সৌরভ ভট্টাচার্য
17 October 2019
রাত হয়েছে। রেল কলোনির ফাঁকা ফাঁকা রাস্তা। আমরা কয়েকজন মিলে সারাদিনের ক্লান্তিকর কাজের শেষে বেরোলাম চা খেতে। চায়ের দোকান বন্ধ, আজ যে বৃহস্পতিবার। তাতে কি, গল্পের দোকানে আঁচ চড়েছে ততক্ষণে। কথা ফুটছে টগবগিয়ে। সব কথাগুলো মানচিত্রহীন। এলোমেলো। আমাদেরই মত।
কথা বলতে বলতে আমি একা খানিক দূরে এসে দাঁড়ালাম। ছবিতে একজন বাদে সবাই আমার কোনো না কোনো সময়ের ছাত্র। তারা এখন এক একজন দায়িত্বশীল, নিজস্বতা নিয়ে গড়া পূর্ণ মানুষ। ওদের একটু দূর থেকে দেখতে ভালো লাগে, স্বস্তি পাই। সে আমার ছাত্র ছিল বলে না, ওদের এই বেড়ে ওঠার সাক্ষী ছিলাম বলে। সময়ের নদীতে নিজের দাঁড় বাওয়ার সাক্ষী তো সবাই, কিন্তু এত কাছ থেকে কয়েকটা মানুষের বেড়ে ওঠার সাক্ষী হতে পারা ভাগ্যের। বোধের বিস্তার হয়।
রাতের অন্ধকারে পিচের রাস্তায় কাঠের আওয়াজ। একজন মানুষ, ক্রাচ নিয়ে আসছে। দুটো হাতে দুটো ব্যাগ। মাথার উপরের স্ট্রিট লাইটের আলোয় স্পষ্ট হল অবয়ব। ক্লান্ত রুগ্ন শরীর, বয়েস হয়েছে।
দেবাশীষের ব্যাগে নাড়ুর কৌটো, আমাদের সবার জন্য। তাকে দিতে গেল দেবাশীষ। একজন ভাবল ছবি তুলবে সে যখন পেরিয়ে যাবে সামনের মোড়ের শিরীষগাছটার বাঁক দিয়ে। তোলা হল না। দেবাশীষ গল্প করছে তার সাথে।
সে মানুষটা কাজ করতে করতে একদিন পড়ে যায়। কোমরের আর পায়ের হাড় ভাঙে। মালিক চেষ্টা করেছিল, সফল হয়নি অপারেশান। তবু মালিক ছাড়ায়নি। কাজের দেখাশোনা করে, অল্প কিছু পায় চলেই যায়। একা থাকে, অকৃতদার। একটা ছোটো ঘর তার, বস্তিতে।
নাড়ু তার ব্যাগে ভরে দেবাশীষ ফিরে এল। সে ঘরে ফিরছে, একা। যে বাড়িতে কেউ নাড়ু বানায় না কখনও। কোনো তিথি উৎসব যে বাড়ির দরজায় দাঁড়ায় না। কিন্তু আজ সে দাঁড়িয়েছিল, সে ভিখারি তো নয়, তবু সে দাঁড়িয়েছিল। কারণ, আজ উৎসব। অকারণে কথা বলার উৎসব। এক লহমায় অপরিচিতকে পরিচিত করার মুহূর্তকে বলে উৎসব। রবীন্দ্রনাথ বলেন পরকে আপন করিবার শক্তি থাকা চাই। মানুষের তা আছে তাই, আকাশের চাঁদ মামা হয়, কিন্তু সে শক্তির বিকাশ না হলে পাশের বাড়ি অন্য জগত হয়।
যে ছবি তুলবে ভেবেছিল সে ছবি তুলল না। সে জানে কখন ছবি না তোলাটাও চেতনা। কিছু মুহূর্তকে স্মৃতির খাতায় দুটো সাদা পাতার মধ্যে রাখতে হয়। সুগন্ধ পাওয়া যায়।
কথা বলতে বলতে আমি একা খানিক দূরে এসে দাঁড়ালাম। ছবিতে একজন বাদে সবাই আমার কোনো না কোনো সময়ের ছাত্র। তারা এখন এক একজন দায়িত্বশীল, নিজস্বতা নিয়ে গড়া পূর্ণ মানুষ। ওদের একটু দূর থেকে দেখতে ভালো লাগে, স্বস্তি পাই। সে আমার ছাত্র ছিল বলে না, ওদের এই বেড়ে ওঠার সাক্ষী ছিলাম বলে। সময়ের নদীতে নিজের দাঁড় বাওয়ার সাক্ষী তো সবাই, কিন্তু এত কাছ থেকে কয়েকটা মানুষের বেড়ে ওঠার সাক্ষী হতে পারা ভাগ্যের। বোধের বিস্তার হয়।
রাতের অন্ধকারে পিচের রাস্তায় কাঠের আওয়াজ। একজন মানুষ, ক্রাচ নিয়ে আসছে। দুটো হাতে দুটো ব্যাগ। মাথার উপরের স্ট্রিট লাইটের আলোয় স্পষ্ট হল অবয়ব। ক্লান্ত রুগ্ন শরীর, বয়েস হয়েছে।
দেবাশীষের ব্যাগে নাড়ুর কৌটো, আমাদের সবার জন্য। তাকে দিতে গেল দেবাশীষ। একজন ভাবল ছবি তুলবে সে যখন পেরিয়ে যাবে সামনের মোড়ের শিরীষগাছটার বাঁক দিয়ে। তোলা হল না। দেবাশীষ গল্প করছে তার সাথে।
সে মানুষটা কাজ করতে করতে একদিন পড়ে যায়। কোমরের আর পায়ের হাড় ভাঙে। মালিক চেষ্টা করেছিল, সফল হয়নি অপারেশান। তবু মালিক ছাড়ায়নি। কাজের দেখাশোনা করে, অল্প কিছু পায় চলেই যায়। একা থাকে, অকৃতদার। একটা ছোটো ঘর তার, বস্তিতে।
নাড়ু তার ব্যাগে ভরে দেবাশীষ ফিরে এল। সে ঘরে ফিরছে, একা। যে বাড়িতে কেউ নাড়ু বানায় না কখনও। কোনো তিথি উৎসব যে বাড়ির দরজায় দাঁড়ায় না। কিন্তু আজ সে দাঁড়িয়েছিল, সে ভিখারি তো নয়, তবু সে দাঁড়িয়েছিল। কারণ, আজ উৎসব। অকারণে কথা বলার উৎসব। এক লহমায় অপরিচিতকে পরিচিত করার মুহূর্তকে বলে উৎসব। রবীন্দ্রনাথ বলেন পরকে আপন করিবার শক্তি থাকা চাই। মানুষের তা আছে তাই, আকাশের চাঁদ মামা হয়, কিন্তু সে শক্তির বিকাশ না হলে পাশের বাড়ি অন্য জগত হয়।
যে ছবি তুলবে ভেবেছিল সে ছবি তুলল না। সে জানে কখন ছবি না তোলাটাও চেতনা। কিছু মুহূর্তকে স্মৃতির খাতায় দুটো সাদা পাতার মধ্যে রাখতে হয়। সুগন্ধ পাওয়া যায়।