প্রথম কথা এটা মনে রাখতেই হবে, মানুষ হয়ে জন্মেছেন মানে বোকা হবেন বলেই জন্মেছেন। “আমি কোনোদিন বোকা হব না” এই বোকামিটা করবেন না প্লিজ। বোকা হতে হতে বড় হবেন। বুড়ো হবেন। বোকা হয়েই একদিন ঠকাস করে মরে যাবেন। বোকার মত ভালোবাসবেন। বোকার মত কষ্ট পাবেন। বোকার মত চালাকি করবেন। বোকার মত পস্তাবেন। বোকার মত দীর্ঘশ্বাস ফেলবেন। বোকার মত খুশী হবেন। বোকার মত সফল হবেন। বোকার মত ব্যর্থ হবেন। বোকার মত ঈর্ষাকাতর হবেন। বোকার মত গর্বিত হবেন। বোকার মত বিশ্বাস করবেন। বোকার মত সন্দেহ করবেন। এ চলতেই থাকবে।
মানুষ যত যত দিন সেলিব্রেট করে তার মধ্যে এই দিনটা সব চাইতে সৎ। কোনো ভণ্ডামি নেই। একদম খাঁটি কথা। বোকা হয়ে জন্মেছি। বোকা হয়েই মরব। মাঝে অজস্র বোকামি করব। পালাবার পথ নাই।
সক্রেটিস কেমন আসল কথাটা বলে রেখেছেন দেখুন, “আমিই সব চাইতে বুদ্ধিমান, কারণ এক আমিই জানি, আমি কিছুই জানি না”।
আহা, প্রাণে যে কী শান্তি। কী আরাম লাগে এ কথাটা শুনলেই। নিজের বোকামিকে জানতে পারার মত সুখ জগতে আর একটিও নেই। যে যত গভীরে জানে সে আসলে একটি নিরেট বোকা, সে তত শান্তিতে, আনন্দে জগতে বাঁচতে পারে। আমাদের বোকা হওয়ার পূর্ণ ছাড়পত্র দিয়েই এ জগতে পাঠানো হয়েছে।
তবে নিজের বোকামিকে কী কী ভাবে উদযাপন করা যায়? তার একটা লিস্টি আমি আমার মত করে নিয়েছি।
১) ঘুম থেকে উঠেই ভাববেন, আমার সমস্ত বোকামিকে আমি স্বীকার করে নেব। আজকে তার মধ্যে একটা দিয়ে শুরু করি। দিনে একটা বোকামিকে আবিষ্কার করা মানে প্রায় মধ্যাকর্ষণতত্ত্ব আবিস্কার করার সামিল মনে রাখবেন।
২) যদি বোকামিকে চিনতে পারার পর দুঃখ হয় মনে মনে, তবে জানতে হবে সব বোকামিটা জানা হচ্ছে না, আসলে তলে তলে লাভ-লোকসানের হিসাব চলছে। বিশুদ্ধভাবে বোকামির অন্বেষণ করতে হবে। চালাকি দিয়ে নয়।
৩) জগতে অন্যের বোকামির পাশে নিজের বুদ্ধির দিকটা রেখে তুলনা করবেন না। ওটা একটা পচা খেলা। সে যেখানে বোকা, আপনি হয় তো সেখানে একটু কম বোকা। কিন্তু সে যেখানে একটু কম বোকা, আপনি হয় তো সেখানে একদম ছড়িয়ে বোকা।
৪) প্রতিদিন নিজের বোকাসত্ত্বাটাকে ভালোবাসতে শিখুন। কারণ সে অনন্ত। সে অসীম। আপনার বুদ্ধি নিতান্ত সীমিত। ও দিয়ে বেশিদূর যাওয়া যায় না। নিজের মধ্যে যে ভুঁইফোড় বোকাসত্ত্বা আছে, সে-ই আমি। মানে আসল আমি।
