সৌরভ ভট্টাচার্য
12 June 2019
উন্মত্ত জনতা ও জনসাধারণের মধ্যে একটা পার্থক্য আছে। ইংরাজিতে প্রথমটাকে বলে Mob. যা উন্মাদনার নামান্তর। অসভ্য, বর্বরোচিত তাৎক্ষণিক তুঙ্গাবস্থান।
বাকিটা স্বাভাবিক শান্ত জনস্রোত। যাদের নিয়েই দৈনন্দিন জীবন। Mob এর দাপট আর আজকের চিকিৎসাহীনতার দাপট দুই-ই দুর্ভাগ্যজনক কার কাছে? এই জনসাধারণের কাছে। যারাই প্রতিদিন, নিত্য।
Mob এর প্রতিষেধক নিরীহ জনসাধারণের হাতে নাই। আছে প্রশাসনের হাতে। সে দাবীও অবশ্যই ন্যায্য কারণেই অভিমানের আকার নিয়েছে, যেহেতু সেদিক থেকে কোনোরকম কড়া প্রতিক্রিয়া এখনও অবধি এল না।
কিন্তু কাল থেকে এমন কিছু পোস্ট চোখে পড়ছে, যার সাথে একটা 'হুমকি' মতন সুর কানে বড্ড লাগছে। খারাপ লাগছে। আমার স্বাস্থ্য আর রোগ যেমন দুটো ভিন্নাবস্থা। যেমন একটা রোগগ্রস্থ শরীরের সাথে যেরূপ ব্যবহার চলে একজন সুস্থ মানুষের সাথে সেরূপ ব্যবহার চিকিৎসাশাস্ত্রে লেখে না, তেমনই Mob আর জনসাধারণকে একই গোত্রে ফেললে সেটা খুব অর্বাচীনতা মনে হয়। জনসাধারণের এক অতি ক্ষুদ্র অংশই Mob এ পরিণত হয়, বাকিটা শান্ত স্থির ধৈর্যযুক্তই থাকে। আর থাকে বলেই এ রাজ্যের অলিতে-গলিতে, মোড়ে মোড়ে ওষুধের দোকানে এত নিশ্চিন্তে নির্ভীকতার সাথে চিকিৎসকেরা বসেন, চিকিৎসা করেন। আমি কোনো ওষুধের দোকানের সামনে বা ব্যক্তিগত চেম্বারের বাইরে বডিগার্ডসহ চিকিৎসক দেখিনি। কারণ সাধারণ জনস্রোত mob নয়। আরেকটা কথা, খুব খারাপ ভাষায় কাল কয়েকজন চিকিৎসককে বলতে শুনলাম যে "আমরা না থাকলে ওরা যাবে কোথায়?"। খারাপ লাগল। কারণ চিকিৎসকের জীবিকা তথা আনুষাঙ্গিক যা কিছু সবই তো মানুষের অসুস্থতার উপর নির্ভর করেই। তাই রুগী না গেলে সে হয়ত বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে, কিন্তু চিকিৎসকও তো অনাহারে মারা যাবেন বা খুব নিম্নমানের জীবনযাত্রায় এসে ঠেকবেন রুগী না এলে। তাই হুমকি নয়। আমাদের প্রত্যেকের প্রত্যেককে দরকার। সবাই অপরিহার্য যিনি যে কাজই করুন না কেন। শুধু আমার একটা অনুরোধ আমরা যেন সুনামিকে সমুদ্রের স্বাভাবিক রূপ না দেখি।