দিদার মুখে ছোটবেলায় অনেক গল্প শুনতাম। তার মধ্যে একটা গল্প আজও সময়ে অসময়ে খুব মনে পড়ে। গল্পটা বলছি। দিদা কোথায় পড়েছিলেন জানি না। হয়তো অনেকের জানা। তবু যাঁদের অজানা তাঁদের জন্যই বলছিঃ
একটা জেলে পরিবার। নদীর ধারে তাদের ছোট বাড়ি। পরিবার বলতে, একজন বৃদ্ধ মানুষ, তাঁর ছেলে ও ছেলের বৌ আর তাদের দুই ছেলে মেয়ে। বৃদ্ধের স্ত্রী গত হয়েছেন অনেক বছর হল।
একদিন রাতে শুতে যাওয়ার সময় বৃদ্ধের ছেলের বৌ, ছেলেকে বলল, হ্যাঁ গো বাবা তো পুরো অথর্ব হয়ে গেছেন। বসে বসে খাচ্ছেন আর শুয়ে থাকছেন। কিচ্ছু কাজ করছেন না। আমাদের উপর বোঝা হয়ে আর কতদিন থাকবেন এরকম? ছেলে বলল, সে তো ঠিক। কিন্তু কি করি বলো তো?
বউ বলল, কি আর করবে, কোনো এক দ্বীপে নিয়ে গিয়ে ছেড়ে এসো না।
ছেলে বলল, ঠিক বলেছ। তারপর ভগবান যা করেন করবেন।
ছেলে পরের দিন সকালে উঠে বাবাকে বলল, বাবা চলো তোমায় ঘুরিয়ে নিয়ে আসি। কতদিন বাইরে বেরোওনি তুমি।
বাবা বললেন, চল।
ছেলে বাবাকে এ নদী সে নদী ঘুরিয়ে অনেক দূর নিয়ে গেল। তারপর বলল, বাবা একটা কথা বলি? তুমি অপরাধ নিও না যেন।
বাবা বললেন, বল না কি বলবি।
-বলছিলাম কি, তোমার তো এখন অনেক বয়েস হয়েছে। কাজ করার, রোজগার করার অবস্থাও নেই। আমারই বা আর কত উপার্জন বলো। দুটো ছেলে মেয়ে আছে। তাদের বড় করতে হবে। বুঝতেই পারছ। তোমার বোঝা আমি আর টানতে পারছি না। তাই বলছিলাম কি, তোমায় এই সামনের দ্বীপটাতে ছেড়ে দিয়ে যাচ্ছি। ভগবান তো রইলেনই, যে ক'দিন তোমার বাঁচার সে ক'দিন তিনিই তোমায় বাঁচিয়ে রাখবেন।
বৃদ্ধ চুপ করে শুনলেন। তারপর একটু মৃদু হাসলেন। বললেন, খোকা আরেকটু এগিয়ে চল, এই দ্বীপে নামাস না।
ছেলে অবাক হয়ে বলল, কেন বাবা? এই দ্বীপ খারাপ কিসে?
বৃদ্ধ বললেন, এই দ্বীপে তোমারই মত বয়সে আমি তোমার ঠাকুরদাকে ছেড়ে গিয়েছিলাম।