Skip to main content

 

rrrrrrrrrrrrrrrrrrr.jpg

 

Ullozhukku। মালায়ালাম সিনেমা। অর্থ undercurrent. দুই মহিলার গল্প। অসহায়তার গল্প। সামাজিক, অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের গল্প। মানুষের জীবনের কতটা তার নিজের? তার ইচ্ছার মূল্য, স্বাধীনতা কতটা? নীতি, মান-সম্মান এসব কী আদৌ মৌলিক কোনো অস্তিত্ব? নাকি এসবই চারপাশের সঙ্গে বদলে বদলে যায়? অবশেষে জেগে থাকে আত্মসম্মানবোধ। যেটা ছাড়া যায় না। যেটা ছেড়ে দিলে নিজের অস্তিত্ব সংকটে এসে দাঁড়ায়।

সম্পর্ক শাশুড়ি আর বৌমার। বাকিটা সমাজ। বাইরের সমাজ। ভিতরের সংস্কার। স্বামী মারা গেছে। মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। কেরলের এক গ্রামে ছেলে আর মা থাকে। ছেলের বিয়ে দিলেন। ছেলেও মারা গেল। দীর্ঘদিন রোগে ভুগে। কিন্তু ছেলের সঙ্গে বউমার সম্পর্ক কেমন ছিল? জানতেন না? নাকি জানতেন? জানতেন না ছেলে অসুস্থ?

যে মেয়েটা বিয়ে হয়ে এল তার একটা অতীত ছিল। মেয়েটা যার সঙ্গে ঘর বাঁধতে চেয়েছিল সে আচমকা ধূমকেতুর মত উদয় হল, যখন সে মেয়েটা একটা অসুখী দাম্পত্য জীবনে, মরণাপন্ন স্বামীকে নিয়ে লড়ছে। সুখ গ্রহণের মত এলো জীবনে। বাচ্চা এলো পেটে। ভুল ভাঙল শাশুড়ির, এ বাচ্চা তার নিজের ছেলের নয়।

গল্পটা সাধারণ। কিন্তু অভিনয় আর উপস্থাপনার জন্য অসামান্য হয়ে উঠল। কেরালার সেই গ্রাম বৃষ্টির জলে বন্যায় অচলাবস্থায়। ঘরে জল ঢুকছে। ছেলের মৃতদেহ কবর দেওয়া যাচ্ছে না। জলে জল চারদিক। শাশুড়ির একাকীত্ব, অসহায়ত্ব। মেয়েটার সংকটাপন্ন অবস্থা। ঠিক হল সে চলে যাবে প্রেমিকের কাছে। যে প্রেমিক এখনো অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল। পায়ের তলার মাটি শক্ত নেই। সে দেখল এই সুযোগ। যদি মেয়েটা তার মৃত স্বামীর জমি পায়? জল যেন এক চরিত্র। বন্যা থইথই অচলাবস্থা যেন এক প্রেক্ষাপট।

জমি চাইতে মেয়েটার আত্মসম্মানে লাগে। সে চাইতে পারে না। শাশুড়ি দিলেও সে নিতে পারে না। কী করে নেবে? কোন অধিকারে নেবে?

“এটুকু পারলে না আমার জন্য….তুমি অন্য পুরুষের সঙ্গে শুয়েছ….তাও তোমায় মেনে নিয়েছি আমি…..তুমি এটুকু পারবে না?”..... প্রাক্তন প্রেমিক বলল।

প্রশ্ন আত্মসম্মানের। প্রশ্ন স্বাধিকারের। প্রশ্ন স্বাভিমানের।

বর্ষা থইথই চারদিক। একটা নৌকায় বসে দুই মহিলা। ক্যামেরা পাখির মত অনেক ঊর্ধ্বে। তাদের চারদিকে জল আর জল। একে অন্যের কাঁধে মাথা রেখে। একে অন্যের হাতে হাত রেখে।

সিনেমাটা মুগ্ধ করল আমায়। সমাজের অনেক অনেক দিক বড় সুন্দরভাবে, সুক্ষ্মভাবে তুলে ধরল। ভারতের সমাজ, ভারতের ইতিহাস, ভারতের ধর্ম-সংস্কৃতির জটিলতায় ভারতীয় মানুষের জীবন ভারতের মতই। এর জটিলতাকে দীর্ঘদিন ধরে ভারতের সাহিত্য, সিনেমা ধরতে চেষ্টা করেছে। বর্তমানে মারাঠা আর মালায়ালম ভাষায় অসামান্য কিছু কাজ হচ্ছে। এ সিনেমাটা তার মধ্যে অবশ্যই একটা।

আমাজন প্রাইমে আছে। আমার ভালো লেগেছে। নিজের দেশে ভালো কাজ করতে গেলে নিজের দেশের সংস্কৃতি, ঐতিহ্যের উপর একটা স্বাভাবিক শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, আন্তরিকতা থাকা দরকার। মন্দভালো মিশিয়ে সবটুকু গ্রহণ করার উদারতা থাকা দরকার। নইলে স্বজাতির অসঙ্গত তুলনামূলক নিন্দামন্দ আর গালাগাল আর নতুন কী? সে তো শতাব্দী প্রাচীন অভ্যাস। বুদ্ধির সে একেপেশে সঙ্কীর্ণতা ছাপিয়ে কখনও কখনও কিছু অসামান্য কাজ চোখে পড়ে। যা নকল না। অনুকরণ না। যে কাজে মাটির গন্ধ লেগে থাকে। দরদ থাকে। অন্তর্দৃষ্টি থাকে। আর তাই একটা সার্বজনীন সত্য জেগে থাকে।

সিনেমাটার মূলে আছে এক আত্মসম্মানবোধের গল্প। যে কোনো বড় সৃষ্টি, মহৎ সৃষ্টি, এই আত্মসম্মানবোধটাতেই শুদ্ধ করে তার রসগ্রাহীকে। এ সিনেমাটাও করল।