৫) কাউকে বোকা বানাতে যাবেন না। অসীম এ বোকামির সাগরে একটা নিজের তৈরি বোকামির ঘূর্ণি বানাতে গেলে শেষে নিজেকেই সেই ঘুর্ণির মধ্যে পড়তে হয়। এবং ততক্ষণ সে স্বরচিত ঘুর্ণিতে ঘুরে যেতেই হয় যতক্ষণ না নিজেই আবার সেই ঘুর্ণিকে নিজের হাতে শেষ করে দেন। বড় জ্বালা।
৬) মাঝে মাঝে নিজের বোকামিকে সেলিব্রেট করুন। একা একা বসুন। নিজের একটা বাজখাঁই বোকামিকে স্মরণ করুন। তারপর প্রফুল্লচিত্তে ভাবুন, তারপরও আপনি আজকের দিনটা অবধি টিকে আছেন। নিজের সেই বোকামিকে স্মরণ করার সুযোগ পাচ্ছেন। কৃতজ্ঞ হোন।
৭) অন্যের বোকামিকে ক্ষমা করুন। কারণ নিজের ও অন্যের বোকামিকে ক্ষমা করতে করতে এগোনোই আসল তপস্যা। যেমনভাবে আমরা দুটো বিশ্বযুদ্ধকে ক্ষমা করেছি, হিরোশিমা ক্ষমা করেছি। অন্তত চেষ্টা চালাচ্ছি, তেমন আরকি। তবু তো ওসব ভুলে সামনের দিকে এগোনোর চেষ্টা চালাচ্ছি। তেমনভাবেই অন্যের বোকামিকে ক্ষমা করুন। নিজের অসীম বোকামির দিকে তাকান, সঙ্গে সঙ্গেই ক্ষমা করার শক্তি পেয়ে যাবেন।
৮) প্রচুর পড়াশোনা করুন। সিনেমা দেখুন। কিন্তু বদহজম না হয় যেন। হলেই শুরু হবে অন্যকে আঘাত করার খেলা। নিজের ক্ষমতার নিষ্ঠুরতম দিকটির পূর্ণশক্তিতে ব্যবহার। কিন্তু বাস্তবে এ সবই হচ্ছে এক বিন্দু বোকামিকে ম্যানিপুলেট করে সাজিয়েগুছিয়ে নানা সঙ্কীর্ণ অ্যাজেন্ডা হাসিল করার মতলব। সময় যদ্দিন সাথ দেবে এ খেলা চলবে, তারপর বোকাহাঁদার মত জগত থেকে বিদায় নিতে হবে। যেমন অনেক নিষ্ঠুর রাজাউজির নিয়েছে বিদায়।
৯) বোকামি স্বাভাবিক। বোকাহাঁদামিটা বদহজমীয় পণ্ডিতি। অস্বাভাবিক। এই যে বোমাবারুদ নিয়ে একের পরে এক প্রাণ নষ্ট করে দেওয়া। এ বোকামি না। এ বোকাহাঁদামি। এ দেখলে বোকার চোখে জল আসে। বোকাহাঁদের সব সময় রক্তচক্ষু।
১০) রামকৃষ্ণদেব বলছেন, চিনির পাহাড় আছে। একটা পিঁপড়ে এক দানা মুখে করে নিয়ে যেতে যেতে বলছে, পরেরবার সবটা নিয়ে চলে যাব।
একজন বলছেন, কিন্তু তা শুকদেব ইত্যাদিরা পণ্ডিতেরা?
রামকৃষ্ণদেব বলছেন, তারা হদ্দ ডেঁয়ো পিঁপড়া। বড়জোর আরো দুটো দানা বেশি নিতে পারে। ওর বেশি না।
রামকৃষ্ণদেব বোকামিকে স্বীকার করে নিতে বলছেন। সক্রেটিসের মত। কারণ জ্ঞান মানেই অজ্ঞানের অসীমত্বকে জানা।
উপসংহার। জীবনটা বোকামির। মরণটাও। মাঝে শুধু বোকাহাঁদামি না করে মরি, এটাই দেখার। জয়গুরু।