Skip to main content

ছেলেটার নাম ধরি, প্রত্যহ। সে ভালোবাসল, ধরি প্রাত্যহিকীকে। ধীরে ধীরে হৃদয়ের সব দিক দিল খুলে। প্রথমে খুলল, পূব পশ্চিম উত্তর দক্ষিণ। সে আরো এগোলো। ঈশান, অগ্নি, বায়ু, নৈঋত দ্বার দিল খুলে। ছেলেটা আরো এগোলো। ঊর্দ্ধ অধঃ দূর্গ তোরণ দিল খুলে। 
সে ভাবল দশদিক দিয়ে আসবে বসন্তসমীরণ। আনবে পারিজাতের পাঁপড়ি, স্বর্গের উপবন থেকে। তারা ভাসবে অমরাবতীর মাধুর্যে।
হল না। গ্রীষ্মের দাবদাহ হল শুরু। মরুভূমির বালি আসল উড়ে। সব মাধুর্যের অবসান হল বিধ্বস্ত চূর্ণ বিচূর্ণ হৃদয়ে মস্তিস্কে। বিশ্বাসঘাতকতার কালো মেঘে ছেয়ে গেল তার দশদিক। পড়ল মুখ থুবড়ে। 
কাল গেল। চারদিকে এখনো বিগত ধ্বংসের চিহ্ন। প্রত্যহ উঠে দাঁড়াল। হৃদয়ের দশদিকে দিল কপাট। দিল তালা। দিল শিকল। পাথর দিয়ে বন্ধ করল তিল মাত্র ফাঁক। 
এখন সে খেলোয়াড়। প্রেমের সাথে খেলে বেড়ায়। যারা দশদিক খুলে ভালোবাসে তাদের করুণা করে। ব্যঙ্গ করে। প্রেমের প্রতি তার আজ কি তীব্র ঘৃণা। কি গভীর বিদ্বেষ। 
তবু সে প্রেমিকের ছদ্মবেশে ঘোরে। এর ওর প্রেম নিয়ে কখনো ফুটবলের মত পায়ে পায়ে দৌড়ায়। অপরপক্ষের অসতর্ক মুহুর্তে দেয় গোল। 
কখনো খেলে ক্রিকেটের মত। ধূর্ত বলে করে বোল্ড। কখনো খেলে কিত্কিত্। অপরপক্ষকে নিজের কোর্টে এনে করে হেনস্থা। কখনো ভলিবলের মত প্রেমকে নিয়ে করে লোফালুফি। কখনো ড্যাংগুলির মত মারে - হুস...
আরো কত রকম খেলা সে জানে! খেলতে খেলতে সে এখন প্রেমে ফেলার সুদক্ষ খেলোয়াড়। কত কৌশল, কত ষড়যন্ত্র তার নখদর্পণে আজ। যখনই কেউ হারে, তার চোখে মুখে ফোটে নিষ্ঠুর আনন্দের রেশ। সে তার ভিতরের প্রতিশোধের দানবকে দেয় অর্ঘ্য, কারোর প্রেমের বলিদানে। সে দানব হয় তৃপ্ত। 
প্রত্যহর মুখ চোখ বদলে গেছে এখন। তার প্রতিশোধ স্পৃহা তাকে অন্য রকম করেছে, সে বোঝে। আত্মগ্লানিতে ওর মাঝে মাঝে মনে হয় - দিই তাড়িয়ে ওই দানবটাকে বুক থেকে চিরে বার করে। পারে না। যেন ওই দানবটাই ওর বাঁচার সম্বল, উদ্দেশ্য এখন। সে আবার মাতে নতুন খেলায়। নতুন নেশায়। 
মাঝরাতে তার ফোঁপানো কান্না শোনা যায়, তেমনভাবে কান পাতলে। সে মাঝরাতে উঠে হৃদয়ের দশদিকের তালাগুলোকে স্পর্শ করে, চুমু খায়। 
আচ্ছা ওকি পাগল হবে শেষে? 
আঃ..... এসব চিন্তা কেন এখন? কি হবে না হবে সে ভবিষ্যতের কালো গর্ভেই থাক ঢাকা। ওই যে সে খেলছে। ওই যে নতুন আরেকটা ফাঁদ পেতেছে। সে বসেছে দাবার গুটি সাজিয়ে। খেলবে চোরাগোপ্তা খেলা। প্রেমের ছদ্মবেশে। কাউকে শাস্তি দিয়ে, সে চির অতৃপ্ত প্রতিশোধ নিতে।