাঁশি বলল, আমি বাজলে হৃদয় গলে ভালোবাসা হত।
পাঞ্চজন্য বলল, আমি বাজলে দুষ্ট যে সে প্রহর গুনতো, প্রলয়ের।
জল বলল, সে প্রাচীন কথা। এখন অনেক নকল বাঁশি, অনেক নকল পাঞ্চজন্য।
তাদের সুর? তাদের স্বর? - পাঞ্চজন্য আর বাঁশি জিজ্ঞাসা করল।
জল বলল, সেও নকল, কিন্তু আসল সুর কে চিনবে? হৃদয়ের উপর ধন আর পাণ্ডিত্যের অভিমানের চাঙড়। কানে আত্মপ্রশংসার ধুন।
পাঞ্চজন্য আর বাঁশির বুকের ভিতর দিয়ে জল বয়ে যেতে লাগল। নদীর তীর কোলাহলে পূর্ণ।
হঠাৎ জল বলল, ওই দেখো..
পাঞ্চজন্য আর বাঁশি দেখল, একটা শিখীপাখা ভেসে ভেসে আসছে এদিকে। ভাসতে ভাসতে সে এসে ঠেকল বাঁশির গায়ে।
বাঁশি বলল, সে কোথায়? পাঞ্চজন্য বলল, সেকি ভুলে গেছে আমাদের?
শিখীপাখা বলল, সে ওই, ওর মধ্যে।
বাঁশি বলল, ও যে ভিড়, শুধুই উচ্ছৃঙ্খল কোলাহল।
শিখীপাখা বলল, ওর মধ্যেই জাগবে আবার সুর, ওর মধ্যেই বাজবে আবার আহ্বান, ওরাই সাজবে আবার উদার চেতনায়, সেদিন আবার ডাক পড়বে তোমাদের।
এখন নয় কেন? বাঁশি জিজ্ঞাসা করল।
শিখীপাখা বলল, জানি না। কেউ জানে না এর উত্তর। তার অভিসারের কোনো নির্ঘণ্ট হয় না, যন্ত্রণার ঘট পূর্ণ হলেই আসবে ডাক। অপেক্ষা করো।