ফিরে ফিরে আমায় মিছে ডাকো স্বামী--
সময় হল বিদায় নেব আমি॥
অপমানে যার সাজায় চিতা
সে যে বাহির হয়ে এল অগ্নিজিতা।
রাজাসনের কঠিন অসম্মানে
ধরা দিবে না সে যে মুক্তিকামী॥
আমায় মাটি নেবে আঁচল পেতে
বিশ্বজনের চোখের আড়ালেতে,
তুমি থাকো সোনার সীতার অনুগামী॥
~ রবীন্দ্রনাথ
হতে পারে আজ বাইশে শ্রাবণ। সে শুধুমাত্র পৃথিবীর সূর্যকে প্রদক্ষিণের এক হিসাব। আর কিছু ইতিহাস। যে চিত্ত অমর, সে চিত্তের বাইশে শ্রাবণ হয় না।
মাটির সীতা না সোনার সীতা? রবীন্দ্রনাথ মাটির সীতার কথা বলেছেন। বিবেকানন্দর মতে সে সীতা শুদ্ধতম সর্বশ্রেষ্ঠ চরিত্র। সারদাদেবী বলতেন ক্ষমারূপ তপস্যা। রবীন্দ্রনাথের সামনে একজন অত্যন্ত ক্ষুব্ধতার সাথে কারোর সম্বন্ধে বলছেন, যিনি কোনোভাবে কখনও রবীন্দ্রনাথকে অপমান করেছিলেন, তিনি বলছেন "আমি কিন্তু ওকে ক্ষমা করতে পারব না"। রবীন্দ্রনাথ বলছেন, আমি পারি। তোমাদের সাথে ওইটুকুই আমার পার্থক্য।
আজ এই কথাটাই মনে রাখব, রবীন্দ্রনাথকে আমরা পেয়েছিলাম, অসীম ক্ষমায়। তিনি আমাদের ক্ষমা করতে পেরেছিলেন বলে তিনি বলতে পেরেছিলেন, "আমি তোমাদেরই লোক"। নইলে আমাদের তাকে পাওয়ার কোনো যোগ্যতাই কোনোদিন ছিল না। বিশ্বাস না হলে তার চিঠিপত্র আর জীবনীটা পড়তে বলি। ভীষ্ম শরশয্যায় কতদিন শুয়েছিলেন জানি না, খ্রীষ্ট কতক্ষণ ক্রুশবিদ্ধ হয়েছিলেন জানি না, কিন্তু এই মানুষটাকে যতদিন ক্রুশবিদ্ধ ঝুলে থাকতে হয়েছে, শরশয্যায় শুয়ে থাকতে হয়েছে তার হিসাব পরমায়ুর সিংহভাগ জুড়েই আছে। তিনি ক্ষমা করেছিলেন বলে আমরা তার কাছে যেতে পেরেছি, তিনি ক্ষমা করে আমাদের দিকে তাকিয়েছিলেন বলে আমরা তার সৃষ্টির মধ্যে নিজেদের জীবনের রসদ খুঁজে পাচ্ছি। সত্যিই নইলে আমাদের কোনো যোগ্যতা সেদিনও ছিল না, আজও নেই। নইলে যে মানুষ শহরে মহামারি হচ্ছে বলে নিজের সব কাজ ফেলে কলকাতায় ফিরে আসে, সে মানুষের দেশে আজ সোনার সীতার আহ্বান শুনতে লজ্জা পেত দেশবাসী। আজ শুশ্রূষার দিন। সেবার দিন। উৎসবের দিন নয়।
বাইশে শ্রাবণ, তাই আজ ক্ষমা চাওয়ার দিন। যে মানুষটাকে বাইশে শ্রাবণের আগেই বহুবার মরমে মৃত্যুর স্বাদ পাইয়ে দিয়েছি আমরা, তার কাছে নত হওয়ার দিন। রবীন্দ্র সূর্যাবর্তে বাইশে শ্রাবণের কোনো মূল্য নেই। আমাদের জীবনে আছে। ক্ষমা চাওয়ার। অসংখ্য ভণিতা থেকে মুখ ফেরাবার।