আচ্ছা আপনাদের কি কোনো কাণ্ডজ্ঞান নেই! আমি বিজ্ঞানী মহাশয়দের বলছি। দু'দিন ধরেই ভয় দেখিয়ে চলেছেন – কলকাতার নীচ দিয়ে এমন একখানা পাত গেছে নাকি যে, তা একবার নড়েচড়ে বসলেই সব হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়বে। আজ আবার আরেকদল বিজ্ঞানী বলছেন, উঁহু শুধু তা তো নয়! পুরো হিমালয়ের নীচেই নাকি এমন ধারা পাত আছে যে, যে কোনোদিন নাকি পাতাল প্রবেশ হতে পারে। আপনাদের জন্মের সময় কেউ কি একফোঁটা মধুও মুখে দেয় নি, যে দুটো ভালো কথা বেরুবে। আর বলি, আচ্ছা তাই না হয় হল। তা বলে হিমালয়শুদ্ধ মানুষ আর কলকাতাশুদ্ধ মানুষ তো আর মাঠে গিয়ে বাস করতে পারে না এতদিন! আপনাদের এত ভিতরের খবর বাইরে প্রকাশ্যে বলার কি আছে বাপু। বলি সংসার-টংসার তো আছে, না কি! জানেন না সেখানেও অনেক ভিতরের খবর থাকে, তা অমন প্রকাশ্যে ঢ্যাঁড়া পিটিয়ে বললে সংসারে এমন ভূমিকম্প হবে যে রিখটার স্কেলের ঠাকুরদাও মাপতে পারবে না!
তাই গোপন কথাটি গোপনেই থাক। তার ওপর যখন আপনি দিনক্ষণ বলতেই পারছেন না, এমনকি বেণীমাধব শীল মহাশয়ও কিচ্ছুটি বলতে পারেননি তখন মানুষগুলোকে ব্যতিব্যস্ত করে কি হবে? সারাদিন কি আর পাখা, কুয়ো, পুকুর, জলের বোতল, কি আরো কিছু ঝুলন্ত জিনিসের দিকে তাকিয়ে বসে থাকতে হবে - এই বুঝি ফের কাঁপাকাঁপি শুরু হল বলে?! কিছু নিন্দুকেরা নাকি বলেছেন সুকুমার রায় এর আভাস দিয়েছিলেন। সেই 'হ য ব র ল' গল্পে উনি বলেছেন না, একটা লোক সব কিছুর নামকরণ করত। যেইমাত্র বাড়ির নাম দিয়েছে ‘কিংকর্তব্যবিমূঢ়’, অমনি বাড়িটা হুড়মুড় করে ভেঙেছে ভূমিকম্পে। সে কথা যাক।
আচ্ছা আরেকটা দিক ভেবে দেখুন। আমাদের কাঁপাতে কি শুধু মাটির নীচের পাতই লাগে! তা হলে লোকসভা, বিধানসভা, পুরসভাগুলো আছে কি কত্তে!
এই লোকসভার কথাই ধরুন না। ছেলেটা এতদিন নির্বাসন কাটিয়ে সবে মাত্র কৃষকদের জন্য মনটা কাঁদিয়ে দুফোঁটা চোখের জল ফেলেছে কি ফেলেনি, অমনি ভুমিকম্প! আরে খবরের প্রথম পাতায় কি কখনো আসতে পারবে না গো!
আর ওই সৎ মানুষটার কথা ভাবুন, তিনিও কৃষকদের নিয়ে দেশের রাজধানীতেই একটা জ্বালাময়ী করুণার স্রোত তুলে সব সমস্যার সমাধান প্রায় করে ফেলছিলেন, অমনি কে একটা গলায় দড়ি দিয়ে বসল। এমনিতেই তো আরো দুজন সৎ মানুষ তাঁর অত্যান্তিক সততার দাপট সহ্য করতে না পেরে ঝামেলা পাকাচ্ছে, তার উপরে তুইও? কেন রে, তোর দেশে কি গাছ ছিল না, না দড়ি ছিল না? দিলি তো পুরো স্ক্রিপ্টটা ভণ্ডুল করে! এও কি কম ভূমিকম্প!
ওদিকে তেনারাও সবে একজন নতুন কর্ণধার ঠিক করেছেন বিশাখাপত্তনমে, শুভ একটা সূচনা হয়েই যাছিল প্রায়, একটা তৃতীয় ফ্রন্টের কথা ভাবাও যাচ্ছিল, কে যে 'কু' ডেকে দিল কে জানে! ফাঁকতালে আবার সেই লোকটা ত্রাণের কাজে এগিয়ে গিয়ে ফের আন্তর্জাতিক মহলে টেক্কা দিয়ে বসল। সত্যিই ভাগ্য সহায় হলে কি না হয়! ফের নিন্দুকের দলের নাক গলানো, বলে নাকি চীনকে টেক্কা দিতেই এসব। সত্যি রে বাবা, দেশে একটা ভাল কাজ যদি নিশ্চিন্তে করা যায়!
তবে এর মধ্যে যা হোক একটা শান্তিপূর্ণ পুরোভোট হয়ে গেল! (নিন্দুকদের কথায় কান দেবেন না, এত নিউজ চ্যানেল দেখার কি আছে! সিরিয়াল দেখুন, গন্যমান্য মানুষদের আঁকা ছবি দেখুন, গান শুনুন)।
অবশেষে একটা নতুন অবকাশ যাপনের পদ্ধতি বলে কলমের খাপ বন্ধ করি। কোনো এক তরুন অধ্যাপকের মস্তিস্কপ্রসূত পদ্ধতি, সুতরাং ক্রিয়েটিভিটির দিকটা হেলা করলে চলবে না। তিনি নাকি অবসর সময়ে জানলার পাশে খাটে বসে পা দুলিয়ে দুলিয়ে রাস্তার লোকদের এয়ারগান থেকে টুকুস টুকুস করে গুলি (নিরীহ) ছুঁড়ে মারেন। মাঝে মাঝে যে ফস্কায় না, তা নয়। তবে কিছু কিছু অব্যর্থভাবে লক্ষ্যে গিয়েও লাগে। আর লোকজনও হয়েছে তেমনই বেরসিক। অমন শিশুর মতন মানুষটার নামে নালিশ জানিয়ে, তাকে কোর্টে নিয়ে গিয়ে ছেড়েছে! কেন আমরা কি ভুলে গেছি এই দুনিয়ায় কত মহাপুরুষের মধ্যে এরকম কতরকম ছেলেমানুষীতে ভরা ছিল, থুড়ি আছে!
সৌরভ ভট্টাচার্য
27 April 2015